নারীর প্রতি সহিংসতা ও জড়িতদের পার পাওয়ার সংস্কৃতি বেড়েছে: রাশেদা কে চৌধূরী

নারীপক্ষের ৪০ বছর পূর্তি উপলক্ষে তিনদিন ব্যাপী তরুণ নারী সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ও গণস্বাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক রাশেদা কে চৌধুরী। বৃহস্পতিবার বিকেলে সাভারের গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের পিএইচএ মিলনায়তনে
ছবি: প্রথম আলো

নারীর প্রতি সহিংসতা বেড়েছে। এ ক্ষেত্রে জড়িতদের পার পাওয়ার সংস্কৃতিও বেড়েছে। দেশে অসম্ভব রকমে সাম্প্রদায়িকতা বাড়ছে। এখান থেকে বের হয়ে আসতে হবে। নারীর সম অধিকার রাষ্ট্রকেই নিশ্চিত করতে হবে। নারী অধিকারবিষয়ক সংগঠন ‘নারীপক্ষ’-এর এক অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন গণসাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক রাশেদা কে চৌধূরী।

নারীপক্ষের ৪০ বছর পূর্তি উপলক্ষে তিন দিনব্যাপী তরুণ নারী সম্মেলনের আয়োজন করা হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার বিকেলে সাভারে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের পিএইচএ ভবন মিলনায়তনে সম্মেলনের উদ্বোধন করা হয়। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন রাশেদা কে চৌধূরী।

তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক এই উপদেষ্টা বলেন, ‘নারীর সকল কাজে অংশগ্রহণ বেড়েছে। কিন্তু অংশীদারত্ব বাড়েনি। সেখানে নজর দিতে হবে। তবেই নারীর অধিকার বাস্তবায়ন হবে। এখন আমরা সম অধিকার নয় অগ্রাধিকার চাই। নারীর অধিকারের লড়াই পুরুষের বিরুদ্ধে নয়, পুরুষতান্ত্রিকতার বিরুদ্ধে।’

অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন নারীপক্ষের সভানেত্রী তাসনিম আজীম, সূচনা বক্তব্য দেন প্রচার সম্পাদক রেহানা সামদানী, ‘সংগ্রামী নারীর জীবনের কথা’ নামক অধিবেশনে দেশের প্রথম বয়লার অপারেটর জমিলা খাতুন, ‘শিশুদের জন্য আমরা’ বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা হাজেরা খাতুন, উদ্যোক্তা ও বেসিক ইউনিয়নের সভাপতি সোমা আক্তার বক্তব্য দেন।

সূচনা বক্তব্যে রেহানা সামদানী বলেন, বাংলাদেশের নারী পরিবারে, সমাজে, রাষ্ট্রে অধিকারসম্পন্ন নাগরিক ও মর্যাদাপূর্ণ মানুষ হিসেবে গণ্য হবে এবং নারী অধিকার প্রতিষ্ঠা ও নারীর সামাজিক অবস্থান পরিবর্তনে নারীরাই নেতৃত্ব দেবেন—এই স্বপ্ন ও আকাঙ্ক্ষা নিয়ে ৪০ বছরে দাঁড়িয়ে নারীপক্ষ। নারীর প্রতি সর্বক্ষেত্রে বৈষম্য ও সহিংসতার বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলে নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য লড়াই করে চলছে সংগঠনটি। নারীর ওপর সহিংসতার বিরুদ্ধে নারীরাই নেতৃত্ব দেবে। নারীপক্ষ বিশ্বাস করে ‘আমার কথা আমি বলব আমার মতো করে বলব’।

সভায় ‘সংগ্রামী নারীর জীবনের কথা’ নামক অধিবেশনে স্মৃতিচারণা করে দেশের প্রথম বয়লার অপারেটর জমিলা খাতুন বলেন, ‘শুরুর দিকটা খুব কষ্টের ছিল। জাফর (জাফরুল্লাহ চৌধুরী) ভাইয়ের উৎসাহ ও সহযোগিতায় বয়লার চালানো শিখি। এশিয়ার মধ্যে আমিই প্রথম সনদপত্রপ্রাপ্ত বয়লার অপারেটর। আমি মোটর বাঁধানো, ওয়েল্ডিংসহ বিভিন্ন ধরনের কাজ করতে পারি।’

নারীর ক্ষমতায়নে অগ্রগতি হয়েছে এবং স্বনির্ভরতার মধ্য দিয়ে নারীরা সমাজে নেতৃত্বের জায়গা গড়ে তুলেছেন বলে উল্লেখ করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক সামিনা লুৎফা।

তিনি বলেন, ‘নানা প্রতিবন্ধকতার মধ্য দিয়ে বাধা অতিক্রম করে আজ নারীরা এগিয়ে যাচ্ছেন। প্রতিটি নারীর সফলতার গল্প আমাদের অনুপ্রেরণা দেয়। প্রতিটি নারীকে “আমি নারী আমি পারবো না” এই ধারণা থেকে বের হয়ে আসতে হবে। এই শব্দের বিরুদ্ধে আওয়াজ তুলতে হবে। রাষ্ট্র নারী-পুরুষের সমান অধিকার দিলেও সমাজ এ অধিকার পালনে বাধা তৈরি করে। এটি দূর করতে নারীকে শিক্ষিত হতে হবে। সে শিক্ষা হবে নিজের অধিকার আদায় সম্পর্কে জানা, যেকোনো কাজে নিজের মতামতকে প্রাধান্য দেওয়ার ক্ষমতা অর্জন করা।’

বাদ্যের তালে তালে বিকেল চারটায় সম্মেলনের প্রথম দিনের কার্যক্রম শুরু হয়। রাত আটটায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে দিনের কার্যক্রম শেষ হয়।

টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা-২০৩০ অনুযায়ী নারী আন্দোলনকে বেগবান করার লক্ষ্যে আয়োজিত তিন দিনব্যাপী এ নারী সম্মেলন চলবে ১৫ জুলাই পর্যন্ত। এতে সারা দেশ থেকে ২০০ জন তরুণ নারীসহ বিভিন্ন পর্যায়ের ৩০০ জন নারী অধিকারকর্মী অংশগ্রহণ করেছেন।

সম্মেলনের দ্বিতীয় দিন শুক্রবার নারী অধিকারবিষয়ক বিভিন্ন বিষয়ভিত্তিক আলোচনা ও কর্মশালা অনুষ্ঠিত হবে। আগামী শনিবার সমাপনী অধিবেশনে কর্মশালার সুপারিশ উপস্থাপন এবং ভবিষ্যৎ করণীয় নির্ধারণের মধ্য দিয়ে তরুণ নারী সম্মেলনের সমাপ্তি হবে।