সাতক্ষীরায় মেয়রের চেয়ারে বসতে গিয়ে লাঞ্ছিত হলেন তাজকিন আহমেদ

তাজকিন আহমেদ
ছবি: সংগৃহীত

বরখাস্তের আদেশ হাইকোর্টে স্থগিত হয়েছে, এই মর্মে একটি চিঠি নিয়ে সাতক্ষীরা পৌর মেয়র তাজকিন আহমেদ নিজ পদে যোগদান করতে গেলে তাঁকে যোগদান করতে না দেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। আজ বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে সাতক্ষীরা পৌর বিএনপির সদস্যসচিব ও মেয়র তাজকিন আহমেদ সাতক্ষীরা পৌরসভায় গেলে তাকে যোগদান করতে দেওয়া হয়নি।

তাজকিন আহমেদ অভিযোগ করেন, পৌরসভায় গেলে তাঁকে লাঞ্ছিত করেছেন ভারপ্রাপ্ত মেয়র কাজী ফিরোজ হাসান। একপর্যায়ে তাঁকে পৌরসভা কার্যালয় থেকে বের হয়ে আসতে হয়।

হাইকোর্টের আইনজীবী রুহুল কদ্দুস কাজল স্বাক্ষরিত একটি চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে, ১৪ ফেব্রুয়ারি বিচারপতি কে এম কামরুল কাদের ও বিচারপতি মোহাম্মদ আলীর সমন্বিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এক আদেশে তাজকিন আহমেদের সাময়িক বরখাস্তের আদেশ তিন মাসের জন্য স্থগিত করেন। পাশাপাশি সাময়িক বরখাস্তের সিদ্ধান্ত কেন বেআইনি ও অবৈধ ঘোষণা করা হবে না, তা চার সপ্তাহের মধ্যে জানতে চেয়ে বিবাদীর প্রতি রুল জারি করা হয়েছে।

তাজকিন আহমেদ জানান, তাঁর বিরুদ্ধে নাশকতামূলক কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে বিস্ফোরক দ্রব্য আইনে গত ২৪ ডিসেম্বর সাতক্ষীরা সদর থানায় একটি মামলা হয়। উচ্চ আদালতের নির্দেশে ২৪ জানুয়ারি ওই মামলায় চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে আত্মসমর্পণ করেন তাজকিন। বিচারক মো. হুমায়ুন কবীর তাঁর জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।

তাজকিনের বিরুদ্ধে নাশকতামূলক কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে বিস্ফোরক দ্রব্য আইনে মামলা হওয়ায় এবং এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে থাকায় স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের এক চিঠিতে ৬ ফেব্রুয়ারি তাঁকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। পাশাপাশি ১ নম্বর প্যানেল মেয়র কাজী ফিরোজ হাসানকে ভারপ্রাপ্ত মেয়রের দায়িত্ব দেওয়া হয়। এর মধ্যে ৯ ফেব্রুয়ারি জেলা ও দায়রা জজ আদালত তাজকিনকে জামিনে মুক্তি দেন।

তাজকিন জানান, ১৪ ফেব্রুয়ারি হাহকোর্ট তাঁর সাময়িক বরখাস্তের আদেশ তিন মাসের জন্য স্থগিত করেন। আইনজীবী রুহুল কদ্দুস কাজলের মাধ্যমে এ সিদ্ধান্তের একটি চিঠিও হাতে পেয়েছেন। চিঠির অনুলিপি পৌরসভার নির্বাহী কর্মকর্তা নাজিমউদ্দিন ও সচিব লিয়াকত হোসেনকে জানিয়ে তিনি আজ নিজ পদে যোগদান করতে যান। কিন্তু কেউই চিঠি নেননি। এ সময় ১৫-২০ জন বহিরাগত নিয়ে ভারপ্রাপ্ত মেয়র কাজী ফিরোজ হাসান অকথ্য গালিগালাজ ছাড়াও লাঞ্ছিত করেছেন বলে অভিযোগ তাসকিনের। একপর্যায়ে তিনি পৌরসভা থেকে বের হয়ে আসতে বাধ্য হন। এ বিষয়ে আইনগত ব্যবস্থা নেবেন বলে জানান বিএনপির এই নেতা।

এ বিষয়ে ভারপ্রাপ্ত মেয়র কাজী ফিরোজ হাসান বলেন, মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে তিনি ভারপ্রাপ্ত মেয়রের দায়িত্ব নিয়েছেন। মন্ত্রণালয়ের নির্দেশ না পাওয়া পর্যন্ত তিনিই এ পদে বহাল রয়েছেন। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, মেয়র তাজকিন আহমেদ ২০-২৫ জন বহিরাগত লোক নিয়ে পৌরসভার আসেন যোগদান করতে। একপর্যায়ে তিনি বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির চেষ্টা চালালে তাঁকে বাইরে যেতে বলা হয়।

পৌরসভার নির্বাহী কর্মকর্তা নাজিমউদ্দিন বলেন, একজন আইনজীবীর চিঠির অনুলিপি দিয়ে তিনি যোগদান করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু আদালতের আদেশের আনুষ্ঠানিক কপি ছাড়া তাঁর যোগদান করার সুযোগ নেই।

পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের স্থানীয় সরকার বিভাগের সাতক্ষীরা শাখার উপপরিচালক মাশরুবা ফেরদৌস জানান, নিয়ম অনুযায়ী হাইকোর্টের স্থগিতাদেশের অনুলিপি যথাযথভাবে তাঁদের প্রধান কার্যালয়ে পৌঁছাতে হবে। সেখান থেকে আবার চিঠি আসার পরই মেয়র দায়িত্ব বুঝে নিতে পারবেন।