কুড়িগ্রামে ধীরে নামছে ব্রহ্মপুত্রের পানি, গবাদিপশুর খাদ্যসংকট
কুড়িগ্রামে ভারী বৃষ্টিপাত কমে বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়েছে। জেলার প্রধান ১৬টি নদ-নদীর মধ্যে ধরলা, তিস্তা, সংকোশ, সোনাভরী নদী ও দুধকুমার নদের পানি বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। আর ব্রহ্মপুত্র নদের পানি ধীরগতিতে কমলেও এখনো বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
এদিকে বেশ কিছুদিন ধরে ব্রহ্মপুত্র নদের পাড় প্লাবিত হয়ে আছে। এতে গবাদিপশুর খাদ্যসংকট দেখা দিয়েছে।
আজ শুক্রবার সকাল ৯টায় কুড়িগ্রামের পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) জানায়, ধরলা নদীর পানি কুড়িগ্রাম সদর বিপৎসীমার পয়েন্টে ৯ সেন্টিমিটার, তালুক শিমুলবাড়ী পয়েন্টে ৫৮ সেন্টিমিটার, দুধকুমার নদের পানি পাটেশ্বরী পয়েন্টে ৭ সেন্টিমিটার, তিস্তা নদীর পানি কাউনিয়া পয়েন্টে ৫৮ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হয়। তবে ব্রহ্মপুত্র নদের পানি নুনখাওয়া পয়েন্টে ২৫ সেন্টিমিটার, চিলমারী পয়েন্টে ৩৯ সেন্টিমিটার এবং হাতিয়া পয়েন্টে ১৯ সেন্টিমিটার বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়।
১৫ দিন ধরে নিমাঞ্চল প্লাবিত থাকায় গোচারণভূমি তলিয়ে গিয়ে ব্রহ্মপুত্র অববাহিকার ২০টি ইউনিয়নের মানুষের পশুখাদ্যের সংকট দেখা দিয়েছে। দীর্ঘদিন চারণভূমি পানির নিচে থাকায় খাদ্যের অভাবে অনেক খামারে গরু, ছাগল ও গাড়ল মরতে শুরু করেছে। এতে খামারিরা লোকসানের মুখে পড়েছেন।
চিলমারী উপজেলার শাখাতাহির চরের গাড়ল খামারি রফিকুল ইসলাম বলেন, ভারী বৃষ্টি ও উজানের ঢলে ব্রহ্মপুত্র নদের পানি বেড়ে প্রায় ১৫ দিন চারণভূমি ডুবে আছে। শুকনো খড় কেটে ভূষির সঙ্গে গাড়লকে খাওয়ানো হচ্ছে। তবে তাজা খাবারের সংকটে গাড়ল দুর্বল হয়ে পড়েছে। প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর থেকে কেউ খোঁজ নিতে আসেননি। উলিপুর উপজেলার সাহেবের আলগা ইউনিয়নের গাড়ল খামারি মাইদুল ইসলাম বলেন, পর্যাপ্ত খাদ্য ও গোচারণভূমি না থাকায় তাঁর খামারের ছয়টি গাড়ল এই বন্যায় মারা গেছে।
কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার ঘোগাদহ ইউনিয়নের রসূলপুর চরের বাসিন্দা গোলাপ রহমান বলেন, ‘বন্যার পানিত ঘাস সউগ ডুবি গেইছে। কিস্তির টাকা তুলে একটা গাই (গাভি) গরু কিনছিলাম, বন্যার এক মাস আগত তার একটা বাছুর হইছে। এল্যা ঘাস বিনাকর বাছুর দুধ পায় না। এক আঁটি খড়ের দাম ১২ টাকা। মানুষ ভাত পায় না, গরুক খড় কিনে আর কয় দিন খাওয়াই।’
জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা মোনাক্কা আলী প্রথম আলোকে বলেন, কুড়িগ্রামে বন্যায় ৫০৮ একর চারণভূমি প্লাবিত হয়েছে। এতে ১৯৯ মেট্রিক টন খড় ও ১৯০ মেট্রিক টন ঘাস নষ্ট হয়েছে। বন্যায় ১১ হাজার ৩৬৭টি গরু, ৫ হাজার ৬২৪টি ছাগল, ১ হাজার ৯৮১টি ভেড়া ও অর্ধলক্ষাধিক হাঁস-মুরগি আক্রান্ত হয়েছে। প্রাণিসম্পদ দপ্তর থেকে ৭ হাজার গবাদিপশুর ও ১৩ হাজার হাঁস-মুরগির টিকা দেওয়া হয়েছে।