সেনবাগে সংঘর্ষের পর আ.লীগ কার্যালয় ভাঙচুর, বিএনপির বিরুদ্ধে অভিযোগ

নোয়াখালীর সেনবাগ উপজেলায় সংঘর্ষের সময় লাঠি হাতে একপক্ষের কর্মীরা। সোমবার বিকেলে গাজীরহাট মোড়ে
ছবি: প্রথম আলো

নোয়াখালীর সেনবাগ উপজেলায় বিএনপির একাংশের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের পাল্টাপাল্টি ধাওয়া, ইটপাটকেল নিক্ষেপ ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এ সময় ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের কার্যালয় ও কয়েকটি দোকান ভাঙচুর করা হয়।

আজ সোমবার বিকেল চারটার দিকে উপজেলার ডমুরুয়া ইউনিয়নের গাজীরহাট মোড় এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। এতে উভয় পক্ষের ৩১ জন আহত হয়েছেন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ শটগান থেকে আটটি ফাঁকা গুলি ছোড়ে।

পুলিশ ও স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি ও জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে সেনবাগ উপজেলা বিএনপির একাংশের নেতা-কর্মীরা (দলটির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য কাজী মফিজুর রহমানের অনুসারীরা) সোমবার বিকেলে গাজীরহাট মোড়-সংলগ্ন কেবিএম ইটভাটায় বিক্ষোভ সমাবেশের আয়োজন করেন।

বিকেল চারটার দিকে কাজী মফিজুর রহমানের নেতৃত্বে বিএনপির কর্মীদের একটি বিশাল বিক্ষোভ মিছিল সেনবাগ-সোনাইমুড়ী সড়ক হয়ে পশ্চিম দিকের ডমুরুয়া এলাকা থেকে পূর্ব দিকে আসছিল। একই সময় গাজীরহাট মোড়ে উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম আহ্বায়ক শওকত হোসেনের নেতৃত্বে একটি প্রতিবাদ সমাবেশ চলছিল।

বিএনপির মিছিলটি গাজীরহাট মোড়ে পৌঁছালে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। এ সময় উভয় পক্ষ এলোপাতাড়িভাবে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করতে থাকে। পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার একপর্যায়ে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা পিছু হটতে বাধ্য হন। এরপর বিএনপির নেতা-কর্মীরা গাজীরহাট মোড়ের ডমুরুয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের প্রধান কার্যালয়ে ভাঙচুর চালান। একই সময় গাজীরহাট মোড়ের কমপক্ষে তিনটি দোকান ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে।

একাধিক প্রত্যক্ষদর্শী জানিয়েছেন, বিএনপির কর্মীরা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ের চেয়ার-টেবিল, বঙ্গবন্ধু, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছবিসহ সবকিছু ভেঙে তছনছ করেন। এ সময় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ঘটনাস্থলে উপস্থিত পুলিশ শটগান থেকে আটটি ফাঁকা গুলি ছোড়ে। সংঘর্ষে উভয় পক্ষের প্রায় ৩০ জন নেতা-কর্মী আহত হয়েছেন। এ দৃশ্য মুঠোফোনে ভিডিও করতে গিয়ে এক স্কুলশিক্ষার্থীও হামলার শিকার হন।

গাজীরহাট মোড়ের ডমুরুয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের প্রধান কার্যালয়ের ভাংচুর করা চেয়ার
ছবি: প্রথম আলো

আওয়ামী লীগের কার্যালয় ভাঙচুরের ঘটনায় বিএনপির কেউ জড়িত ছিলেন না বলে দাবি করেছেন উপজেলা বিএনপির সদস্যসচিব মোক্তার হোসেন ওরফে ইকবাল।

তিনি প্রথম আলোকে বলেন, তাঁরা শান্তিপূর্ণ মিছিল নিয়ে সমাবেশস্থলের দিকে যাচ্ছিলেন। পথে গাজীরহাট মোড়ে আওয়ামী লীগের নেতা শওকত হোসেনের নেতৃত্বে অতর্কিতে হামলা চালানো হয়। এতে তাঁদের কমপক্ষে ২০ জন নেতা-কর্মী আহত হয়েছেন। তাঁদের মধ্যে নারী কর্মী নুরুন নাহার, কামরুন নাহার, জোলেখা, রহিমা আক্তার, জাহেদা খাতুন রয়েছেন।

এদিকে উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম আহ্বায়ক ও ডমুরুয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শওকত হোসেন অভিযোগ করেন, কাজী মফিজুরের নির্দেশে বিএনপির নেতা-কর্মীরা তাঁকে হত্যার উদ্দেশ্যে আওয়ামী লীগের সমাবেশে হামলা চালিয়েছেন। তাঁরা প্রায় ১৫ জন নেতা-কর্মীকে আহত করেছেন এবং দলের কার্যালয়ে ভাঙচুর চালিয়ে সবকিছু গুঁড়িয়ে দিয়েছেন।

অভিযোগ পেলে পরবর্তী আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন সেনবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ইকবাল হোসেন পাটোয়ারী।

তিনি প্রথম আলোকে বলেন, বিএনপি ও আওয়ামী লীগের পাল্টাপাল্টি বিক্ষোভ সমাবেশ কেন্দ্র করে একে অপরকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটে। এতে উভয় পক্ষের কয়েকজন আহত হয়েছেন। এ সময় আওয়ামী লীগের কার্যালয় ভাঙচুর করেন বিএনপির কর্মীরা। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ শটগান থেকে আটটি গুলি ছোড়ে। বর্তমানে পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে।