‘পৃথিবীর দুই-তৃতীয়াংশ আত্মহননকারী মানুষ মনোরোগবিদের কাছে যায় না’

রাজশাহীতে আত্মহত্যাবিরোধী সিনেমা ‘জীবন পাখি’ দেখতে আসা দর্শকদের ভিড়। শনিবার দুপুরে জেলা শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে
ছবি: প্রথম আলো

দুপুরের শো শেষ হওয়ার পর সিঁড়ির একপাশ দিয়ে দল বেঁধে নামছিলেন দর্শকেরা। অপর পাশ দিয়ে পরবর্তী শোতে ঢোকার জন্য ভিড় করে এগিয়ে যাচ্ছিল আরেক দল। কেউ কেউ আবার সিনেমার পোস্টারের সামনে দাঁড়িয়ে মুঠোফোনে সেলফি তুলছিলেন।

এভাবে বিশ্ব আত্মহত্যা প্রতিরোধ দিবস উপলক্ষে শনিবার দুপুরে রাজশাহী জেলা শিল্পকলা একাডেমি যেন হয়ে উঠেছিল সিনেমা হল। এদিন রাজশাহীর দুটি ভেন্যুতে আত্মহত্যাবিরোধী সিনেমা ‘জীবন পাখি’ প্রদর্শিত হয়েছে। জেলা শিল্পকলা একাডেমি ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিন্স কমপ্লেক্সে সারা দিনে সিনেমাটির আটটি (বেলা ১১টা, আড়াইটা, বিকেল ৪টায় ও সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা) প্রদর্শনী হয়েছে।

জেলা শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে সিনেমাটি দেখার পর রাজশাহী সরকারি মহিলা কলেজের শিক্ষার্থী অংকনা রহমান বলেন, এ সিনেমায় কয়েকটি বিষয়ে উঠে এসেছে। একটি হচ্ছে, আত্মহত্যা কোনো সমাধান নয়। পরিবারের সঙ্গে কমিউনিকেশন গ্যাপ যেন না হয়, এটা খেয়াল রাখতে হবে। তাহলে আত্মহত্যার মতো দুর্ঘটনা কমে আসবে।
সপরিবার সিনেমাটি দেখা উচিত বলে মনে করেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের শিক্ষক আরেফিন সৈকত। তিনি বলেন, তাহলে পরিবারের সদস্যদের মধ্যে শেয়ারিং বাড়বে এবং অনাকাঙ্ক্ষিত মৃত্যুর ঘটনা কমে আসবে।

গুণবতী ফিল্মসের ব্যানারে তরুণ নির্মাতা আসাদ সরকার নির্মিত চলচ্চিত্রটি এখনো সিনেমা হলে মুক্তি দেওয়া হয়নি। এর আগেই আত্মহত্যা প্রতিরোধ দিবস উপলক্ষে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি সারা দেশে তাঁদের নিজস্ব মিলনায়তনে স্বল্প দর্শনীর বিনিময়ে সিনেমাটি প্রদর্শনের ব্যবস্থা করেছে।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিন্স কমপ্লেক্সে প্রদর্শনীর শুরুতে কথাসাহিত্যিক ও মনোরোগ চিকিৎসক মামুন হুসাইন বলেন, পৃথিবীতে প্রতি ৪০ সেকেন্ডে একজন করে মানুষ হারিয়ে যাচ্ছে। আজ যখন এখানে বক্তৃতা হচ্ছে, অনেকগুলো ৪০ সেকেন্ড পেরিয়ে গেছে। যদি এক ঘণ্টা, দেড় ঘণ্টার ছবি হয়, তাহলে এই সময়ের মধ্যে পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে এভাবে মানুষ হারাতে থাকবে। আসলে আত্মহত্যা ঠেকাতে পারে এই সভার মানুষেরা। পৃথিবীর দুই-তৃতীয়াংশ আত্মহনকারী মানুষ মনোরোগবিদের কাছে যায় না। কাজেই ওই যে বন্ধু, কাছের মানুষ, তাদের একটু হাত ধরা, স্পর্শের দরকার আছে। এ রকম একটি স্পর্শের জায়গা সিনেমা। এটা মানুষকে জাগায়, আশাবাদ তৈরি করে।

জীবন একটি আশীর্বাদ এবং এর পরিচর্যা দরকার বলে মনে করেন এই চিকিৎসক। তিনি বলেন, মানুষকে বাঁচানোর দায় এই হলে যাঁরা আছেন, তাঁদের সবার। প্রত্যেকটা মানুষের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দায় হচ্ছে তার বন্ধু, কাছের প্রিয় মানুষের দিকে একটু কান পেতে থাকা, দরদ দিয়ে তার হাতটি ধরা।