মৌলভীবাজারে এক টুকরো বইয়ের দুনিয়া ‘দেশে বিদেশে’

গ্রন্থাগার উদ্বোধনের পর তাক থেকে বই নামিয়ে দেখছে শিক্ষার্থীরা। শনিবার দুপুরে মৌলভীবাজার সদর উপজেলা পরিষদ ভবনে
ছবি: প্রথম আলো

মৌলভীবাজার সদর উপজেলা পরিষদের প্রশাসনিক ভবনে ঢুকলেই চোখে পড়ে বই দিয়ে সাজানো নিরিবিলি একটি কক্ষ। শেলফে নানা বিষয়ের বই। কক্ষজুড়ে নতুন বইয়ের ঘ্রাণ। উপজেলা প্রশাসনের এ গ্রন্থাগারের নাম দেওয়া হয়েছে খ্যাতিমান কথাসাহিত্যিক সৈয়দ মুজতবা আলীর ‘দেশে বিদেশে’ বইয়ের নামে।

সৈয়দ মুজতবা আলী মৌলভীবাজারেরই সন্তান। জেলার এ কৃতী সন্তানের স্মৃতি ধরে রাখতেই এমন নামকরণ। আজ শনিবার এ গ্রন্থাগারের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা হয়েছে।

আজ বেলা সাড়ে ১১টার দিকে সদর উপজেলা পরিষদে গিয়ে দেখা যায়, অনেক শিক্ষার্থী সারিবদ্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। ১০ টাকা দিয়ে নির্দিষ্ট ফরমে নিজেদের নাম নিবন্ধন করে গ্রন্থাগারের সদস্য হচ্ছে তারা। এরপর পছন্দের বই নিয়ে যাচ্ছে বাড়িতে। সদস্য হওয়ায় তারা গ্রন্থাগারে এসে বই পড়তে ও একটি করে বই বাড়িতে নিতে পারবে। ১০ টাকায় বই নেওয়ার এই উদ্যোগের নাম দেওয়া হয়েছে ‘বইয়ের বৃষ্টি’।

গ্রন্থাগারের তাকে তাকে সাজানো রয়েছে রবীন্দ্র রচনাবলি, নজরুল রচনাসমগ্র, জীবনানন্দ দাশ রচনাসমগ্র, সৈয়দ মুজতবা আলী, তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়, শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়, আখতারুজ্জামান ইলিয়াস, শামসুর রাহমানসহ দেশি–বিদেশি গুরুত্বপূর্ণ লেখক–কবির বই।

উদ্যোগ নিয়ে গ্রন্থাগারটি বাস্তবায়ন করেছেন মৌলভীবাজার সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সাবরীনা রহমান ওরফে বাঁধন। তিনি নিজে একজন কবি ও ঔপন্যাসিক।

উপজেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, মৌলভীবাজার শহর থেকে অনেকটা দূরে উপজেলা সদরের অবস্থান। জেলায় যে কয়টি পাঠাগার রয়েছে, তা মূলত মৌলভীবাজার শহরে। চাইলেও অনেক শিক্ষার্থী ও পাঠকের গ্রন্থাগার থেকে বই পাওয়ার সুযোগ নেই। অনেকের বই পাঠে আগ্রহ কমে গেছে। সবার মধ্যে বইয়ের প্রতি আগ্রহ সৃষ্টি ও হাতের কাছে বই পৌঁছে দিতে গ্রন্থাগারটি গড়ে তোলা হয়েছে।  

গ্রন্থাগারের সদস্য হতে শিক্ষার্থীরা ১০ টাকা দিয়ে নিবন্ধন করছে
ছবি: প্রথম আলো

গ্রন্থাগার উদ্বোধন উপলক্ষে হয়েছে সংক্ষিপ্ত আলোচনা অনুষ্ঠান। ইউএনও সাবরীনা রহমানের সভাপতিত্ব ও সঞ্চালনায় এতে প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মো. কামাল হোসেন। আলোচনা করেন সাহিত্যের ছোটকাগজ ‘কোরাস’ সম্পাদক কবি মুজাহিদ আহমদ।

অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. মোতাহার বিল্লাহ চৌধুরী, সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সুব্রত কান্তি দত্ত প্রমুখ। পরে প্রধান অতিথি ফিতা কেটে গ্রন্থাগারের উদ্বোধন করেন। সব শেষে আবৃত্তি সংগঠন ‘উচ্চারণ’–এর সদস্যরা একক ও সমবেত আবৃত্তি পরিবেশন করেন।

সদর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মো. কামাল হোসেন বলেন, ‘আমরা মোবাইল ফোনের কারণে পরষ্পর থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাচ্ছি। এক জায়গায় থেকেও কেউ কারও সঙ্গে কথা বলছি না। মানবিক সম্পর্ক ছিন্ন হতে চলছে। বই এ ক্ষেত্রে প্রকৃতি, সমাজ, মানুষকে জানতে, বুঝতে সহজ একটি মাধ্যম। তাই বেশি করে বই পড়তে হবে।’

গ্রন্থাগারে বই দেখার সময় কথা হয় স্থানীয় শাহ হেলাল উচ্চবিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী বর্ণা সূত্রধর, সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থী মিহিতা দেব, রাখী সেনগুপ্তা প্রমুখের সঙ্গে। তারা বলে, বাসা ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কাছে এমন একটি গ্রন্থাগার হওয়ায় তারা উপকৃত হবে।

এ গ্রন্থাগার করতে পেরে খুশি ইউএনও সাবরীনা রহমান। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, মৌলভীবাজারের মানুষ সৈয়দ মুজতবা আলীর ‘দেশে বিদেশে’ বইয়ের নামেই গ্রন্থাগারের নামকরণ করা হয়েছে। ভালো ভালো অনেক বই সংগ্রহ করা হয়েছে। ধারাবাহিকভাবে এটিকে একটি পূর্ণাঙ্গ গ্রন্থাগার হিসেবে গড়ে তোলা হবে।