আড়াইহাজারে জাল ভোট দেওয়ার চেষ্টা, প্রকাশ্যেও ভোট

দ্বিতীয়বার ভোট দিতে এসে আঙুলে অমোচনীয় কালিসহ ধরা পড়েন এক ব্যক্তি। আজ সকালে নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজার উপজেলার সভ্যবান্দী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রেছবি: প্রথম আলো

আড়াইহাজার উপজেলার দড়ি সভ্যবান্দী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্র। আজ সকাল নয়টায় কেন্দ্রটির ভেতরে গিয়ে দেখা যায়, ১ নম্বর বুথে একজন ব্যক্তিকে প্রকাশ্যে ঘোড়া প্রতীকে ভোট দিচ্ছেন। ভোট দেওয়ার পর ওই ব্যক্তি আবারও লাইনে দাঁড়ান এবং সহকারী প্রিসাইডিং কর্মকর্তার কাছে যান। তখন তাঁর হাতের আঙুনে অমোচনীয় কালি। আবারও কেন ভোট দেওয়ার চেষ্টা করছেন জিজ্ঞাসা করলে ওই ব্যক্তি কোনো উত্তর দেননি। এ ছাড়া প্রকাশ্যে ভোট দেওয়ার কথা জিজ্ঞাসা করলেও তিনি কোনো জবাব দেননি।

এ সময় কেন্দ্রের প্রিসাইডিং কর্মকর্তা মুরাদ হোসেন এসে ওই ব্যক্তিকে বুথের বাইরে নিয়ে যান। পরে তাঁর বিরুদ্ধে আইনগত কোনো ব্যবস্থা না নিয়ে কেন্দ্র থেকে চলে যেতে দেন।

এ সময় প্রিসাইডিং কর্মকর্তা মুরাদ হোসেন ভূঁইয়াকে সঙ্গে নিয়ে পাশের একটি বুথে যান আনারস প্রতীকের এজেন্ট সাইফুল ইসলাম। সেই ছবি তুলতে দেখে দ্রুত সেখান থেকে সরে যান সাইফুল। পরে প্রিসাইডিং কর্মকর্তা ওই এজেন্টকে তাঁর কক্ষে নিয়ে বসিয়ে রাখেন এবং ঘটনাটি প্রকাশ না করার জন্য সাংবাদিকদের কাছে অনুরোধ করেন। পুরো সময় ওই কেন্দ্রে দোয়াত–কলম প্রতীকের কোনো এজেন্ট দেখা যায়নি।

এসব বিষয়ে প্রিসাইডিং কর্মকর্তা মুরাদ হোসেন ভূঁইয়া বলেন, ‘দোয়াত কলমের একজন এজেন্টও আসেননি। আমি সুষ্ঠু ভোটের চেষ্টা করছি। কিন্তু আমি একদিকে গেলে ওরা আরেক দিক থেকে প্রবেশ করে। যা ঘটেছে, তার জন্য আমি আন্তরিক দুঃখিত।’

আরও পড়ুন

ওই কেন্দ্র থেকে বের হওয়ার পথে গণমাধ্যমকর্মীদের ঘিরে ধরেন উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান শাহিদা মোশারফ ও তাঁর সমর্থকেরা। এ সময় তাঁরা এই বিষয়ে সংবাদ প্রকাশ করতে অনুরোধ করতে থাকেন এবং গাড়ি আটকে রাখেন। এ সময় শাহিদা মোশাররফ বলেন, ‘এটি এমপি বাবুর এলাকার কেন্দ্র। এ নিয়ে নিউজ করলে তাঁর সম্মানহানি হবে।’ শাহিদা মোশাররফ মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হতে যাচ্ছেন। তিনি চেয়ারম্যান প্রার্থী ঘোড়া প্রতীকের মোহাম্মদ সাইফুল ইসলামের পক্ষে কাজ করছেন।

আড়াইহাজার উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে আজ মঙ্গলবার সকাল আটটা থেকে ভোট গ্রহণ শুরু হয়েছে, চলবে টানা বিকেল চারটা পর্যন্ত। ভোট গ্রহণ শুরু হওয়ার পর উপজেলার অধিকাংশ কেন্দ্র থেকে নিজের এজেন্টদের বের করে দেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন দোয়াত–কলম প্রতীকের প্রার্থী শাহজালাল মিয়া। তিনি উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি। অন্য প্রার্থীরা হলেন উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাবেক সভাপতি কাজী সুজন ইকবাল (আনারস প্রতীক) ও উপজেলা আওয়ামী লীগের কার্যকরী সদস্য ও সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম (ঘোড়া প্রতীক)। সাইফুল ইসলামকে সমর্থন দিয়েছেন সংসদ সদস্য ও জাতীয় সংসদের হুইপ নজরুল ইসলাম বাবু।

এ বিষয়ে সংসদ সদস্য নজরুল ইসলাম বলেন, ‘আমি এলাকায় নেই। আমি ভোট দেওয়ার জন্য পথে আছি। কেউ আমার নাম বললেই সেটা সত্য হবে এমন নয়। আমি যতটুকু জানি নির্বাচন সুষ্ঠু হচ্ছে এবং ভোটারদের ব্যাপক উপস্থিতি রয়েছে। ভোট নিয়ে আমার কোনো নির্দেশনা থাকার প্রশ্নই উঠে না।’

এদিক সকাল আটটায় উপজেলার দুপ্তারা সেন্ট্রাল করোনেশন উচ্চবিদ্যালয় ও কলেজে নারী ও পুরুষ কেন্দ্রের কোনো বুথে দোয়াত–কলমের এজেন্ট পাওয়া যায়নি। কেন্দ্রের বাইরে ও ভেতরে ঘোড়া প্রতীকের কার্ডধারী লোকজনের আনাগোনা চোখে পড়ে। এই দুই কেন্দ্রের অন্তত তিনটি বুথে ঘোড়া ও আনারস প্রতীকের এজেন্টদের সহকারী প্রিসাইডিং কর্মকর্তার সঙ্গে দাঁড়িয়ে ভোটারদের নির্দেশনা দিতে দেখা যায়। বিদ্যালয়ের নারী কেন্দ্রের ২ নম্বর বুথে গেলে দেখা যায়, আনারস প্রতীকের একজন এজেন্ট কক্ষের ভেতর মুঠোফোন ব্যবহার করছেন। গণমাধ্যমকর্মীদের দেখে ঘোড়া প্রতীকের এজেন্ট তাঁকে সতর্ক করে দেন। পরে ওই এজেন্ট দৌড়ে কেন্দ্র থেকে বের হয়ে যান।

বেলা ১১টায় সরকারি সফর আলী কলেজ কেন্দ্রে প্রার্থী শাহজালাল মিয়া সাংবাদিকদের বলেন, ‘নির্বাচনের পরিবেশ গতকাল রাত থেকে নষ্ট করা হয়েছে। কোথাও আমার এজেন্ট কেন্দ্রে ঢুকতে পারেননি। ফতেহপুর, কালাপাহাড়িয়া ও দুপ্তারায় প্রকাশ্যে ছিল মারা হচ্ছে। আনারস ও ঘোড়া মার্কা দুই প্রার্থীর এজেন্টরা এক হয়ে এই কাজগুলো করছেন।’

রিটার্নিং কর্মকর্তা নারায়ণগঞ্জের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) সাকিব আল রাব্বি বলেন, নির্বাচন সুষ্ঠু হচ্ছে। কোথাও কোথাও কিছু অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে। সেগুলোর প্রতিকার করা হচ্ছে।