ভোলার গ্যাস দিয়ে দক্ষিণাঞ্চলের উন্নয়নের দাবি

ভোলার গ্যাস রক্ষায় দক্ষিণাঞ্চলের নাগরিক আন্দোলনের ভোলা জেলা আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়েছে। আজ শনিবার ভোলা প্রেসক্লাবে মতমিনিময় সভা করে ওই কমিটি গঠন করা হয়
ছবি: প্রথম আলো

ভোলার গ্যাস দিয়ে দক্ষিণাঞ্চলের উন্নয়নসহ সাত দফা দাবি বাস্তবায়নে শনিবার ভোলার গ্যাস রক্ষায় দক্ষিণাঞ্চলের নাগরিক আন্দোলনের ভোলা জেলা আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়েছে।  আজ শনিবার এক মতবিনিময় সভায় ভোলার বীর মুক্তিযোদ্ধা সিদ্দিকুর রহমানকে আহ্বায়ক এবং নাট্যকর্মী এস এম বাহাউদ্দিনকে সদস্যসচিব করে ৫১ সদস্যবিশিষ্ট কমিটি গঠন করা হয়েছে।  

বেলা ১১টায় ভোলা প্রেসক্লাব মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত ওই মতবিনিময় সভায় ভোলার গ্যাস রক্ষায় দক্ষিণাঞ্চলের নাগরিক আন্দোলনের বরিশাল বিভাগীয় কমিটির আহবায়ক মোবাশ্বের উল্যাহ চৌধুরী সভাপতিত্ব করেন। সভাশেষে জেলা কমিটি গঠন করা হয়। এ ছাড়া ওই সভায় সাত দফা দাবি বাস্তবায়নে কিছু কর্মসূচি পালনের সিদ্ধান্ত হয়। এর মধ্যে আগামী ১ সেপ্টেম্বর থেকে গণস্বাক্ষর কর্মসূচি পালন, অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বরিশালসহ দক্ষিণাঞ্চলের উন্নয়নে ভোলার গ্যাস ব্যাবহার করা, ইন্ট্রাকো লিমিটেডের সঙ্গে গ্যাস বিক্রয় চুক্তি বাতিলের দাবিতে বক্তারা চলমান আন্দোলন গতিশীল করা এবং দাবিগুলো বাস্তবায়িত না হওয়া পর্যন্ত  কঠোর আন্দোলন-সংগ্রাম চালিয়ে যাওয়ার বিষয় রয়েছে।

সভায় বক্তারা বলেন, বরিশাল বাংলাদেশের অনুন্নত বিভাগগুলোর একটি।  বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর এক জরিপে দেখা গেছে, খানাভিত্তিক দারিদ্র্যের হারের দিক থেকে বরিশালের অবস্থান শীর্ষে। শিল্পায়ন না হওয়া, শিল্পায়নের জন্য রেল যোগাযোগ বা গ্যাস–সংযোগ না থাকাসহ নানা কারণে বরিশাল বিভাগের এই দশা।

বক্তারা আরও বলেন, ভোলার গ্যাস দিয়ে বরিশালসহ অনুন্নত দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের উন্নয়ন দীর্ঘদিনের দাবি। সর্বশেষ ২০১৮ সালে এই এলাকার মানুষের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বরিশালে সমাবেশ করে এই গ্যাস দিয়ে বরিশাল ও ভোলার কলকারখানায় ও আবাসিক খাতে গ্যাস সংযোগ দেওয়ার  প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। অথচ সেই প্রতিশ্রুতি পূরণ না করে গত ২১ মে ইন্ট্রাকো রিফুয়েলিং স্টেশন লিমিটেডের সঙ্গে সরকারের ১০ বছর মেয়াদি চুক্তি হয়েছে। ওই চুক্তির আওতায় দ্রুতই ভোলার গ্যাস সিএনজিতে রূপান্তরিত করে ঢাকা, ময়মনসিংহের ভালুকা, গাজীপুরসহ বিভিন্ন শিল্পাঞ্চলে সরবরাহ করা হবে।

সভায় বক্তারা আরও বলেন, এই চুক্তির আওতায় প্রথম ধাপে চার-পাঁচ মাসের মধ্যে পাঁচ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস সংকুচিত করে তা ঢাকায় সরবরাহ করা হবে এবং দ্বিতীয় ধাপে ২০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস এক বছরের মধ্যে সরবরাহ করা হবে। ইন্ট্রাকো সরকারের কাছ থেকে প্রতি ঘনমিটার গ্যাস ১৭ টাকায় কিনবে; কিন্তু ঢাকার শিল্পাঞ্চলে সরবরাহের সময় ইন্ট্রাকো প্রতি ঘনমিটারের দাম পাবে ৪৭ টাকা ৬০ পয়সা, যা লাভের দিক থেকে যেকোনো সিএনজি ফিলিং স্টেশনের চেয়ে বেশি। ভোলাসহ বরিশাল বিভাগের শিল্পাঞ্চলে ভোলায় গ্যাস উদ্বৃত্ত থাকার কথা বলে এই চুক্তি করা হচ্ছে, অথচ ভোলাসহ বরিশাল বিভাগের শিল্পাঞ্চল গ্যাস সরবরাহের কোনো ব্যবস্থা না করে ঢাকার শিল্পাঞ্চলে গ্যাস সরবরাহের এই চুক্তি দক্ষিণাঞ্চলের জনগণের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা। এই চুক্তি দক্ষিণাঞ্চলের উন্নয়নকে বহুগুণ পিছিয়ে দেবে।

ভোলার গ্যাস রক্ষায় দক্ষিণাঞ্চলের নাগরিক আন্দোলনের সাত দফা দাবি জানিয়েছে। তাঁদের দাবিগুলো হচ্ছে; ভোলাসহ দক্ষিণাঞ্চলের জনগণকে বঞ্চিত করে ভোলার গ্যাস ঢাকায় সরবরাহ করা চলবে না, ভোলার ঘরে ঘরে গ্যাসের সংযোগ দিতে হবে,  ভোলার বিসিক শিল্পনগরীতে অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে গ্যাস–সংযোগ দিতে হবে, ভোলাসহ বরিশাল বিভাগে শিল্পাঞ্চলে ও আবাসিক খাতে গ্যাস–সংযোগ দিতে হবে, ভোলায় গ্যাসভিত্তিক সবুজ শিল্পায়ন পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে, ভোলায় একটি সরকারি মেডিকেল কলজে প্রতিষ্ঠা করতে হবে এবং ভোলার সরকারি পুকুর ভরাট করা বন্ধ করতে হবে।

ওই মতবিনিময় সভায় জাসদের জেলা সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা ছিদ্দিকুর রহমান, জেলা বিজেপির সাধারণ সম্পাদক মোতাসিম বিল্লাহ, দৈনিক আজকের ভোলার সম্পাদক শওকাত হোসেন, ভোলা প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক অমিতাভ রায়, গণ-অধিকার পরিষদের নির্বাহী সদস্য সাইদুজ্জামান অন্তর, ছাত্র অধিকার পরিষদের নির্বাহী সদস্য মো. আরমান, ব-দ্বীপ ছাত্রকল্যাণ সংসদের সদস্য জোবায়ের ইয়ামিন, নাট্যকর্মী তালহা তালুকদার, সহকারী অধ্যাপক শফিকুল ইসলাম প্রমুখ।