শিক্ষক নিয়োগে ইউজিসির নীতিমালা অনুসরণ করে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ নিয়ে রুল

বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস
ছবি: প্রথম আলো

বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগে সহযোগী অধ্যাপক নিয়োগে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) নির্দেশনা অনুসরণ করে কেন নতুন নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হবে না—এ মর্মে রুল জারি করেছেন আদালত। গতকাল সোমবার শুনানি শেষে হাইকোর্টের একটি বেঞ্চ এই রুল জারি করেন।

গত বৃহস্পতিবার এ বিষয়ে রিট দায়ের করেছিলেন ওই পদের প্রার্থী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক আবু সালেহ।

এ বিষয়ে রিটকারীর আইনজীবী মাহবুব মোর্শেদ প্রথম আলোকে বলেন, শুনানি শেষে হাইকোর্ট নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিটি কেন অবৈধ ঘোষিত হবে না এবং বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) নির্দেশনা অনুসরণপূর্বক কেন নতুন বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হবে না মর্মে রুল জারি করেছেন। একই সঙ্গে হাইকোর্ট অপর এক আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে নতুন করে আবেদনকারীকে সাক্ষাৎকারপত্র প্রদান করে পরীক্ষা গ্রহণের ব্যাপারে পদক্ষেপ নেওয়ার বিষয়টি এক মাসের মধ্যে নিষ্পত্তির আদেশ দিয়েছেন।

বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সূত্র জানায়, গত ৬ মার্চ এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩২টি পদে শিক্ষক নিয়োগের জন্য বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। বর্তমান উপাচার্য বদরুজ্জামান ভূইয়া নিয়োগ পাওয়ার দুই দিন পর এটাই ছিল তাঁর প্রথম নিয়োগ কার্যক্রম।
বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, শিক্ষক নিয়োগ পদে আবেদনের শেষ দিন ছিল গত ২১ মার্চ। এতে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের দুটি সহযোগী অধ্যাপক পদের অনুকূলে চারজন আবেদন করেন।

আবু সালেহ বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের দুটি সহযোগী অধ্যাপক পদে ৩ এপ্রিল নিয়োগ বোর্ড বসিয়ে সাক্ষাৎকার নেয়। কিন্তু সাক্ষাৎকার গ্রহণের এক দিন আগে তাঁকে ১ এপ্রিল হোয়াটসঅ্যাপে সাক্ষাতের জন্য একটি পত্র পাঠায়। এই নিয়োগপ্রক্রিয়া নিয়ে প্রশ্ন তুলে ওই দিনের সাক্ষাৎকারে অংশ নেননি। পরে তিনি উপাচার্য বরাবর একটি আইনি নোটিশ পাঠান এবং নিয়োগ বোর্ড পুনর্গঠনের দাবি জানান। চার আবেদনকারীর মধ্যে তিনিসহ দুজন পিএইচডি ডিগ্রিধারী। এ দুজনের সাক্ষাৎকারপত্র ইস্যু না করে অস্বাভাবিক দ্রুততায় ৩ এপ্রিল নিয়োগ বোর্ড বসানো হয়। নিয়ম ভেঙে কেবল অভ্যন্তরীণ দুই প্রার্থীকে নিয়ে বোর্ড সভা হয়। সভায় নিয়োগের সুপারিশ করা হয় এমন দুজনকে, যাঁদের পিএইচডি ডিগ্রি নেই।

আবু সালেহ অভিযোগ করেন, ‘অপেক্ষাকৃত কম যোগ্যতাসম্পন্ন প্রার্থীকে কৌশলে নিয়োগ দিতেই পরিকল্পিতভাবে পিএইচডি ডিগ্রিধারী প্রার্থীদের সাক্ষাৎকারপত্র দেওয়া হয়নি।’

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার মনিরুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, আবেদনকারী আবু সালেহকে পরীক্ষার দিনক্ষণ জানিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে ফোন করা হয়েছিল। এরপর তাঁরই পরামর্শ অনুযায়ী হোয়াটসঅ্যাপে সাক্ষাৎকারপত্র পাঠানো হয়েছিল। পাঠানোর পরেও তাঁর সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করে নিশ্চিত করা হয়েছে এবং তিনি সাক্ষাৎকার দিতে বরিশালে এসেছিলেন। কিন্তু তিনি বোর্ডে হাজির হননি। আবু সালেহ পুনরায় বোর্ড বসানোর দাবি করে ২৩ এপ্রিল আইনি নোটিশ দেন। এর পরদিনই চার সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেন উপাচার্য। ওই তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনের ভিত্তিতে আগের নিয়োগ বোর্ড বাতিল করে নতুন বোর্ড গঠন করা হয়েছে। এ বোর্ডের সভা আগামী ৫ মে পুনর্নির্ধারণ করা হয়েছে।

নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে ইউজিসির অভিন্ন নীতিমালা অনুসরণ করা হয়নি—এমন অভিযোগ প্রসঙ্গে মনিরুল ইসলাম বলেন, ইউজিসি ও বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব নীতিমালার মধ্যে খুব একটা পার্থক্য নেই। তা ছাড়া দেশের কোনো বিশ্ববিদ্যালয় এখনো এই নীতিমালা অনুসরণ করেনি। রিটের ব্যাপারে তিনি বলেন, ‘আমরা বিষয়টি শুনেছি। তবে আদালতের কোনো নোটিশ হাতে পাইনি। নোটিশ হাতে পেলে আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী ব্যবস্থা নেব।’