বরিশাল সিটি নির্বাচনে ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থী দলটির জ্যেষ্ঠ নায়েবে আমির মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ ফয়জুল করিমের বিরুদ্ধে নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘন করে মোটরসাইকেল শোভাযাত্রা করার ও নাগরিক সংবর্ধনা নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। মোটরসাইকেল শোভাযাত্রা ও নাগরিক সংবর্ধনার আয়োজনের ফলে ঢাকা–বরিশাল মহাসড়কের সিঅ্যান্ডবি রোড এলাকায় যানজট দেখা দেয়। প্রচণ্ড গরমে সাধারণ মানুষকে ভোগান্তি পোহাতে দেখা যায়।
আজ সোমবার বিকেলে ঢাকা থেকে সড়কপথে বরিশালে আসার পর বিশাল মোটরসাইকেল শোভাযাত্রাসহ ফয়জুল করিমকে অভ্যর্থনা জানানো হয়। নগরের আমতলা মোড়ে দলের পক্ষ থেকে তাঁকে দেওয়া হয় নাগরিক সংবর্ধনা। এ সময় সৈয়দ ফয়জুল করিম বলেন, ‘আগামী সিটি নির্বাচনে আমি জয়ী হতে পারলে মুসলিম–হিন্দু–ধর্ম–বর্ণনির্বিশেষে সবাইকে সঙ্গে নিয়ে একটি সুন্দর, শান্তিময় উন্নত বরিশাল গড়ে তুলব। স্বাধীনতার পর ৫২ বছরে বরিশালে যে উন্নয়ন হয়নি, আমি জয়ী হলে তা করব।’
ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থী নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘন করেছেন মন্তব্য করে বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. হুমায়ুন কবির সোমবার রাত ৯টায় প্রথম আলোকে বলেন, তাঁকে আগামী বুধবার সকাল সাড়ে ১০টার মধ্যে সশরীর রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ে হাজির হয়ে কারণ দর্শাতে হবে। এ মর্মে একটি নোটিশ দেওয়া হচ্ছে।
সোমবার বেলা সাড়ে তিনটার দিকে ফয়জুল করিম নগরের প্রবেশদ্বার গড়িয়ারপাড় এলাকায় পৌঁছালে সেখানে অপেক্ষমাণ দলের অসংখ্য নেতা-কর্মী তাঁকে শুভেচ্ছা জানান। পরে মোটরসাইকেল শোভাযাত্রা নিয়ে তাঁকে শহরে নিয়ে আসেন নেতা–কর্মীরা। বিকেল পাঁচটায় তিনি আমতলা মোড়ে পৌঁছান। এতে গুরুত্বপূর্ণ ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কের এই অংশে যান চলাচল ব্যাহত হয়। দীর্ঘ যানজটের কবলে পড়ে অসংখ্য যাত্রীবাহী বাস, পণ্যবাহী ট্রাক এবং অন্যান্য যানবাহন।
বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থীকে বরণ করে নিতে বড় আকারের ‘শোডাউন’ করতে এক সপ্তাহ ধরেই প্রস্তুতি নিচ্ছিল দলটি। মূলত শুরুতেই চমক দেখাতেই দলটি এই কৌশল নিয়েছে বলে দলের একাধিক নেতা–কর্মীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে। বিএনপি এবার নির্বাচন বর্জন করায় এবং আওয়ামী লীগের মনোনয়ন নিয়ে দলের ভেতরে দ্বন্দ্ব-অবিশ্বাসের কারণে এবারের সিটি নির্বাচনে ইসলামী আন্দোলন আলাদা গুরুত্ব পাচ্ছে।
ইসলামী আন্দোলন সূত্র জানায়, নির্বাচনে অংশ নেওয়ার ঘোষণা দেওয়ার পর মেয়র পদে মনোনয়নের জন্য দুজনের নাম শুরুতে আলোচনায় ছিল। তাঁদের একজন দলটির কেন্দ্রীয় সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আশরাফ আলী আকন এবং বরিশাল জেলার সভাপতি মুফতি সৈয়দ এছহাক মুহাম্মাদ আবুল খায়ের। তাঁদের মধ্যে আবুল খায়ের প্রয়াত চরমোনাই পীরের ছেলে। আবুল খায়ের চরমোনাই ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সাবেক চেয়ারম্যান। মেয়র নির্বাচন সামনে রেখে তাঁকে দল থেকে চেয়ারম্যান পদে মনোনয়ন দেওয়া হয়নি। মনোনয়ন দেওয়া হয় তাঁর আরেক ছোট ভাই সৈয়দ মুহাম্মাদ জিয়াউল করিমকে। তিনি বর্তমানে ওই ইউপির চেয়ারম্যান।
গত ১৮ এপ্রিল দলীয় প্রার্থীর নাম ঘোষণার দিনক্ষণ ঘোষণা করেছিল ইসলামী আন্দোলন। কিন্তু ওই দিন দুপুরে তা আকস্মিকভাবে স্থগিত করে দলটি। ঈদের পাঁচ দিন পর ২৭ এপ্রিল মুফতি সৈয়দ ফয়জুল করিমকে দলীয় প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করেন দলটির আমির ও চরমোনাই পীর মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করিম।
মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ ফয়জুল করিম অনেকটা আকস্মিকভাবেই প্রার্থী হয়েছেন। তিনি প্রার্থী হওয়ার পর থেকে বরিশালের রাজনৈতিক অঙ্গনে ও সাধারণ ভোটারদের মধ্যে নানা আলোচনা হচ্ছে। প্রার্থী মনোনয়নে দলটির এ নাটকীয়তা রহস্যজনক মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা, এমনকি আওয়ামী লীগের একাংশের নেতারাও। আওয়ামী লীগের একটি অংশের অভিযোগ, বর্তমান মেয়র সাদিক আবদুল্লাহ এবার মনোনয়ন না পাওয়ায় ওই পক্ষের ইন্ধনেই ইসলামী আন্দোলন দলটির জ্যেষ্ঠ একজন নেতাকে আকস্মিক মেয়র পদে প্রার্থী করেছেন।
অবশ্য ফয়জুল করিম আজ সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে এর জবাব দিয়েছেন। সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, যাঁরা বলেন আওয়ামী লীগের একটি অংশের সমর্থনে বা ইন্ধনে আমি মেয়র পদে প্রার্থী হয়েছি এর জবাব এবং এর সপক্ষে প্রমাণ তাঁদের কাছ থেকেই আনতে হবে, যাঁরা এসব বলে বেড়াচ্ছেন। তিনি আরও বলেন, ‘এই কথার মাধ্যমে তাঁরাই (আওয়ামী লীগের একাংশ) তো আমাকে নির্বাচিত করে ফেলেছেন।’
নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘনের ব্যাপারে জানতে চাইলে মুফতি ফয়জুল করিম প্রথম আলোকে বলেন, ‘দীর্ঘদিন ঢাকায় ছিলাম। মনোনয়ন পাওয়ার পর সোমবার বিকেলে প্রথম বরিশালে এসেছি। এই খবর জেনে উৎসুক জনতা আমাকে বরণ করেছে, সংবর্ধিত করেছে। এটা কোনোভাবেই নির্বাচনের অংশ নয়।’ তিনি আরও বলেন, ‘নির্বাচনী তফসিল ঘোষণার পর এটা না পারলেও স্থানীয় প্রশাসন বিশেষ করে জেলা প্রশাসকের অনুমতি নিয়েই এটা করেছি।’
মানুষের ভোগান্তির বিষয়ে ফয়জুল করিম বলেন, ‘মানুষের ভোগান্তি যাতে না হয়, সে জন্য আমরা শোভাযাত্রাটি শহরের ভেতরে করতে দিইনি। এটা শহরের এক প্রান্তে করা হয়েছে।’
আগামী ১২ জুন বরিশাল সিটি নির্বাচনের ভোট গ্রহণ হবে। ১৬ মে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ দিন। ১৮ মে মনোনয়ন বাছাই, ১৯ থেকে ২১ মে বাছাইয়ের বিরুদ্ধে আপিল দায়ের, ২২ থেকে ২৪ মে আপিল নিষ্পত্তি, ২৫ মে প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ দিন এবং ২৬ মে প্রতীক বরাদ্দ করা হবে। এরপর শুরু হবে আনুষ্ঠানিক প্রচার-প্রচারণা।