গাইবান্ধা শহর
‘পোকামাকড়ের অভয়ারণ্য’ ঘাঘট লেকে দৃষ্টিনন্দন ‘বিনোদন পার্ক’
লেক পরিষ্কার করে নির্মিত হয়েছে দৃষ্টিনন্দন সেতু। পাকা সিঁড়ি, চলাচলের রাস্তা ও বসার বেঞ্চ নির্মাণের মাধ্যমে বেড়েছে সৌন্দর্য।
গাইবান্ধা শহরের ঘাঘট লেক (পরিত্যক্ত ঘাঘট নদ) একসময় ময়লা-আবর্জনায় ভর্তি ছিল। পোকামাকড় ও কচুরিপানার কারণে ভয়ে কেউ লেকে নামতে পারত না। সেই আবর্জনাভর্তি লেক এখন বিনোদন পার্ক হয়ে উঠছে। ইতিমধ্যে লেকের ওপর নির্মিত হয়েছে দৃষ্টিনন্দন সেতু। পাকা সিঁড়ি, চলাচলের রাস্তা ও দুই পাশে বসার বেঞ্চ তৈরি করে লেকের সৌন্দর্য বাড়ানো হয়েছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গাইবান্ধা শহরের ভেতর দিয়ে বয়ে গেছে ঘাঘট নদ। প্রায় ৩৩ বছর আগে ১৯৯০ সালে নদীটি লুপ-কাটিং করে প্রায় এক কিলোমিটার উত্তরে সরিয়ে দেওয়া হয়। এর পর থেকে মূল ঘাঘট নদের ৬ কিলোমিটার অংশ পরিত্যক্ত হয়ে পড়ে। অংশটি পরে ঘাঘট লেক হিসেবে পরিচিতি পায়। রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে কচুরিপানা ও ময়লা-আবর্জনা জমে। এতে পোকামাকড়ের অভয়ারণ্য হয়ে ওঠে লেকটি। পরে স্থানীয় লোকজনের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে গাইবান্ধা-২ (সদর) আসনের সংসদ সদস্য মাহাবুব আরা বেগমের প্রচেষ্টায় ‘ঘাঘট লেক উন্নয়ন প্রকল্প’ হাতে নেয় স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি)।
গাইবান্ধা এলজিইডি সূত্র জানায়, ২০১৭-১৮ অর্থবছরে প্রায় ২৮ কোটি টাকা ব্যয়ে ঘাঘট লেক উন্নয়ন প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়। ওই বছরই ছয় কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের লেকে পার্কের নির্মাণকাজ শুরু হয়। এর মধ্যে প্রায় দুই কিলোমিটার অংশের কাজ দখল-উচ্ছেদ না হওয়ায় সম্ভব হয়নি। বাকি চার কিলোমিটার অংশে দুটি সেতু, চারটি সিঁড়ি (ঘাটলা), দুই পাশে ১ হাজার ১০৬ মিটার পাকা রাস্তা, একটি ওয়াশ ব্লক, ৪ দশমিক ৪ কিলোমিটার তীর সংরক্ষণকাজ, ৪ দশমিক ৪ কিলোমিটার ফুটপাত, তিন ভেন্টের একটি ও এক ভেন্টের একটি স্লুইসগেট গেট, দুই পাশে ২০টি বসার বেঞ্চ ও দুটি ডাম্পিং স্টেশন নির্মাণ করা হয়। চলতি বছরের জুনে কাজ শেষ হয়। বাকি দুই কিলোমিটার অংশের দখল উচ্ছেদে জেলা প্রশাসনকে জানিয়েছে এলজিইডি। প্রশাসন অবৈধ দখল উচ্ছেদের প্রস্তুতি নিচ্ছে।
গত সোমবার সরেজমিন দেখা গেছে ঘাঘট লেকের পাড়ে মানুষের ভিড়। দৃষ্টিনন্দন সেতুতে লোকজন বসে আছেন। কেউ ঝালমুড়ি খাচ্ছেন, কেউ ঘোরাঘুরি করছেন। শিশুরা হইচই করছে। সেতুর ওপর মানুষের কোলাহল। অনেকে লেকের পাড়ে বেঞ্চে বসে গল্প করছেন।
লেকপাড়ে বিনোদন নিতে আসা শহরের সুখনগর এলাকার কলেজশিক্ষক সাখাওয়াত হোসেন বলেন, ‘ঘর থেকে বেরোলেই যানজট। যানবাহনের কালো ধোঁয়ার সঙ্গে ধুলাবালু তো আছেই। তাই মুক্ত বাতাস গ্রহণ করতে এখানে এসেছি। দৃষ্টিনন্দন সেতু, পাকা সিঁড়ি ও বসার বেঞ্চ দেখে ভালো লাগছে।’
কলেজছাত্রী উম্মে হাবিবা বলেন, পাকা দালানে ঘেরা শহরের পরিবেশ। বিশুদ্ধ বাতাস নেওয়ার সুযোগ নেই। তাই লেকে আসা। অনেকের সঙ্গে দেখা হলো। ভালো লাগল। শহরের ব্রিজ রোড এলাকার বাসিন্দা খাদেমুল ইসলাম বলেন, লেকটি পরিষ্কার করে নৌকা, ভাসমান খাবার হোটেল ও দুই পাশে আলোকসজ্জার ব্যবস্থা করলে এটি জেলার অন্যতম বিনোদনকেন্দ্র হিসেবে গড়ে উঠবে। এ জন্য পৌর কর্তৃপক্ষকে উদ্যোগী হতে হবে।
গাইবান্ধা পৌরসভার মেয়র মতলুবর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, লেকটি পরিষ্কার করা হবে। অল্প দিনের মধ্যেই লেকে নৌকা ও আলোকসজ্জার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। এসব কাজ বাস্তবায়নে টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। তখন ঘাঘট লেকটি পূর্ণাঙ্গ বিনোদনকেন্দ্র হিসেবে গড়ে উঠবে।
গাইবান্ধা শহর হলেও বিনোদনের জায়গা ছিল না। ঘাঘট লেক প্রকল্প বাস্তবায়িত হওয়ায় বিনোদনের পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে বলে মনে করেন গাইবান্ধা যুব নাগরিক কমিটির আহ্বায়ক জিয়াউল হক। তিনি বলেন, ‘মানুষ এখানে এসে সময় কাটাচ্ছেন। এতে তরুণ-যুবকদের মধ্যে অপরাধপ্রবণতা কমে যাবে। তারা এখন সেতুতে এসে সেলফি তুলছে। মুক্ত হাওয়ায় আড্ডা দিচ্ছে। এখানে নানা বয়সের মানুষের সমাগম ঘটছে।’