খায়রুজ্জামানের ইশতেহার ঘোষণা, প্রতিশ্রুত কাজের অর্ধেকের বেশি মেয়রের আওতার বাইরে

রাজশাহী সিটি নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনীত মেয়র প্রার্থী এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন আজ দুপুরে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ মিলনায়তনে ইশতেহার ঘোষণা করেনছবি: শহীদুল ইসলাম

ব্যাপক কর্মসংস্থান সৃষ্টি, বেকারত্ব হ্রাস, অর্থনৈতিক-সামাজিক-মানবিক শান্তিময় সমৃদ্ধ মহানগর গড়ে তোলাসহ বেশ কিছু প্রতিশ্রুতির মধ্য দিয়ে নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা করেছেন রাজশাহী সিটিতে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন। তবে এসব প্রতিশ্রুত কাজের অর্ধেকের বেশি মেয়রের কাজের আওতার বাইরে।

আজ শনিবার দুপুরে রাজশাহী মেডিকেল কলেজের কাইছার রহমান চৌধুরী মিলনায়তনে সাংবাদিক, দলীয় নেতা-কর্মী ও সুধী সমাজের সামনে ইশতেহার ঘোষণা করেন খায়রুজ্জামান। এ সময় আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য অধ্যাপক আবদুল খালেক, রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মোহাম্মদ আলী কামাল, জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি অনিল সরকার, রাজশাহী মহানগর জাসদের সভাপতি আব্দুল্লাহ আল মাসুদসহ অনেক নেতা উপস্থিত ছিলেন।

১৮ পৃষ্ঠার ইশতেহারের অর্ধেকজুড়ে রয়েছে গত মেয়াদের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের বিবরণ। বাকি অংশে রয়েছে, ‘এবার যা করতে চাই।’ এ অংশে ১০ দফায় ১০৪টি প্রতিশ্রুতি রয়েছে। ইশতেহার ঘোষণার সময় সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে প্রার্থী খায়রুজ্জামান স্বীকার করেন, এবারের ইশতেহারের অর্ধেকের বেশি মেয়রের কাজের আওতাবহির্ভূত প্রতিশ্রুতি রয়েছে। তিনি বলেছেন, পিছিয়ে পড়া এই জনপদের মানুষের জীবনযাত্রার মানোন্নয়নের স্বার্থে মেয়রের দায়িত্বের মধ্যে পড়ে না—এমন ঘোষণাও তিনি ইশতেহারে এনেছেন। তিনি নিজ দায়িত্বে কাজগুলো করার চেষ্টা করবেন।

খায়রুজ্জামান দাবি করেন, ২০১৮ সালের নির্বাচনের সময় ইশতেহারে যে প্রতিশ্রুতি ছিল, তার ৬০ শতাংশের বেশি পূরণ করেছেন। করোনার কারণে বাকিটা পূরণ করা সম্ভব হয়নি। ওই ইশতেহারের শুরুতে শতভাগ বাসাবাড়িতে গ্যাস সংযোগ দেওয়ার প্রতিশ্রুতি ছিল। গৃহকর কমানোর ব্যাপারে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলা হয়েছিল। ঐতিহাসিক রেশম কারখানা ও রাজশাহী টেক্সটাইল মিলস পূর্ণাঙ্গ রূপে চালু, রাজশাহী জুটমিল সংস্কার ও সম্প্রসারণের কথা বলা হয়েছিল। এগুলোর কোনোটিই পূরণ হয়নি। এবারের ইশতেহারে সেগুলো আর রাখা হয়নি।

এবারের ১০ দফার মধ্যে প্রথম দফায় রয়েছে—‘দক্ষ মানবসম্পদ সৃষ্টির জন্য শিক্ষা ক্ষেত্রে উন্নয়ন’। এই দফায় রাজশাহীতে পূর্ণাঙ্গ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা, ব্রিটিশ অথবা আমেরিকান পাঠ্যক্রমের আদলে ইংরেজি মাধ্যম স্কুল একটি ললিতকলা একাডেমি, একটি আর্কাইভ, আর্ট গ্যালারি, সিটি মিউজিয়াম স্থাপনসহ সাতটি প্রতিশ্রুতি রয়েছে।

স্বাস্থ্যসেবার দফায় ১৮টি প্রতিশ্রুতির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে, রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়কে যুগোপযোগী করা, রাজশাহীর হার্ট ফাউন্ডেশনকে একটি পূর্ণাঙ্গ হৃদ্‌রোগ হাসপাতালে উন্নীত করা, পূর্ণাঙ্গ ক্যানসার হাসপাতাল, একটি পূর্ণাঙ্গ ডেন্টাল কলেজ, হৃদ্‌রোগ ও গ্যাস্ট্রোএন্টারোলজি চিকিৎসা হাসপাতাল স্থাপনের উদ্যোগ নেওয়া।

রাজশাহী মেডিকেল কলেজের কাইছার রহমান চৌধুরী মিলনায়তনে সাংবাদিক, দলীয় নেতা-কর্মী ও সুধী সমাজের সামনে ইশতেহার ঘোষণা করেন খায়রুজ্জামান লিটন
ছবি: শহীদুল ইসলাম

শিল্প, ব্যবসা–বাণিজ্য, যোগাযোগব্যবস্থা ও অবকাঠামো উন্নয়নের দফায় রয়েছে ২৯টি প্রতিশ্রুতি। এর প্রথমে রয়েছে সোনামসজিদ-রাজশাহী-বনপাড়া-হাটিকুমরুল পর্যন্ত সড়ক চার লেনে উন্নীত করা। এই সড়ক রাজশাহী সিটি করপোরেশনের বাইরের। এ ছাড়া রাজশাহী থেকে চট্টগ্রাম বন্দর পর্যন্ত ট্রেন চালু, রাজশাহী-আব্দুলপুর রেলপথ ডুয়েল গেজে উন্নীত করা, রাজশাহী-খুলনা-মোংলা-পোর্ট সংযোগ গড়ে তুলতে আরও একটি আন্তমহানগর যাত্রী ও মালবাহী ট্রেন চালুর উদ্যোগের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে। রাজশাহী থেকে গোদাগাড়ীর সুলতানগঞ্জ ঘাট হয়ে ভারতের ধূলিয়ান ও মায়া পর্যন্ত নৌবন্দর চালু করে দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য এবং নতুন যোগাযোগ স্থাপন, রাজশাহী থেকে কলকাতা ট্রেন, রাজশাহী থেকে কলকাতা বিমান এবং রাজশাহী থেকে কলকাতা সরাসরি বাস সার্ভিস চালু করা। এ ছাড়া রাজশাহী থেকে রহনপুর হয়ে পশ্চিমবঙ্গের উত্তরাঞ্চল দিয়ে নেপাল পর্যন্ত ট্রেন যোগাযোগের উদ্যোগ নেওয়া, রাজশাহী বিমানবন্দর সম্প্রসারণ, রাজশাহী বিমানবন্দর থেকে কার্গো বিমান চালুর মাধ্যমে মধ্যপ্রাচ্য ও অন্যান্য দেশে রাজশাহী অঞ্চলের কৃষিপণ্য ও শিল্পপণ্য রপ্তানির ব্যবস্থা করা, এর জন্য কনটেইনার অবকাঠামো গড়ে তোলার মতো বড় প্রতিশ্রুতিগুলো দেওয়া হয়েছে; যা মেয়রের কাজের মধ্যে পড়ে না। তবে নগরে নতুন আরও পাঁচটি ফ্লাইওভার নির্মাণ, রাজশাহী বিসিক-২–এ শিল্প–কলকারখানা স্থাপন ও দ্রুত চালু, ট্যানারি শিল্প ও লেদার ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্ক স্থাপন, আম, অন্যান্য ফলসহ উৎপাদিত কৃষিজাত পণ্য সংরক্ষণ ও বিপণনের জন্য প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা নেওয়ার পাশাপাশি আরও গুরুত্বপূর্ণ কিছু প্রতিশ্রুতি রয়েছে এই দফায়।

ক্রীড়া-সংস্কৃতি ও মননচর্চার ক্ষেত্র সম্প্রসারণ দফায় ১৪টি প্রতিশ্রুতির মধ্যে প্রথম দুটি হচ্ছে রাজশাহীতে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ভেন্যু পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন ও খেলাধুলার জন্য বিকেএসপির চলমান কাজ দ্রুত সম্পন্ন করা।

ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান ও সামাজিক উদ্যোগের দফার মধ্যে রয়েছে পাঁচটি প্রতিশ্রুতি। জলবায়ু পরিবেশ ও বিনোদন অবকাঠামো উন্নয়ন দফায় সাতটি প্রতিশ্রুতির মধ্যে রয়েছে ওয়ার্ডভিত্তিক শিশুপার্ক নির্মাণ। প্রতিবন্ধী ও অনগ্রসর শ্রেণির মানুষের উন্নয়ন প্রণোদনা দফায় রয়েছে চারটি, মুক্তিযুদ্ধ ও ঐতিহ্য সংরক্ষণ দফায় রয়েছে পাঁচটি, প্রবীণ ও শিশুদের জন্য বিশেষ প্রণোদনা দফায় পাঁচটি, সামাজিক সুরক্ষা ও নারী উন্নয়ন দফায় তিনটি প্রতিশ্রুতি।

ইশতেহারের শুরুতে আছে ব্যাপক কর্মসংস্থান, বেকারত্ব হ্রাস ও উদ্যোক্তা সৃষ্টি, রাজশাহী শহরের পাশে জেগে ওঠা পদ্মার চরে রিভার সিটি নির্মাণের ঘোষণাসহ ছয়টি দফা।

ইশতেহার ঘোষণার পর মেয়র প্রার্থী খায়রুজ্জামান বলেন, ‘বাংলাদেশ সারা বিশ্বে উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে স্বীকৃতি অর্জন করেছে। ২০৪১ সালে উন্নত সমৃদ্ধ বাংলাদেশের অগ্রযাত্রায় শামিল হয়ে রাজশাহী মহানগরকে যোগ্য অংশীদার হিসেবে গড়ে তুলতে চাই।’