মায়ের ঝুলন্ত পা ধরে কাঁদছিল শিশুটি

ঝুলন্ত লাশপ্রতীকী ছবি

ফেনীতে জান্নাতুল ফেরদৌস নামের (২৩) এক গৃহবধূর ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। গতকাল সোমবার দিবাগত রাত একটার দিকে শ্বশুরবাড়িতে তাঁর শয়নকক্ষের দরজা ভেঙে পুলিশ লাশটি উদ্ধার করে। নিহত জান্নাতুল ফেরদৌস সদর উপজেলার কাজিরবাগ ইউনিয়নের মধ্যম সোনাপুর গ্রামের প্রবাসী আবু বক্করের স্ত্রী।

স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, রাতে দেড় বছরের শিশুকন্যা রুপাকে নিয়ে নিজের কক্ষে ঘুমাতে যান জান্নাতুল ফেরদৌস। কিছুক্ষণ পর রুপার কান্নাকাটি ও চিৎকার শুনে শ্বশুরবাড়ির লোকজন দরজা খুলতে জান্নাতুল ফেরদৌসকে ডাকাডাকি করেন। ভেতর থেকে কোনো সাড়া না পেয়ে পুলিশকে খবর দেওয়া হয়। পরে পুলিশ এসে দরজা ভেঙে দেখতে পায় গলায় ওড়না প্যাঁচানো অবস্থায় সিলিং ফ্যানের সঙ্গে ঝুলছে গৃহবধূ জান্নাতুল ফেরদৌসের লাশ। তাঁর পা দুটি ঝুলন্ত অবস্থায় খাটের সঙ্গে লাগানো। মায়ের ঝুলন্ত পা দুটি ধরে কান্নাকাটি করছে শিশুকন্যা রুপা।

জান্নাতুল ফেরদৌসের বাড়িও একই গ্রামে। আড়াই বছর আগে তাঁর বিয়ে হয়। তাঁর স্বামী কুয়েতপ্রবাসী। যৌতুকের জন্য নির্যাতনের পর জান্নাতুল ফেরদৌসের মৃত্যু হয়েছে বলে দাবি করেছে তাঁর পরিবার। পরিবারের পক্ষ থেকে জানানো হয়, বিয়ের পর থেকে জান্নাতুল ফেরদৌসকে যৌতুকের জন্য শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করা হতো। নির্যাতনের ঘটনায় ফেনীর আদালতে একটি মামলা বিচারাধীন।

নিহত ওই নারীর পরিবারের সদস্যরা জানান, বিয়ের কিছুদিন পর জান্নাতুল ফেরদৌসের স্বামী আবু বক্কর কুয়েতে যান। তখনো শ্বশুরবাড়ি থেকে যৌতুক হিসেবে কিছু টাকা দেওয়া হয়। এরপরও বিভিন্ন সময় যৌতুকের দাবি করা হয়েছে। ছুটিতে এসে তিন মাস আগে আবারও কুয়েতে চলে যান বক্কর। যৌতুকের দাবিতে নির্যাতন কেন্দ্র করে জান্নাতুল ফেরদৌস বেশ কিছুদিন বাবার বাড়িতে ছিলেন। স্থানীয়ভাবে বিষয়টি মীমাংসা হওয়ায় তিনি আবার শ্বশুরবাড়িতে যান।

জান্নাতুল ফেরদৌসের ভাই মো. আরাফাত পাটোয়ারী বলেন, চার মাস আগে আবু বক্কর দেশে থাকা অবস্থায় দুই লাখ টাকা যৌতুক দাবি করেন। তাঁকে ৫০ হাজার টাকা দেওয়া হয়। তবু জান্নাতুল ফেরদৌসকে নির্যাতন করায় আদালতে মামলা করা হয়। এরপরও তাঁর বোনকে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন অব্যাহত রাখা হয়, যা তাঁর বোনকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিয়েছে। মৃত্যুর সময় তিন মাসের অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন জান্নাতুল ফেরদৌস। লাশ উদ্ধারের ঘটনায় থানায় লিখিত অভিযোগ করা হবে বলে জানান তিনি।

ফেনী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ শহিদুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, লাশটির ময়নাতদন্ত করা হবে। পরিবারের পক্ষ থেকে লিখিত অভিযোগ পেলে তদন্ত করে পুলিশ আইনগত ব্যবস্থা নেবে।