অফিসে দেরি করে আসায় ইউপি কর্মচারীকে থাপ্পড় চেয়ারম্যানের, নালিশ গেল ইউএনওর কাছে

দিনাজপুর জেলার মানচিত্র

দিনাজপুরের নবাবগঞ্জ উপজেলায় দেরি করে অফিসে আসায় ইউনিয়ন পরিষদের এক কর্মচারীকে থাপ্পড় দেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে। গতকাল রোববার সকালে নবাবগঞ্জ উপজেলার ৬ নম্বর ভাদুরিয়া ইউনিয়ন পরিষদে এ ঘটনা ঘটে। এরপর বিকেলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কাছে লিখিত অভিযোগ দেন ওই কর্মচারী।

ওই ইউপি চেয়ারম্যানের নাম বাবুল আহসানুল কবির ওরফে শামীম। আর অভিযোগকারী মোস্তাফিজুর রহমান ইউনিয়ন পরিষদের হিসাব সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর পদে চাকরি করেন।

ইউএনওর কাছে দেওয়া অভিযোগে মোস্তাফিজুর লেখেন, গতকাল সকাল ১০টা ৩ মিনিটে তিনি ইউনিয়ন পরিষদে আসেন। এ সময় চেয়ারম্যান বাবুল আহসানুল কবির তাঁকে কক্ষে ডাকেন। মোস্তাফিজুর সেই কক্ষে গেলে ইউপি চেয়ারম্যান তাঁর কাছে জানতে চান, ‘অফিস টাইম কয়টায়?’ তিনি জবাব দেন, সকাল ১০টায়। তখন ইউপি চেয়ারম্যান স্থানীয় বাসিন্দাদের উপস্থিতিতে ‘তিন মিনিট দেরিতে আসছিস ক্যান?’ বলেই হিসাব সহকারীর শার্টের কলার ধরে বাঁ কানে থাপ্পড় মারেন। পরে, ‘কাল থেকে সকাল ৯টার মধ্যে অফিসে আসবি, না হলে তোকে মেরেই ফেলব’ বলে ইউনিয়ন পরিষদ থেকে তাঁকে বের করে দেন।

তবে অভিযোগ অস্বীকার করে ভাদুরিয়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান বাবুল আহসানুল কবির আজ সোমবার সকালে মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘গতকাল ইউএনও অফিসে ডেকে নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে সমঝোতা করেছেন। ইউএনও আমাদের দুজনের বক্তব্য শুনে বিষয়টি মীমাংসা করে দিয়েছেন। এটা ভুল–বোঝাবুঝি ছিল, অন্য কিছু নয়।’

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ইউনিয়ন পরিষদের অফিস চলাকালীন সময় সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা। তবে ওই ইউনিয়ন পরিষদের তেমন কেউই সময়মতো অফিসে আসেন না। মোস্তাফিজুর জানান, তিনি সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত অফিসে থাকেন।

মোস্তাফিজুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘ইউপি চেয়ারম্যান আমাকে প্রায়ই অফিসে বেআইনি কাজ করতে বলতেন। প্রায়ই রাতের বেলা অফিসের কাজের জন্য মুঠোফোনে কল দিয়ে অফিসে ডাকতেন। না এলে পরে খারাপ আচরণ করেন। দুই দিন আগেও এক নারীর জন্মসনদ তৈরির জন্য আমাকে একটি প্রত্যয়নপত্র দেন। সেখানে ওই নারীর জন্মতারিখ ঘষামাজা ছিল। সেই সঙ্গে ইউপি থেকে ওই নারীর নামে জন্মসনদের একটি ফরম পূরণ করে আমাকে দেন যাতে ইউপি চেয়ারম্যানের সিল থাকলেও স্বাক্ষর ছিল না। আমি দাপ্তরিক নিরাপত্তার কথা ভেবে ফরমটিতে তাঁর (চেয়ারম্যান) স্বাক্ষর দিতে বলায় তিনি আমার ওপর ক্ষেপে যান। সেই ঘটনার রেশ ধরে ইউপি চেয়ারম্যান আমাকে অফিসে দেরিতে আসার অজুহাতে বাঁ কানে থাপ্পড় মেরেছেন এবং অফিস থেকে গলাধাক্কা দিয়ে বের করে দিয়েছেন। আমি এখন আমার বাঁ কান দিয়ে শুনতে পাচ্ছি না।’

ভাদুরিয়া ইউপির সচিব দীপক চন্দ্র দাস প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি সকাল ১০টার পরে অফিসে এসেছি। অফিসে এসে শুনি অফিসে দেরিতে আসার কারণে হিসাব সহকারী মোস্তাফিজুর রহমানকে ইউপি চেয়ারম্যান ধরে মেরেছেন। ঘটনার পর হিসাব সহকারী উপজেলায় গিয়ে মারধরের ঘটনায় ইউএনওর কাছে অভিযোগ করেছেন।’

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এম এম আশিক রেজা প্রথম আলোকে বলেন, ‘অভিযোগ পেয়ে গতকাল বিকেলে প্রাথমিকভাবে আমরা উভয় পক্ষকে নিয়ে বসেছিলাম। আপাতত বিষয়টি আপস করে দেওয়ার চেষ্টা করেছি। এ ঘটনায় যে উত্তেজনা ছিল, সেটি শান্ত করার চেষ্টা করেছি। আর লিখিত অভিযোগটি জেলা প্রশাসককে পাঠানো হবে। জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা যদি মনে করেন, তাহলে দেখবেন।’

এ বিষয়ে স্থানীয় সরকার দিনাজপুরের উপপরিচালক মোখলেছুর রহমান মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, মারধরের বিষয়টি হিসাব সহকারী মোস্তাফিজুর রহমান তাঁকে মুঠোফোনে জানিয়েছেন। তাঁকে লিখিতভাবে অভিযোগ দেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। লিখিত অভিযোগ পেলে সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে পরবর্তী আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।