চার হাজার শ্রমিকের মানবেতর জীবন

  • তিন বছর ধরে তালা ঝুলছে ওই পাটকলগুলোর ফটকে।

  • ২০১৩ সালের মজুরি কমিশন অনুয়ায়ী, আলহাজ পাটকল কর্তৃপক্ষের কাছে শ্রমিকেরা প্রায় দেড় কোটি টাকা পান।

শ্রমিকদের বকেয়া বেতন-ভাতা না দিয়ে জামালপুরের সরিষাবাড়ী উপজেলার তিনটি পাটকল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। তিন বছর ধরে তালা ঝুলছে ওই পাটকলগুলোর ফটকে। ওই পাটকলগুলোর চার হাজার শ্রমিক পরিবার-পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছেন।

পাটকলগুলোর কয়েকজন শ্রমিকের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, পৌরসভার রেলস্টেশন এলাকায় ১৯৬৭ সালে আলহাজ পাটকল স্থাপিত হয়। এ পাটকলে প্রায় তিন হাজার শ্রমিক রয়েছেন। পাটকল কর্তৃপক্ষ ২০১৮ সালের ২১ জুলাই শ্রমিকদের বেতন-ভাতা না দিয়ে পাটকলের প্রধান ফটকে তালা ঝুলিয়ে বন্ধ করে দেয়। এ ছাড়া মিমকো পাটকল ২০১৯ সালে ও পপুলার পাটকল লিমিটেড ২০২০ সালে বন্ধ করে দেওয়া হয়। এতে এই দুই পাটকলের ৫০০ করে ১ হাজার শ্রমিক বিপদে আছেন।

২০১৩ সালের মজুরি কমিশন অনুয়ায়ী, আলহাজ পাটকল কর্তৃপক্ষের কাছে শ্রমিকেরা প্রায় দেড় কোটি টাকা পান। এ ছাড়া পাটকলের কাছে পাট ব্যবসায়ীদের প্রায় ১৩ কোটি টাকা বকেয়া রয়েছে। মিমকো পাটকলের কাছে শ্রমিক ও পাট ব্যবসায়ীদের প্রায় আট কোটি টাকা বকেয়া রয়েছে। পপুলার পাটকল লিমিটেডের কাছে শ্রমিক ও পাট ব্যবসায়ীদের প্রায় এক কোটি টাকা বকেয়া রয়েছে।

তিন বছর ধরে তালা ঝুলছে ওই পাটকলগুলোর ফটকে। পাটকল খুলে দেওয়ার দাবিতে শ্রমিকেরা বিভিন্ন সময় আন্দোলন করলেও কাজ হয়নি।

এদিকে ২০২১ সালে এআরএ পাটকল লিমিটেড বিক্রি করে দেওয়া হয়। পাটকল খুলে দেওয়া ও বকেয়া বেতন-ভাতার দাবিতে
শ্রমিকেরা ফটকের সামনে এবং পাটকল এলাকায় বিভিন্ন সময় সড়ক অবরোধ ও আন্দোলন করলেও কোনো কাজ হয়নি।

আলহাজ পাটকলের শ্রমিক মো. আবদুল জলিল বলেন, ‘আমাদের বকেয়া বেতন-ভাতা দেওয়া ও পাটকল খুলে দেওয়ার দাবিতে তিন বছর ধরে আন্দোলন-সংগ্রাম করলেও, তা খুলে দেওয়া হয়নি। মিলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক হারুন অর রশিদ বেতন-ভাতা দেওয়ার আশ্বাস দিলেও দেওয়া হয়নি। পোলাপান নিয়ে খুব কষ্টে আছি।’

পপুলার পাটকলের শ্রমিক আবদুল কুদ্দুস বলেন, ‘বড় কষ্টে আছি। মিল বন্ধ কইরে দেওয়ায় পোলাপানদের পড়াশোনা বন্ধ হইয়ে গেছে।’ আলহাজ পাটকলের পাট ব্যবসায়ী আবদুল বারী বলেন, ‘পাটকলের কাছে আমার এক কোটি টাকা বকেয়া রয়েছে। টাকা না দিয়ে মিল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।’

মিমকো পাটকলের পাট ব্যবসায়ী হাসিবুল হোসেন বলেন, ‘মিলের কাছে আমার প্রায় এক কোটি টাকা পাওনা রয়েছে। আমি আদালতে টাকার জন্য মামলা করেছি।’

উপজেলা শ্রমিক লীগের সাধারণ সম্পাদক ও আলহাজ পাটকলের শ্রমিক-কর্মচারী ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক জাহিদুর রহমান বলেন, শ্রমিকেরা বেতন-ভাতার দাবিতে আন্দোলন করছেন।

পপুলার পাটকল শ্রমিক-কর্মচারী ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক নজরুল ইসলাম বলেন, মালিক পক্ষের সঙ্গে কথা হয়েছে। শিগগিরই পাটকল চালু করা হবে। উপজেলা শ্রমিক লীগের সভাপতি মোয়াজ্জেম হোসেন বলেন, দু-এক মাসের মধ্যে পাটকল তিনটি চালু না করা হলে হরতালসহ আন্দোলনের ডাক দেওয়া হবে।

আলহাজ পাটকলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) হারুন অর রশিদের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, বিশ্ববাজারে পাটপণ্যের মূল্য কমে যাওয়ায় পাটকল বন্ধ ছাড়া উপায় ছিল না। শিগগিরই পাটকল চালু করা হবে।

মিমকো পাটকল লিমিটেডের এমডি ইউসুফ মোল্লা বলেন, পাটকল চালুর জন্য ব্যাংকে ঋণ চাওয়া হয়েছে। টাকা পেলেই মিল চালু করে শ্রমিক ও পাট ব্যবসায়ীদের বকেয়া পরিশোধ করা হবে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা উপমা ফারিসা বলেন, পাটকলমালিকদের সঙ্গে কথা বলে পাটকল চালুর ব্যবস্থা করা হবে।