রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের হলে দুই ছাত্রের সিট দখল করল ছাত্রলীগ

জাকির হোসেনের বিছানাপত্র মেঝেতে ফেলে দেয় ছাত্রলীগ। গতকাল দিবাগত রাত ১টার দিকে তোলা
ছবি: প্রথম আলো

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ শামসুজ্জোহা হলের আবাসিক দুই শিক্ষার্থীর সিট দখল করেছে ছাত্রলীগ। গতকাল মঙ্গলবার দিবাগত রাতে হল শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মো. মোমিন ইসলাম ও তাঁর লোকজন ১৩৫ নম্বর কক্ষের একজন ছাত্রের বিছানাপত্র ফেলে দিয়ে আরেক ছাত্রকে ওই সিটে ওঠান। এর আগে গত ২৫ জানুয়ারি একই হলের ৩০৭ নম্বর কক্ষেও একই কায়দায় মোমিন ও তাঁর লোকজন আরেক ছাত্রকে সিট থেকে নামিয়ে দেন। এ দুই ঘটনায় ভুক্তভোগী দুই শিক্ষার্থী আজ বুধবার হল প্রাধ্যক্ষের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।

ভুক্তভোগী দুই শিক্ষার্থী হলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উর্দু বিভাগের ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী মো. জাকির হোসেন। তিনি হলের ১৩৫ নম্বর কক্ষের আবাসিক শিক্ষার্থী। আরেকজন হলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের শাখাওয়াত আলম। তিনি ওই হলের ৩০৭ নম্বর কক্ষের বাসিন্দা। তাঁর সিট দখল করা হয়েছে গত ২৫ জানুয়ারি।

জাকির হোসেন লিখিত অভিযোগে উল্লেখ করেছেন, ‘গত ২২ জানুয়ারি রাত ১০টার সময় ছাত্রলীগের হল সেক্রেটারি (সাধারণ সম্পাদক) মোমিন ও তাঁর ছেলেরা এসে জিজ্ঞেস করেন, “তোমাকে কে এই রুমে তুলেছে?” উত্তরে প্রাধ্যক্ষ স্যারের কথা বললে তিনি বলেন, “এটা আমার সিট, প্রাধ্যক্ষ তোলার কে?” এরপর আমাকে ও প্রাধ্যক্ষ স্যারকে অকথ্য ভাষায় গালাগালি করেন এবং ২৯ জানুয়ারির পর কক্ষ ছেড়ে দিতে বলেন। কক্ষ না ছাড়লে মারার হুমকি দেন। এর মধ্যে কক্ষ না ছাড়ায় গতকাল রাতে এসে আমার অনুপস্থিতিতে আমার বিছানাপত্র ফেলে দিয়ে অন্য একজনকে তোলেন। এতে আমি রুমে অবস্থান করতে পারছি না। এমতাবস্থায় আমি চরম অনিরাপত্তায় ভুগছি।’

এদিকে গতকাল রাতে খবর পেয়ে এই প্রতিনিধি জোহা হলে যান। সেখানে গিয়ে দেখা যায়, জাকিরের বিছানাপত্র কক্ষের মেঝেতে পড়ে আছে। জাকির আজ সকালে প্রথম আলোকে বলেন, সারা রাত তিনি নিরাপত্তাহীনতায় ছিলেন। তাঁর ঘুম আসেনি। প্রাধ্যক্ষকে তিনি অভিযোগ দিয়েছেন। এখন যা করার, তিনি করবেন।

আরেক শিক্ষার্থী শাখাওয়াত লিখিত অভিযোগে উল্লেখ করেছেন, ‘দুই মাস ধরে আমি আমার বৈধ সিটে অবস্থান করছি। হঠাৎ করে গত ২৫ জানুয়ারি সন্ধ্যার দিকে জোহা হল ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক এসে আমাকে সিট ছেড়ে দেওয়ার জন্য হুমকি প্রদর্শন করে সেখানে তাঁদের আরেকজনকে তুলে দেন। সিট থেকে আমার জিনিসপত্র সরিয়ে দিয়ে নানা ধরনের ভয়ভীতি প্রদর্শন করেন। এমতাবস্থায় আমি আমার সিটে অবস্থান করতে পারছি না এবং নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি।’

শাখাওয়াত প্রথম আলোকে বলেন, তিনি এত দিন ধরে ওই কক্ষে মেঝেতে আছেন। তিনি এখন লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। তিনি তাঁর বৈধ সিটে উঠতে চান।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে হল শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মো. মোমিন ইসলাম বলেন, তিনি এখন বিষয়টি নিয়ে প্রাধ্যক্ষের সঙ্গে আলোচনা করছেন। পরে কথা বলবেন বলে ফোন কেটে দেন।

পরে মোমিন ইসলাম কল করে এই প্রতিবেদককে বলেন, তিনি কাউকে হল থেকে তুলে দেননি। তিনি হুমকিও দেননি। তবে যাঁরা হলের ওই দুই সিটে উঠেছেন, তাঁরা ছাত্রলীগের কর্মী—এটা ঠিক। তবে ওই দুজনের জন্য ১৩৫ ও ৩০৭ নম্বর কক্ষেই সিট বরাদ্দ ছিল।  

হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক একরামুল ইসলাম বলেন, লিখিত অভিযোগ দেওয়া দু্ই শিক্ষার্থী অনেক আগেই হলে সিট বরাদ্দ পেয়েছেন। তাঁদের কাগজপত্র তা–ই বলে। আর সদ্য ওঠা ওই দুজনকে সিট থেকে নেমে যাওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।