‘তোমরা বই পড়াকে দায়িত্ব মনে না করে আনন্দ মনে করবে’

বরিশালে বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের বইপড়া কর্মসূচির পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠানে বিজয়ী শিক্ষার্থীরা। শুক্রবার দুপুরে নগরের বান্দরোডের ব্যাপ্টিস্ট মিশন বালক বিদ্যালয় মাঠে
ছবি: সংগৃহীত

‘বই পড়লে মন ভালো থাকে, উৎফুল্ল থাকে, মানসিক প্রশান্তি পাওয়া যায়। যে বই আমাদের স্বপ্ন জোগায়, সেই বই আমাদের পড়া উচিত। তোমরা বই পড়াকে দায়িত্ব মনে না করে আনন্দ মনে করবে।’

বরিশালে গ্রামীণফোনের সহযোগিতায় বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র আয়োজিত বইপড়া কর্মসূচির পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে অবসরপ্রাপ্ত সচিব ও বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের সাবেক ট্রাস্টি খন্দকার মো. আসাদুজ্জামান বিজয়ী শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে এ কথাগুলো বলেন।

বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র প্রায় ৫০ বছর ধরে দেশব্যাপী এই বইপড়া কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছে। বছরব্যাপী এই বইপড়া কর্মসূচিতে বরিশাল নগরের ৩৬টি বিদ্যালয়ের ২ হাজার ৪১১ জন শিক্ষার্থী এবার বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে পুরস্কার পেয়েছে। আজ শুক্রবার দিনব্যাপী বর্ণাঢ্য আয়োজনের মধ্য দিয়ে নগরের ব্যাপ্টিস্ট মিশন বালক বিদ্যালয়ে বইপড়া কর্মসূচির পুরস্কার বিতরণী উৎসব হয়। সকালে জাতীয় সংগীত পরিবেশনের মধ্য দিয়ে দিনব্যাপী এই পুরস্কার বিতরণী উৎসব শুরু হয়।

অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে অবসরপ্রাপ্ত সচিব খন্দকার মো. আসাদুজ্জামান ছাড়াও ছিলেন অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (সার্বিক) মো. সোহরাব হোসেন, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের বরিশাল আঞ্চলিক উপপরিচালক মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর হোসাইন। জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মো. হারুনুর রশিদ, ব্যাপ্টিস্ট মিশন বালক উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক গ্যাব্রিয়েল গাইন, গ্রামীণফোনের বরিশাল বিভাগীয় সার্কেল হেড সানুয়ার হোসেন ও বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের পরিচালক শামীম আল মামুন।

অনুষ্ঠানে বরিশালের অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (সার্বিক) ও যুগ্ম সচিব মো. সোহরাব হোসেন শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে বলেন, ‘তোমরা একাডেমিক বইয়ের পাশাপাশি সব ধরনের বই পড়বে। আগামীর বাংলাদেশকে বিশ্বের দরবারে তুলে ধরবার জন্য বই পড়া খুবই দরকার।’

বরিশালে বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের বইপড়া কর্মসূচির পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠানে ২ হাজার ৪১১ জন সরাসরি মঞ্চ থেকে পুরস্কার গ্রহণ করে। শুক্রবার দুপুরে নগরের ব্যাপ্টিস্ট মিশন বালক বিদ্যালয়ে
ছবি: সংগৃহীত

অনুষ্ঠানে বক্তারা বরিশালের ৭৫০টি স্কুলের সব বিদ্যালয়ে এই কর্মসূচি চালুর আহ্বান জানান। তাঁরা বলেন, জ্ঞানপিপাসা বাড়াতে হবে এবং এই পিপাসা মেটানোর চেষ্টা করতে হবে। আর এই পিপাসা মেটানোর মাধ্যম হলো বই। পৃথিবীতে যা কিছু বড়, শ্রেষ্ঠ, তার সবই পাবে বইয়ের মধ্যে। নিজেদের জ্ঞানকে বৃদ্ধি করার জন্য বই পড়ার কোনো বিকল্প নেই।

গ্রামীণফোনের বরিশালের সার্কেল হেড সানুয়ার হোসেন বলেন, ‘তরুণেরাই আগামী দিনের ভবিষ্যৎ। তাদের মধ্যে যেন মানবিক ও মানসিক উৎকর্ষের বিকাশ ঘটে, এ জন্য দুই দশক ধরে এই মহতী উদ্যোগের পাশে আছে গ্রামীণফোন। বইপড়া কর্মসূচিতে আজকের বিজয়ী শিক্ষার্থীদের আমি অভিনন্দন জানাই। আমরা এই কর্মসূচির সঙ্গে নিবিড়ভাবে থাকতে পেরে এবং জাতি গঠনের এমন মহতী উদ্যোগে অংশ নিতে পেরে আনন্দিত, গর্বিত।’

এক বছরজুড়ে এই বইপড়া কর্মসূচি সফলভাবে পরিচালনায় সহায়তা করার জন্য সংশ্লিষ্ট শিক্ষার্থী, অভিভাবক, শিক্ষক, সংগঠক ও পৃষ্ঠপোষকদের ধন্যবাদ জানান বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের পরিচালক শামীম আল মামুন। তিনি বলেন, ‘সন্তানদের বই পড়ার মতো একটি ভালো অভ্যাসে যুক্ত রাখার জন্য অভিভাবকদের প্রতিও অশেষ কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি।’

আয়োজকেরা জানান, ২০২৪ শিক্ষাবর্ষে বরিশাল নগরের ৪৭টি বিদ্যালয়ের দুই হাজার ২১২ ছাত্রী ও ৭৬১ জন ছাত্রসহ মোট ২ হাজার ৯৭৩ জন শিক্ষার্থী মূল্যায়ন পর্বে কৃতিত্বের পরিচয় দিয়েছে। ৪৭টি বিদ্যালয়ের মধ্যে ৩৬টি বিদ্যালয়ের ২ হাজার ৪১১ জন সরাসরি মঞ্চ থেকে পুরস্কার গ্রহণ করে এবং ১১টি বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের পক্ষে শিক্ষক ও সংগঠকেরা পুরস্কার গ্রহণ করেন।