নোয়াখালী ১ ও ২ আসনের সীমানা পরিবর্তন, প্রতিবাদে ক্ষোভ

নোয়াখালীর সোনাইমুড়ী উপজেলার বজরা ইউনিয়নকে পূর্বের ন্যায় নোয়াখালী-১ আসনে রাখার দাবিতে মানববন্ধন। সম্প্রতি তোলা
ছবি: প্রথম আলো

ক্ষমতাসীন দলের দুজন সংসদ সদস্যের আগ্রহেই পরিবর্তন করা হয়েছে নোয়াখালী-১ ও ২ আসনের সীমানা। এ নিয়ে তাঁরা দুজন দলীয় ফোরামেও বিষয়টি নিয়ে কোনো ধরনের আলোচনা করেননি। বিষয়টি জানাজানি হওয়ার পর এলাকায় বিক্ষোভ হলেও তাতে লাভ হয়নি।

স্থানীয় বিএনপির অভিযোগ, নোয়াখালী-১ আসনে বিএনপির ভোট কমানোর হীন উদ্দেশ্যেই ওই কাজ করা হয়েছে। কারণ, কেটে নেওয়া সোনাইমুড়ীর বজরা ইউনিয়নে বিএনপির ভোট বেশি। এ নিয়ে বজরা ইউনিয়নের বাসিন্দাদের মধ্যে ক্ষোভ ও অসন্তোষ বিরাজ করছে।

গতকাল শনিবার প্রকাশিত নির্বাচন কমিশনের প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, সোনাইমুড়ীর বজরা ইউনিয়নকে নোয়াখালী-১ আসন থেকে কেটে নোয়াখালী-২ আসনের সঙ্গে যুক্ত করা হয়েছে। সোনাইমুড়ীর বারগাঁও, নাটেশ্বর ও অম্বনগর আগে থেকেই নোয়াখালী-২ আসনের সঙ্গে ছিল। পরিবর্তনের পর বজরা, বারগাঁও, নাটেশ্বর ও অম্বনগর ইউনিয়ন ছাড়া সোনাইমুড়ীর বাকি অংশ ও চাটখিল উপজেলা নিয়ে নোয়াখালী-১ আসন। সেনবাগ উপজেলা ও সোনাইমুড়ীর বজরা, বারগাঁও, নাটেশ্বর ও অম্বনগর ইউনিয়ন নিয়ে নোয়াখালী-২ আসন।

নোয়াখালী-১ আসনের বিএনপি দলীয় সাবেক সংসদ সদস্য ও কেন্দ্রীয় বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব এ এম এম মাহবুব উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, বজরা থেকে সেনবাগের দূরত্ব অনেক বেশি। তারা (নির্বাচন কমিশন) বজরাকে পার্শ্ববর্তী বেগমগঞ্জের সঙ্গে দিতে পারত। কিন্তু তা না করে নোয়াখালী-১ আসনের সংসদ সদস্য এইচ এম ইব্রাহিম ও নোয়াখালী-২ আসনের সংসদ সদস্য মোরশেদ আলমের চাহিদাপত্রের (ডিও লেটার) ভিত্তিতে আসন দুটির সীমানা পরিবর্তন করা হয়েছে। এ ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে তদবির করা হয়েছে।

মাহবুব উদ্দিন অভিযোগ করে বলেন, ‘বজরা ইউনিয়ন বিএনপি–অধ্যুষিত। এ কারণে নোয়াখালী-১ আসনের সংসদ সদস্য বিএনপির ভোট কমানোর হীন উদ্দেশ্যে নির্বাচন কমিশনে চিঠি দিয়েছেন। আর নির্বাচন কমিশন তো সরকারের আজ্ঞাবহ, তারা স্থানীয় জনমত উপেক্ষা করে আসনটির সীমানা পরিবর্তন করেছে। আমরা এ সিদ্ধান্তের তীব্র নিন্দা জানাই।’

সোনাইমুড়ী পৌর বিএনপির সভাপতি মোতাহের হোসেন বলেন, যেহেতু ২০০৮ সালের নির্বাচনসহ পরবর্তী নির্বাচনগুলোতে বজরা ইউনিয়ন নোয়াখালী-১ আসনের সঙ্গে ছিল। বজরার কোনো লোক কখনো কাউকে বলেননি যে তাঁরা নোয়াখালী-১ আসন থেকে নোয়াখালী-২ আসনে যেতে চান। এটা শুধু স্থানীয় সংসদ সদস্য ইব্রাহিমের একক আগ্রহে করা হয়েছে। এলাকায় সংসদ সদস্যের ওই সুপারিশের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ কর্মসূচি করা হয়েছে। এ ছাড়া এলাকা থেকে গণস্বাক্ষর–সংবলিত স্মারকলিপি নির্বাচন কমিশনে দেওয়া হয়েছে। কমিশন তা গ্রাহ্য করেনি।

সীমানা পরিবর্তনের সুপারিশ নিয়ে সোনাইমুড়ী আওয়ামী লীগের নেতাদের কোনো মতামত নেওয়া হয়নি বলে জানিয়েছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মমিনুল ইসলাম। তিনি বলেন, নোয়াখালী-১ ও ২ আসনের দুই সংসদ সদস্যের সুপারিশের ভিত্তিতে আসন দুটির সীমানা পরিবর্তন করা হয়েছে। এটা সরকারি সিদ্ধান্ত। কারণ, ২০০৮ সালে সোনাইমুড়ীকে কেটে দুই ভাগ করে একাংশ নোয়াখালী-১ আসনে এবং অপর অংশ নোয়াখালী-২ আসনের সঙ্গে দেওয়া হয়েছে।

জনমত উপেক্ষা করে নোয়াখালী-১ আসনের সীমানা পরিবর্তনের সুপারিশ করার বিষয়ে সংসদ সদস্য ইব্রাহিম বলেন, ১৬ ইউনিয়ন ও দুটি পৌরসভা নিয়ে নোয়াখালী-১ আসন। এখানে ভোটার চার লাখ। ঠিক তাঁর পাশের আসনের ১৩টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভার ভোটারসংখ্যা ২ লাখ ৮০ হাজার। এখানে ভোটারের বিবেচনায় সীমানা নির্ধারণ করা হয়। নির্বাচন কমিশন আসন বিন্যাসের ক্ষেত্রে কারও সুপারিশ আছে কি না, তা জানতে চেয়েছে, তিনি সে অনুযায়ী বজরা ইউনিয়নকে নোয়াখালী-২ আসনে দেওয়ার প্রস্তাব করেছেন। আবার নোয়াখালী-২ আসনের সংসদ সদস্যও ইউনিয়নটি তাঁর আসনের সঙ্গে যুক্ত হলে কোনো সমস্যা নেই মর্মে নির্বাচন কমিশনে চিঠি দিয়েছেন। এখানে বিএনপি যে অভিযোগ করছে, তার ভিত্তি নেই। এ ছাড়া বিষয়টি দলীয় ফোরামে আলোচনারও কোনো বিষয় নয়।

নোয়াখালী-২ আসনের সংসদ সদস্য মোরশেদ আলম বলেন, ‘আমি এ বিষয়ে কোনো তৎপরতা চালাইনি। ইব্রাহিম সাহেব (সংসদ সদস্য এইচ এম ইব্রাহিম) একদিন আমাকে বজরাকে নোয়াখালী-২ আসনের সঙ্গে দেওয়ার প্রস্তাব করেন। আমি তাঁকে বলেছি, দিলেও আমার কোনো আপত্তি নেই। না দিলেও আমার কোনো আপত্তি নেই। ইব্রাহিম সাহেব খুব আগ্রহী। কারণ, উনি এখানে (বজরা) ভোট কম পান। আর আমার শ্বশুরবাড়ি সেখানে (বজরা)। আমি ছোটবেলা থেকে ওই এলাকায় ছিলাম। আমি মনোনয়ন পেলে সেখানে ভালো ভোট পাব।’

বজরা ইউনিয়নের অন্তত ১৫ জন বাসিন্দার সঙ্গে আলাপকালে তাঁরা প্রত্যেকেই সীমানা পরিবর্তনে তাঁদের ক্ষোভের কথা জানান। তাঁরা বলেন, সংসদ সদস্য ইব্রাহিমের সুপারিশের বিষয়টি জানার পর তাঁরা এ নিয়ে এলাকায় বিক্ষোভ মিছিল, মানববন্ধন করেছিলেন। তখন সংসদ সদস্যের প্রতিনিধি হিসেবে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাবুল কর্মসূচিস্থলে এসে বলেছিলেন, বিষয়টি সামান্য ভুল–বোঝাবুঝি। সীমানা পরিবর্তিত হবে না। বজরা নোয়াখালী-১ আসনের সঙ্গেই থাকবে। এখন প্রকাশ্যে কোনো প্রতিক্রিয়া দেখাতে গেলেও সমস্যা। শুরু হবে নানা হয়রানি।