ভোটারদের হুমকি-ধমকি দিলে শাস্তির আওতায় আনা হবে

নওগাঁ জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে প্রার্থীদের সঙ্গে মতবিনিময় শেষে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন নির্বাচন কমিশনার রাশেদা সুলতানাছবি: প্রথম আলো

নির্বাচন কমিশনার (ইসি) রাশেদা সুলতানা বলেছেন, ভোটারদের ভোট দিতে বাধা দিলে কিংবা হুমকি-ধমকি দিলে দায়ী ব্যক্তিকে শাস্তির আওতায় আনা হবে। সবাই মিলে সহযোগিতা করলে ভোটকেন্দ্রে ভোটার উপস্থিতি বাড়বে এবং নির্বাচনের সুষ্ঠু পরিবেশের ক্ষেত্র তৈরি হয়ে যাবে। আজ রোববার বিকেলে নওগাঁ জেলা প্রশাসকের সম্মেলনকক্ষে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী, প্রিসাইডিং কর্মকর্তা এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সদস্যদের সঙ্গে মতবিনিময় শেষে সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন তিনি।

প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের অনুসারী কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে ঘটে যাওয়া বিভিন্ন সংঘর্ষ ও আচরণবিধি ভঙ্গের বিষয়ে ইসি রাশেদা সুলতানা বলেন, ‘ভোটের পরিবেশ সুষ্ঠু রাখতে আমরা সচেষ্ট। আমাদের কাছে অভিযোগ আসুক না আসুক, নির্বাচনী অনুসন্ধান কমিটি ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটরা বিভিন্ন সংসদীয় এলাকা ঘুরে ঘুরে ব্যবস্থা নিচ্ছেন। ভবিষ্যতেও ভোটের পরিবেশ ঠিক রাখতে কী কী ব্যবস্থা নেওয়া হবে, সে ব্যাপারে প্রস্তুতি চলছে। সেগুলো আপনারা স্তরে স্তরে দেখতে পারবেন।’

ভোটকেন্দ্রে ভোটারদের উপস্থিতি বাড়াতে নির্বাচন কমিশন কী ব্যবস্থা নিচ্ছে, জানতে চাইলে ইসি রাশেদা সুলতানা বলেন, ‘আগে ভোটারদের বাধা দেওয়া হলে কিংবা হুমকি দেওয়া হলে অন্যায়কারীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার সুযোগ ছিল না। কমিশন নতুন আইন করেছে। আইনে হুমকিদাতাকে অপরাধী সাব্যস্ত করে শাস্তি দেওয়ার বিধান আছে। ভোটারদের বলব, নির্ভয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে গিয়ে অভিযোগ করতে।’ এ সময় কোনো সংবাদকর্মীকে যদি বাধা দেওয়া হয় বা হুমকি-ধমকি দেওয়া হয়, তাহলে দায়ী ব্যক্তিকে আইন অনুযায়ী শাস্তির আওতায় আনা হবে। সাংবাদিকেরা নির্ভয়ে পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে পারেন, এ রকম চিন্তা করেই নীতিমালা তৈরি হয়েছে বলে উল্লেখ করেন নির্বাচন কমিশনার।

আরেক প্রশ্নের জবাবে ইসি রাশেদা সুলতানা বলেন, ‘সংঘাত-সংঘর্ষের ঘটনার পরও সুষ্ঠু নির্বাচনের ব্যাপারে আমরা সব সময় আশাবাদী। কেননা আমাদের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সাংঘাতিকভাবে তৎপর আছে। আমরা কখনোই এইগুলোকে বরদাশত করব না। সবাই মিলে সহযোগিতা করলে ভোটকেন্দ্রে ভোটার উপস্থিতি বাড়বে এবং নির্বাচনের সুষ্ঠু পরিবেশের ক্ষেত্র তৈরি হবে।’

ইসি রাশেদা সুলতানার সঙ্গে মতবিনিময় সভায় অংশ নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীরা প্রতিপক্ষ প্রার্থীদের বিরুদ্ধে আচরণবিধি লঙ্ঘন, কর্মী-সমর্থকদের হুমকি-ধমকি দেওয়াসহ বিভিন্ন অভিযোগ তুলে ধরেন।

মতবিনিময় সভায় অংশ নেওয়া নওগাঁ-১ (নিয়ামতপুর, পোরশা ও সাপাহার) আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী খালেকুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, ‘নৌকার প্রার্থীর অনুসারী নেতা-কর্মীরা প্রতিনিয়ত আমার কর্মী-সমর্থকদের হুমকি-ধমকি দিয়ে যাচ্ছে। বিভিন্ন জায়গায় আমার কর্মী-সমর্থকেরা প্রতিপক্ষের হামলার শিকার হয়েছে। আমার নির্বাচনী ক্যাম্প ভাঙচুর করা হয়েছে। এসব ব্যাপারে আমি নির্বাচন কমিশনের শক্ত পদক্ষেপ দাবি করেছি।’

নওগাঁ-৪ (মান্দা) আসনে প্রতিদ্বন্দ্বী স্বতন্ত্র প্রার্থী এস এম ব্রহানী সুলতান মামুদ বলেন, ‘আমার প্রতিপক্ষ নৌকার প্রার্থীর লোকজন মোটরসাইকেল শোডাউন করে নির্বাচনী এলাকায় ঘুরে ঘুরে সাধারণ ভোটারদের হুমকি-ধমকি দিয়ে যাচ্ছে। এমনকি আমার ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান, নির্বাচনী ক্যাম্পে হামলা করা হয়েছে এবং কর্মীদের মারধর করা হয়েছে। এ ব্যাপারে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে বলেছি।’

নওগাঁর ছয়টি সংসদীয় আসনের রিটার্নিং কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসক মো. গোলাম মওলার সভাপতিত্বে মতবিনিময় সভায় রাজশাহী বিভাগীয় কমিশনার দেওয়ান মুহাম্মদ হুমায়ুন কবীর, পুলিশের রাজশাহী অঞ্চলের উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি) আনিসুর রহমান, রাজশাহীর আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা দেলোয়ার হোসেন, নওগাঁর পুলিশ সুপার মুহাম্মদ রাশিদুল হক প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।