জরাজীর্ণ সেতুতে জোড়াতালি দিয়ে চলাচল

সেতুর দুই পাশের ইট-সিমেন্টের রেলিং খসে পড়ছে। রড বেরিয়ে আছে। কয়েকটি জায়গায় কংক্রিটের ঢালাই ভেঙে খালের মধ্যে পড়েছে।

যশোরের বাঘারপাড়া উপজেলার দোগাছী গ্রামে কাটাখালের ওপর সেতুটি বেহাল। গত মঙ্গলবার।ছবি: প্রথম আলো

খালের নাম কাটাখাল। খালের দুই পাড়ে দুই জেলার দুটি গ্রাম। পূর্ব পাড়ে নড়াইল সদর উপজেলার তুলারামপুর ইউনিয়নের বেনাহাটি গ্রাম। আর পশ্চিমে যশোরের বাঘারপাড়া উপজেলার জামদিয়া ইউনিয়নের দোগাছী গ্রাম। খালের ওপর জরাজীর্ণ একটি সেতু দুই গ্রামকে যুক্ত করেছে। সেতুর এক পাশে ভাঙাচোরা ইটের সড়ক। অপর পাশে কাঁচা সড়ক। ১০ বছর ধরে প্রতিদিন ভোগান্তি নিয়ে চলাচল করছেন এলাকার এক হাজারের বেশি মানুষ।

স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) বাঘারপাড়া কার্যালয় সূত্র জানায়, ২০০১-০২ অর্থবছরে কাটাখালের ওপর সেতুটি নির্মাণ করা হয়। সেতুটির দৈর্ঘ্য ১২ মিটার এবং প্রস্থ ৪ দশমিক ৫ মিটার।

গত মঙ্গলবার দেখা যায়, উপজেলার দোগাছী গ্রামের পঞ্চতীর্থ মহাশ্মশানের সামনে ভাঙ্গুড়া-বসুন্দিয়া সড়ক থেকে পূর্ব দিকে নেমে গেছে একটি ইটের সড়ক। প্রায় ১০০ মিটার দূরে গিয়ে ইটের সড়কটি শেষ হয়েছে। শুরু হয়েছে কাঁচা সড়ক। প্রায় ৪০০ মিটার গিয়ে গ্রামের শেষ অংশে কাঁচা সড়কটি শেষ হয়েছে। বেনাহাটি ও দোগাছী-দুই গ্রাম দুই পাশে রেখে ভাঙ্গুড়া ও কাঠুরিয়া গ্রামের বুক চিরে উত্তর থেকে দক্ষিণে চলে গেছে খালটি। খালের ওপর জরাজীর্ণ একটি সেতু।

সেতুর দুই পাশের ইট-সিমেন্টের রেলিং খসে পড়ছে। কয়েকটি স্থানে রড বেরিয়ে আছে। সেতুর ওপরের অংশের কয়েকটি জায়গায় কংক্রিটের ঢালাই ভেঙে খালের মধ্যে পড়েছে। সেখানে কয়েকটি বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। ভেঙে পড়া অংশে জং ধরা ঢালাইয়ের রড বেরিয়ে আছে।

পথচারীরা বলেন, স্থানীয় লোকজন চলাচলের জন্য বেরিয়ে আসা রডের ওপর বাঁশ, কঞ্চি, চট, গাছের ডাল, পাটকাঠির ওপর মাটি দিয়ে কোনোরকমে চলাচল করছে। সেতুর ওপরের ভেঙে পড়া অংশে পড়ে মাঝেমধ্যে দুর্ঘটনা ঘটছে। সেতুর পূর্ব পাশে একটি ইটের সড়ক নেমে গেছে। নড়াইল সদর উপজেলার বেনাহাটি হয়ে তুলারামপুর-শেখহাটি পাকা সড়কে এসে সড়কটি মিশেছে।

স্থানীয় মানুষেরা জানান, আশপাশের পাঁচ গ্রামের মানুষের সহজে যাতায়াতের জন্য খালের ওপর সেতুটি নির্মাণ করা হয়। সেতুর পূর্ব পাশে নড়াইল অংশে ইটের সড়ক নির্মাণ করা হয়েছে। তবে পশ্চিম পাশে যশোর অংশের সড়ক কাঁচা। প্রতিদিন বাঘারপাড়া উপজেলার দোগাছী, ঘোড়ানাছ, কমলাপুর, রঘুরামপুর ও নড়াইল সদর উপজেলার বেনাহাটি গ্রামের এক হাজারের বেশি মানুষ এই সড়ক দিয়ে চলাচল করে।

বাকড়ী বাজারে কাপড়ের দোকান আছে বেনাহাটি গ্রামের সবুজ শিকদারের (৩৫)। তিনি এই সড়ক দিয়ে প্রতিদিন দোকানে যাতায়াত করেন। তিনি বলেন, এই রাস্তা এবং সেতু দুটিই গুরুত্বপূর্ণ। এই রাস্তা দিয়ে বাকড়ী বাজার পাঁচ কিলোমিটার, অন্য দিক দিয়ে ঘুরে গেলে ১০ কিলোমিটার। কিন্তু রাস্তা কাঁচা এবং সেতুটি একদম ভাঙাচোরা হওয়ায় বর্ষার সময় ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করা যায় না। তখন ঘুরেই যান।

মাছ ব্যবসায়ী সিদ্ধার্থ সরকার (৪২) বলেন, ‘সাইকেলে করে মাছ নিয়ে প্রতিদিন যশোর সদর উপজেলার বসুন্দিয়া হাটে যাই। কিন্তু সাইকেল নিয়ে সেতুর ওপর উঠতে ভয় করে। ১০ বছর আগে সেতুটির পাটাতনের এক পাশ ভেঙে পড়ে। এরপর কোনোরকমে চলাচল করছি।’

এলাকার লোকজন আরও বলেন, দোগাছী ও বেনাহাটি গ্রামের শিক্ষার্থীরা এই সড়ক দিয়ে বাঘারপাড়া উপজেলার দোগাছী ঘোড়ানাছ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, কমলাপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, বাকড়ী বহুমুখী মাধ্যমিক বিদ্যালয় এবং বাকড়ী মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ে যায়। বর্ষার সময় সড়কটি বিচ্ছিন্ন থাকায় তাঁদের প্রায় ১০ কিলোমিটার ঘুরে চলাচল করতে হয়। ভাঙ্গুড়া ও কাঠুরিয়া বিলের ফসল ঘরে তুলতে পাঁচ গ্রামের কৃষকদের নানা দুর্দশার মধ্যে পড়তে হয়।

বেনাহাটি গ্রামের শর্মিলা বিশ্বাস সাইকেল চালিয়ে বিদ্যালয় থেকে বাড়ি ফিরছিল। সে বাকড়ী মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির
শিক্ষার্থী। সে বলে, ‘বর্ষার সময় এ রাস্তা দিয়ে চলাচল করতে পারি না। কাদায় পায়ের হাঁটু পর্যন্ত ডুবে যায়। সেতুর গর্ত দেখলে ভয় পাই। যদি সেতু থেকে পড়ে যাই?’

দোগাছী গ্রামের কৃষক চিন্ময় সরকার (২৮) বলেন, এই রাস্তা ও সেতু দিয়ে দুটি বিলের ফসল তোলা হয়। কিন্তু বর্ষাকালে কাদায় রাস্তা দিয়ে গরুর গাড়িও চলতে পারে না।

জামদিয়া ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) কার্যালয়ে গিয়ে চেয়ারম্যান আরিফুল ইসলামকে পাওয়া যায়নি। পরে তাঁর মুঠোফোনে কয়েকবার কল করা হলেও সেটি বন্ধ পাওয়া যায়।

বাঘারপাড়া উপজেলা প্রকৌশলী মো. আবু সুফিয়ান বলেন, সড়ক এবং সেতুর বিষয়ে খোঁজ নেওয়া হচ্ছে। সড়কটি পাকাকরণ এবং সেতুটি পুনর্নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হবে।

বেনাহাটি গ্রামের ভ্যানচালক উৎপল রায় (৩২) বলেন, ‘১০-১২ বছর ধরে সেতুটি একই অবস্থায় পড়ে আছে। বর্ষার সময় রাস্তাটি পানি-কাদায় তলিয়ে থাকে। সেতুটি কি দেখার কেউ নেই?’