যাত্রী সেজে প্রাইভেট কার ভাড়া নিয়ে চালককে হত্যা

হত্যা
প্রতীকী ছবি

প্রাইভেট কার ছিনতাইয়ের জন্য ছিনতাইকারীরা যাত্রী সেজে নারায়ণগঞ্জ থেকে চালক সবুজ খোন্দকারের (৬০) প্রাইভেট কার ভাড়া করেন। এরপর কৌশলে বগুড়ার দুপচাঁচিয়া উপজেলায় নিয়ে এসে শ্বাসরোধ ও রড দিয়ে পিটিয়ে চালককে হত্যার পর বস্তায় লাশ ভরে গুম করেন। ওই চালককে হত্যার অভিযোগে হওয়া মামলায় গ্রেপ্তারের পর আদালতে দেওয়া স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে এসব কথা বলেছেন আসামি আবুল কালাম আজাদ ওরফে বাবুল (৫২)।

আজ বৃহস্পতিবার বগুড়ার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট (দুপচাঁচিয়া আমলি আদালত) মীর্জা শাকিলার আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেন তিনি। একই মামলায় গ্রেপ্তার দুপচাঁচিয়া উপজেলার মাগুড়া গ্রামের মৃত তছির উদ্দিনের ছেলে প্রাইভেট কারের চালক জহুরুল ইসলামকে (৪২) তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে গতকাল বুধবার বিকেলে জহুরুলকে ও আবুল কালামকে গ্রেপ্তার করা হয়।

আদালতে জবানবন্দি দেওয়া আসামি আবুল কালাম আজাদ নারায়ণগঞ্জ জেলার বন্দর থানার হাজিপুর ৪ নম্বর ওয়ার্ডের মৃত সওদাগরের ছেলে। তিনি দুপচাঁচিয়া উপজেলার বেলহালী খামারগাড়ি গ্রামে শ্বশুরবাড়িতে বাস করতেন।

আবুল কালাম, জহুরুল ইসলামসহ কয়েকজন সহযোগী মিলে সবুজ খন্দকারকে রাতের খাবারের জন্য ডেকে নিয়ে শ্বাসরোধ ও রড দিয়ে পিটিয়ে হত্যা করেন।

এ বিষয়ে দুপচাঁচিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল কালাম আজাদ প্রথম আলোকে বলেন, প্রথমে অজ্ঞাতনামা হিসেবে সবুজ খোন্দকারের লাশ উদ্ধার করা হয়। পরে পকেটে থাকা একটি ভিজিটিং কার্ডের সূত্র ধরে সবুজ খোন্দকারের পরিচয় নিশ্চিত হওয়া যায়। পরে হত্যাকারীদের শনাক্ত এবং গ্রেপ্তারের জন্য ৩৬ ঘণ্টা সময় বেঁধে দেন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। এরপর আসামি গ্রেপ্তারে মাঠে নামে পুলিশ। বুধবার বিকেলে দুপচাঁচিয়া পৌর এলাকা থেকে আসামি জহুরুল এবং পরে বগুড়া শহরের পুরান-বগুড়া তিন মাথা রেলগেট এলাকার একটি আবাসিক হোটেল থেকে আবুল কালামকে গ্রেপ্তার করা হয়।

আদালতে দেওয়া জবানবন্দিতে আবুল কালাম উল্লেখ করেন, জীবিকার জন্য মাঝেমধ্যে ঢাকায় গিয়ে গ্যাস পাইপলাইন বসানোর কাজ করেন তিনি। মাস দুয়েক আগে প্রাইভেট কার ভাড়া নিয়ে ছিনতাইয়ের পরিকল্পনা আঁটেন। পরিকল্পনা অনুযায়ী গত ৩ অক্টোবর ৯ হাজার টাকায় ঢাকা থেকে দুপচাঁচিয়ার চৌমুহনীতে আসার জন্য প্রাইভেট কার ভাড়া করেন। পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী, আবুল কালাম স্ত্রী-সন্তানদের ভাড়া বাসা থেকে শ্বশুরবাড়িতে পাঠিয়ে দেন। এরপর রাত ১২টার দিকে খালি বাসায় আবুল কালাম, জহুরুল ইসলামসহ কয়েকজন সহযোগী মিলে সবুজ খন্দকারকে রাতের খাবারের জন্য ডেকে নিয়ে শ্বাসরোধ ও রড দিয়ে পিটিয়ে হত্যা করেন। এরপর লাশ বস্তায় ভরে ভ্যানে বাড়ি থেকে আনুমানিক এক কিলোমিটার দূরে বেলোহালী প্রাথমিক বিদ্যালয়সংলগ্ন পুকুরে লুকিয়ে রাখেন। পরদিন প্রাইভেট কারটি বিক্রির জন্য আবুল কালাম ও জহুরুল ইসলাম বগুড়া শহরে নেন।

নিহত সবুজ খোন্দকার নারায়ণগঞ্জের বন্দর থানার দেওয়ানবাগ খোন্দকার বাড়ির মৃত রিয়াজ উদ্দিনের ছেলে। তিনি প্রাইভেট কার চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করতেন। গত মঙ্গলবার দুপচাঁচিয়া উপজেলার চৌমুহনী-আলতাফনগর সড়কের পাশে বেলোহালী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়সংলগ্ন একটি জলাশয় থেকে সবুজের বস্তাবন্দী লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।

ওসি আবুল কালাম আজাদ বলেন, সবুজ খোন্দকারের মুঠোফোন বন্ধ থাকায় পরিবারের লোকজন উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন। পরে তাঁরা নারায়ণগঞ্জ বন্দর থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন। পুলিশ ইতিমধ্যে দুপচাঁচিয়া চৌমুহনী বাজারের একটি ফিলিং স্টেশন থেকে ছিনতাই হওয়া প্রাইভেট কার জব্দ করেছে।