যশোরের কেশবপুর
ভয়াবহ জলাবদ্ধতার শঙ্কা
কেশবপুরের মানুষকে জলাবদ্ধতা থেকে রক্ষা করতে নদ-নদীগুলো খননের বিকল্প নেই।
যশোরের কেশবপুরে আসছে বর্ষা মৌসুমে জলাবদ্ধতার আশঙ্কা করা হচ্ছে। এলাকাবাসীর ধারণা, নদ-নদীগুলো দিয়ে বর্ষার পানি নিষ্কাশিত না হতে পেরে এবার কেশবপুরে ভয়াবহ জলাবদ্ধতা দেখা দেবে। জলাবদ্ধতা নিরসনের লক্ষ্যে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) কোনো আশার বাণীও শোনাতে পারেনি।
পাউবো সূত্রে জানা গেছে, কেশবপুরে শহরের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া হরিহর নদের ৫ কিলোমিটার, বুড়িভদ্রা নদীর ৭ কিলোমিটার অংশ পলিতে ভরাট হয়েছে। এ ছাড়া আপার ভদ্রা নদীর ১৮ কিলোমিটার ও হরি নদের ১৫ কিলোমিটার পলিতে ভরাট হয়েছে।
এর আগে ২০১৬-১৭ সালে এই নদ-নদীগুলো দিয়ে পানি নিষ্কাশিত না হতে পেরে ভয়াবহ জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। সে সময় কেশবপুর পৌরসভার চার ভাগের তিন ভাগ এলাকা, উপজেলার ১১টি ইউনিয়নের ১৬১ বর্গকিলোমিটার এলাকা জলাবদ্ধ হয়ে পড়ে। ৮০ হাজার মানুষ পানিবন্দী হন। বাড়িঘর ছেড়ে ২১টি আশ্রয়কেন্দ্রে ৭ হাজার মানুষ আশ্রয় নেন।
এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কেশবপুরের মানুষকে জলাবদ্ধতা থেকে রক্ষা করতে হলে নদ-নদীগুলো খননের বিকল্প নেই। নদ-নদী খনন এলাকার মানুষর প্রাণের দাবি। বর্ষা মৌসুমের আগে নদী খননের দাবি জানান তাঁরা।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, মূলত কেশবপুর শহরের পানি হরিহর নদ, বুড়িভদ্রা ও আপার ভদ্রা নদী দিয়ে নিষ্কাশিত হয়। এ তিন নদ-নদী পলিতে ভরাট হয়ে এখন প্রবাহ হারিয়ে মরা অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। অন্যদিকে কেশবপুরে পূর্বাংশ দিয়ে বয়ে যাওয়া হরি নদের ১৫ কিলোমিটার পলিতে ভরাট হয়ে গেছে। এ কারণে এখনো বাগডাঙ্গা গ্রামে মানুষের বাড়িতে পানি রয়েছে। বিল খুকশিয়া, কালীচরণপুর বিল ও বাগডাঙ্গা বিল জলাবদ্ধ হয়ে আছে। এ বিলগুলোতে আট বছর ধরে কোনো ফসল হচ্ছে না।
গত ২৯ মে কেশবপুর বালিয়াডাঙ্গা দেবালয় মন্দির থেকে বড়েঙ্গা পর্যন্ত হরিহর নদ ঘুরে দেখা গেছে, নদের এই পাঁচ কিলোমিটার অংশে এক ফুটের মতো পানি আছে। বিদ্যানন্দকাটি রাসবিহারী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের কাছ থেকে বড়েঙ্গা পর্যন্ত সাত কিলোমিটার বুড়িভদ্রা নদীতে কোনোরকমে পায়ের পাতা ছুঁই ছুঁই পানি রয়েছে। অন্যদিকে বড়েঙ্গা থেকে পশ্চিমে আপার ভদ্রা নদীর ১৮ কিলোমিটার কোনো পানি নেই। এখানে আপার ভদ্রা নদী থেকে পূর্বে হরিহর নদ এবং উত্তরে বুড়িভদ্রা নদীর সৃষ্টি হয়েছে। এটাকে তিন নদ-নদীর মোহনা বলা হয়।
এই মোহনা এলাকায় মঙ্গলকোট ইউনিয়নের বড়েঙ্গা গ্রাম। সেখানকার বাসিন্দা আবদুস সাত্তার বলেন, এখানে নদী বলতে কিছুই নেই। ঘূর্ণিঝড় রিমালের বৃষ্টির আগে তিন নদীর মোহনায় সাইকেল চালিয়ে যাওয়া যেত। তিনি বলেন, বর্ষার আগে এ তিন নদ-নদী খনন করা না হলে এ বছর বর্ষা মৌসুমে কেশবপুর শহরে পানি উঠে যাবে।
এ ব্যাপারে কেশবপুরের পানিনিষ্কাশন সংগ্রাম কমিটির আহ্বায়ক ও যশোর জেলা ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি আবু বকর সিদ্দিকী বলেন, বর্ষা মৌসুমের আগে নদ-নদী ও বিলের মধ্যের খাল খনন করতে হবে। তা না হলে কেশবপুর ভয়াবহ জলাবদ্ধতায় নিমগ্ন হবে। তিনি অভিযোগ করেন, কর্তৃপক্ষ তাঁদের দাবির বিষয়ে কোনো কর্ণপাত করছে না।
পাউবো কেশবপুর কার্যালয়ের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী সুমন শিকদার বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, নদ-নদীগুলো পলিতে ভরাট হওয়ায় এ বছর জলাবদ্ধতার আশঙ্কা রয়েছে। তবে এখনো টাকার সংস্থান না হওয়ায় নদী খননের কোনো ব্যবস্থা করা যাচ্ছে না।
পাউবো যশোরের নির্বাহী প্রকৌশলী পলাশ কুমার ব্যানার্জি বলেন, জলাবদ্ধতা নিরসনর জন্য বিক্ষিপ্তভাবে কাজ করলে তা থেকে কোনো ফলাফল আসবে না। তাই ওই অঞ্চলের (মনিরামপুর-কেশপুর) জলাবদ্ধতা নিয়ে সমন্বিত একটি গবেষণা প্রকল্প নেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।