দেড় লাখ টাকা ঈদসালামি না দেওয়ায় ব্যবসায়ীকে অপহরণ, তিন ঘণ্টা পর উদ্ধার

নরসিংদীতে ব্যবসায়ীকে অপহরণের ঘটনায় গ্রেপ্তার আরিফ
ছবি: সংগৃহীত

নরসিংদীতে আমজাদ হোসেন নামের এক ব্যক্তির ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে ঢুকে দেড় লাখ টাকা ঈদসালামি চায় স্থানীয় একদল সন্ত্রাসী। টাকা না দেওয়ায় ওই ব্যবসায়ীকে অটোরিকশায় তুলে অপহরণ করে তারা। তার মুঠোফোন থেকে বিকাশে ২০ হাজার টাকা তুলে নেয়।

জাতীয় জরুরি সেবা নম্বর ৯৯৯-এর মাধ্যমে খবর পেয়ে তিন ঘণ্টার মধ্যেই অপহৃত ওই ব্যবসায়ীকে উদ্ধার করেছে পুলিশ। সেই সঙ্গে ঘটনাস্থল থেকে একজন আসামিকে গ্রেপ্তার ও বেশ কিছু দেশীয় অস্ত্র জব্দ করা হয়েছে।

আজ বুধবার বিকেলে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য জানান নরসিংদী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তানভীর আহমেদ। অপহরণের শিকার ওই ব্যবসায়ীর নাম আমজাদ হোসেন (৩৮)। তিনি নরসিংদী শহরের ব্রাহ্মণপাড়ার ৩ নম্বর পানির ট্যাংক এলাকার মোহাম্মদ আলীর ছেলে। গতকাল মঙ্গলবার বেলা ৩টা ২০ মিনিটে ব্রাহ্মণপাড়ার ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান থেকে আমজাদ হোসেনকে অপহরণ করা হয়।

আমজাদ হোসেনের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে গিয়ে দেড় লাখ টাকা ঈদসালামি চান আসামিরা।

এই ঘটনায় গতকাল মধ্যরাতে ৬ জনের নাম উল্লেখ ও অজ্ঞাতনামা আরও ২-৩ জনকে আসামি করে মামলা করেন আমজাদ হোসেন। এজাহারনামীয় আসামিরা হলেন শহরের ব্রাহ্মণপাড়া এলাকার মৃত বাদল মিস্ত্রির ছেলে আরিফ (২৮), তসলিম (৩২) ও হালিম (৩৫) এবং তাঁদের সহযোগী সুমন (২৫), রাসেল (২০) ও তারেক (২২)।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, গতকাল বেলা ৩টা ২০ মিনিটে ব্রাহ্মণপাড়ায় আমজাদ হোসেনের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে গিয়ে দেড় লাখ টাকা ঈদসালামি চান আসামিরা। আমজাদ হোসেন অপারগতা প্রকাশ করলে ক্ষুব্ধ হয়ে ওই সন্ত্রাসীরা জোরপূর্বক তাঁকে একটি ব্যাটারিচালিত অটোরিকশায় তুলে নেন। পরে তাঁকে চিনিশপুর ইউনিয়নের ঘোড়াদিয়া এলাকার একটি নির্জন কাঠবাগানের ভেতরে আটকে রাখেন। এ সময় তাঁর মুঠোফোন ছিনিয়ে নিয়ে বিকাশের পিন নম্বর জেনে ২০ হাজার টাকা তুলে নেন তাঁরা। এ সময় আরও ১ লাখ ৩০ হাজার টাকার অপেক্ষায় ছিলেন অপহরণকারীরা।

নরসিংদীতে অপহরণের শিকার ব্যবসায়ীকে উদ্ধারের সময় ঘটনাস্থল থেকে জব্দ করা অস্ত্র
ছবি: সংগৃহীত

পরে ওই ব্যবসায়ীর পরিবারের সদস্যরা জাতীয় জরুরি সেবা নম্বর ৯৯৯-এ কল দিয়ে সহযোগিতা চান। খবর পেয়ে আমজাদকে উদ্ধারে নরসিংদী মডেল থানার তিনজন উপপরিদর্শক (এসআই) কামরুজ্জামান, নাছিম মিয়া ও আজিজুল ইসলাম অভিযানে নামেন। সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় ও মুঠোফোন ট্র্যাক করে তাঁরা ঘোড়াদিয়ার ওই কাঠবাগানে অভিযান চালান। পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে পালিয়ে যাওয়ার সময় অপহরণকারীদের মধ্যে আরিফকে গ্রেপ্তার করা হয়। অপহরণের শিকার ব্যবসায়ী আমজাদ হোসেনকে উদ্ধারের পাশাপাশি ঘটনাস্থল থেকে তিনটি চাপাতি, একটি লম্বা ছুরি ও একটি সুইচ গিয়ার চাকু জব্দ করা হয়।

পুলিশের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তার আরিফ অপহরণে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে তাঁর দলের অন্যদের নামপরিচয় জানান। এই ঘটনায় মামলা হওয়ার পর আজ দুপুরে আরিফকে আদালতে পাঠানো হয়। আদালতের বিচারকের সামনে আরিফ ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেন। আদালত তাঁকে কারাগারে পাঠিয়ে দেন।

এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে নরসিংদী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তানভীর আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘অপহরণের ঘটনার তিন ঘণ্টার মধ্যেই ওই ব্যবসায়ীকে উদ্ধার ও এক আসামিকে অস্ত্রসহ গ্রেপ্তার করেছি আমরা। আরিফ নামের গ্রেপ্তার আসামি আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। তাঁকে কারাগারে পাঠিয়েছেন আদালত। অপহরণে জড়িত অপর আসামিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।’