‘ভিক্ষুক ভেবে বাসে তুলতে চান না, এমন শত প্রতিকূলতা পেরিয়ে এগিয়ে যাচ্ছি’

মহাসড়কের ধকল সয়ে গাজীপুর থেকে ঢাকা গিয়ে নিয়মিত ক্লাস করেন ইসমাইল হোসেনছবি: প্রথম আলো

জন্ম থেকেই দুটি পা সচল নয় তাঁর। অল্প বয়সে মারা যান বাবা। চারপাশের অবজ্ঞা আর বঞ্চনার মধ্যে বেড়ে ওঠেন। তবুও হাল ছাড়েননি তিনি। বাধা পেরিয়ে এগিয়ে যাচ্ছেন বিজয়ের পথে। ইসমাইল হোসেন (২৫) নামের এই তরুণ এখন পড়ালেখা করছেন ঢাকার সরকারি তিতুমীর কলেজে। তাঁর স্বপ্ন, বিসিএস পরীক্ষা দিয়ে সরকারি কর্মকর্তা হয়ে পরিবারের অভাব ও দুঃখ দূর করবেন।

ইসমাইল হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘সবারই স্বপ্ন থাকে, সেই স্বপ্ন পূরণ করার সক্ষমতা থাকে। কিন্তু আমার সেটি নেই। তবু স্বপ্ন দেখি লেখাপড়া শেষ করে বিসিএস পরীক্ষায় বসে ক্যাডার হওয়ার। সামনে অনেক বাধা। তারপরও সেই বাধা কাটিয়ে এগিয়ে চলার চেষ্টা করছি।’

ইসমাইল হোসেনের জন্ম ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়া উপজেলার রাধাকানাই গ্রামে। এখন থাকে থাকেন গাজীপুর সিটি করপোরেশনের আমবাগ এলাকায় ভাই ইদ্রিস আলীর সঙ্গে। ইদ্রিস আলী রিকশা চালিয়ে যা আয় করেন, তা দিয়ে ইসমাইলের থাকা–খাওয়া ও লেখাপড়ার খরচ দেন। তাঁদের বোন খাদিজা বেগমও ইসমাইলকে পড়ালেখার খরচ দিয়ে সহায়তা করেন।

ইসমাইল হোসেন বলেন, হামাগুড়ি দিয়ে এগিয়েছে তাঁর শিক্ষাজীবন। কৈশোরে বাড়ি থেকে দুই মাইল দূরের স্কুলে নিয়মিত যেতেন তিনি। প্রাথমিক, মাধ্যমিক, উচ্চমাধ্যমিক—সব অধ্যায় পেরিয়ে এখন তিনি সরকারি তিতুমীর কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগে স্নাতক চতুর্থ বর্ষে পড়েন। রোজ সকালে মহাসড়কের ধকল সয়ে গাজীপুর থেকে ঢাকা গিয়ে নিয়মিত ক্লাস করেন। তিনি বলেন, ‘এখনো অনেকে মানুষের শারীরিক প্রতিবন্ধিতাকে বাঁকা চোখে দেখেন। রাস্তায় চলতে গেলে বাঁকা কথা। ভিক্ষুক ভেবে অনেক চালকের সহকারী বাসে তুলতে চান না। এমন শত প্রতিকূলতা পেরিয়ে এগিয়ে যাচ্ছি।’

ইসমাইলের বিষয়ে জানানো হয় জেলা সমাজসেবা অধিদপ্তরের উপপরিচালক এস এম আনোয়ারুল করিমকে। তিনি বলেন, ইসমাইলের পক্ষ থেকে যোগাযোগ করা হলে তাঁরা প্রয়োজনীয় সহায়তা করবেন। প্রতিবন্ধীরা সমাজের বোঝা নন। সহায়তা পেলে তাঁরাও পড়াশোনা করে স্বাভাবিক জীবন যাপন করতে পারেন। ইসমাইল হতে পারেন অন্য ব্যক্তিদের জন্য উদাহরণ।