সরেজমিনে দেখা যায়, ধামরাইয়ের ঢুলিভিটা থেকে ফোর্ডনগর, জয়পুরা থেকে জলসিং, সুতিপাড়া থেকে নান্নার, জয়পুরা থেকে দেপাশাই সড়কের বিভিন্ন স্থানে খানাখন্দে ভরা। স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, সড়কগুলোতে দিনরাত ২৪ ঘণ্টা ইটভাটার জন্য মাটিভর্তি শতাধিক ট্রাক, ডাম্প ট্রাক, মাহিন্দ্রা চলাচল করে। ফলে সড়কের বিভিন্ন স্থানে কার্পেটিং উঠে গেছে। রাস্তায় এখানে-সেখানে পড়ছে মাটি। যানবাহনের চাকার আঘাতে সড়কের খোয়া মাটির সঙ্গে মিশে তৈরি হচ্ছে ধুলা।

দেপাশাই গ্রামের বাসিন্দা শরিফ উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, দিনরাত মাটির ট্রাকগুলা চলাচলের কারণে রাস্তার বারোটা বেজে গেছে। সড়কের পিচ তো কবেই উঠে গেছে, এখন ট্রাকের চাকায় নিচের ইট গুঁড়া হয়ে যাচ্ছে। রাস্তার পাশ দিয়া চলার সময় ইটের গুঁড়া আর ধুলায় চেহারাই পাল্টে যায়।

এসব ধুলা জনস্বাস্থ্যের জন্য খুব ক্ষতিকর বলে জানালেন উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা নূর রিফফাত আরা। প্রথম আলোকে তিনি বলেন, বালুর চেয়ে সড়কের খোয়াগুলো গুঁড়া হয়ে যে ধুলা তৈরি হচ্ছে, তাতে নানা ধরনের স্বাস্থ্যগত সমস্যা দেখা দিচ্ছে। ওই ধুলার কারণে হাসপাতালে শ্বাসকষ্টজটিত সমস্যা নিয়ে রোগীর সংখ্যা বেড়ে গেছে। ছোট বাচ্চাদের ঠান্ডাজনিত ফুসফুসের প্রদাহ হচ্ছে।

ধামরাইয়ের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, উপজেলায় বৈধ ও অবৈধ দেড় শতাধিক ইটভাটা রয়েছে। এসব ভাটায় পুরোদমে চলছে ইট প্রস্তুতের কাজ। সড়কগুলোতে বেড়েছে মাটিবাহী পরিবহনের ব্যস্ততা। সড়কগুলোর অধিকাংশের পার্শ্ববর্তী বাড়িঘর, গাছের ডালপালা ও ফসলি জমির ওপর পড়েছে লালচে ধুলার আস্তরণ। ধুলা থেকে রক্ষা পেতে সড়কের পাশে মুদি ও খাবারের দোকানগুলোর সামনে কাপড় দিয়ে ঘিরে দেওয়া হয়েছে।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের সভাপতি সালেহ আহাম্মদ খান জানালেন, গাছপালা ও ফসলের ওপর ধুলাবালুর আস্তরণ পড়লে এতে উদ্ভিদের সালোকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়া ব্যাহত হয়। স্বাভাবিকভাবেই এতে ফসলের উৎপাদন কমার পাশাপাশি গাছপালার ক্ষতি হয়।

জলসিং এলাকার কৃষক দৌর উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, ‘কারে কী কমু। কে শুনব আমাগো কথা। খেতে ভুট্টা বুনছি। ভুট্টাগাছে এখন ধুলায় ভরা। মাটির ট্রাক আমাগো সর্বনাশ কইরা দেয়। প্রতিবছরই এই সময়ে এমন হয়। কেউ কিছু কওয়ার সাহস পায় না।’

কয়েকটি সড়কের বিভিন্ন স্থানে সড়কের পাশেই ইটভাটার মাটি ১০-১২ ফুট উঁচু করে ডিবির মতো করে রাখতে দেখা গেছে। মাঝেমধ্যে সড়কের কিছু অংশ দখল করেও রাখা হয় মাটি। এই চিত্র দেখা যায় শ্রীরামপুর থেকে সূয়াপুর বাজার, শাসন এলাকার সড়কগুলোর পাশে। এই ডিবির মাটি থেকে তৈরি ধুলা বাতাসের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। এ ছাড়া বৃষ্টি হলে মাটি গড়িয়ে সড়কে গিয়ে কাদার সৃষ্টি হয়। এতে ভয়ংকর হয়ে ওঠে সড়ক।

ধামরাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) হোসাইন মোহাম্মদ হাই জকী প্রথম আলোকে বলেন, ‘অবৈধ ইটভাটাগুলোর বিরুদ্ধে আমরা নিয়মিত অভিযান চালাচ্ছি। আর বৈধ ইটভাটার কার্যক্রম পরিচালনার সময় যাতে জনদুর্ভোগ তৈরি না হয়, এ বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।’

উপজেলার মাদারপুর থেকে প্রতিদিন সাভারে মোটরসাইকেল নিয়ে কর্মস্থলে করেন সোহেল রানা। তিনি বলেন, বছরের এই সময়ে ইটভাটার মাটির ট্রাকের কারণে রাস্তার বিভিন্ন জায়গায় মাটির আস্তরণ পড়ে রাস্তা ভয়ংকর হয়ে ওঠে। ধুলার কারণে ভোগান্তিতে পড়তে হয় পাশাপাশি বৃষ্টি হলে কাদামাটিতে রাস্তা পিচ্ছিল হয়ে যায়। তখন প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটে।