বিয়ারিং প্লেট চুরি ও সেতুর ত্রুটিই কারণ

ঈদযাত্রার সময় ট্রেন চলাচল সুষ্ঠু ও নিরাপদ রাখতে রেললাইনে পাহারা ও টহলের নির্দেশনা।

কুমিল্লার নাঙ্গলকোট উপজেলার ঢালুয়া ইউনিয়নের তেজের বাজার এলাকায় বিজয় এক্সপ্রেস ট্রেন লাইনচ্যুত হওয়ায় বেশ কয়েকটি বগি লাইনের পাশে হেলে পড়ে। ১৭ মার্চ দুপুরেছবি: সংগৃহীত

কুমিল্লার নাঙ্গলকোটের হাসানপুরে বিজয় এক্সপ্রেস ট্রেনের নয়টি বগি লাইনচ্যুত হওয়ার দুটি কারণ খুঁজে পেয়েছে তদন্ত কমিটি। এই দুটি কারণ হলো চুরির উদ্দেশ্যে রেললাইনের বিয়ারিং প্লেট (রেললাইনের সঙ্গে স্লিপার সংযুক্ত করার পাত) খুলে নেওয়া এবং রেলসেতুর ত্রুটি। নাশকতা কারণে দুর্ঘটনা ঘটেছে বলে মনে হয়নি তদন্ত কমিটির সদস্যদের।

রেলওয়ের উচ্চপর্যায়ের তদন্ত কমিটির সদস্য এবং রেলওয়ে পুলিশের দায়িত্বশীল কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে দুর্ঘটনার এই দুটি কারণ পাওয়া গেছে। ১৭ মার্চ দুর্ঘটনার পর রেলওয়ের পক্ষ থেকে বিভাগীয় কর্মকর্তা ও দপ্তরপ্রধানদের নিয়ে উচ্চপর্যায়ের দুটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। দুর্ঘটনার ১৩ দিন পার হলেও দুটি কমিটির কোনোটিই গতকাল শুক্রবার পর্যন্ত তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়নি। চার সদস্যের একটি কমিটির প্রধান করা হয় রেলওয়ের পূর্বাঞ্চলের প্রধান পরিচালন কর্মকর্তা মো. শহিদুল ইসলামকে। আর বিভাগীয় পরিবহন কর্মকর্তা আনিসুর রহমানকে প্রধান করে পাঁচ সদস্যের আরেকটি কমিটি গঠন করা হয়।

উচ্চপর্যায়ের একটি তদন্ত কমিটির প্রধান মো. শহিদুল ইসলাম গত রোববার তাঁর কার্যালয়ে প্রথম আলোকে বলেন, তদন্ত কার্যক্রমের প্রাথমিক কাজ শেষ করেছেন। দুটি কারণে দুর্ঘটনা ঘটেছে। প্রধান কারণ হচ্ছে, রেললাইন থেকে বিয়ারিং প্লেট খুলে ফেলা। আর নাশকতার উদ্দেশ্যে বিয়ারিং প্লেটগুলো খুলে ফেলা হয়েছে বলে মনে হয়নি। চুরির উদ্দেশ্যে কয়েকজন কিশোর তিনটি বিয়ারিং প্লেট খুলে নিয়েছে। অন্য কারণটি হচ্ছে রেলসেতুর স্লিপারের অনেকগুলো নষ্ট হয়ে গেছে। রক্ষণাবেক্ষণের অভাব কিংবা সংস্কার না করার কারণে এগুলো নষ্ট হয়েছে। ওই রেলসেতু ট্রেনের বগিগুলোর ভার (লোড) নিতে পারেনি। ফলে লাইনচ্যুত হয়েছে। শহিদুল ইসলাম জানান, তদন্তের কিছু কাজ বাকি রয়েছে। এরপর দ্রুত প্রতিবেদন জমা দেবেন তাঁরা।

১৭ মার্চ কুমিল্লার নাঙ্গলকোটের হাসানপুর রেলস্টেশন-সংলগ্ন ঢালুয়া ইউনিয়নের তেজের বাজার এলাকায় চট্টগ্রাম থেকে জামালপুরগামী বিজয় এক্সপ্রেস ট্রেনের নয়টি বগি লাইনচ্যুত হয়। এতে অন্তত ১৫ জন আহত হন। এরপর সময়সূচি অনুযায়ী ট্রেন চলাচল শুরু হতে তিন দিন সময় লাগে।

দুর্ঘটনার পরপরই স্টেশনমাস্টার বলেছিলেন, গরমে রেললাইন বেঁকে গিয়ে এ দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। পরদিন ১৮ মার্চ রাজবাড়ীতে রেলমন্ত্রী মো. জিল্লুল হাকিম সাংবাদিকদের বলেন, কুমিল্লার নাঙ্গলকোটে নাশকতায় বিজয় এক্সপ্রেসের নয়টি বগি লাইনচ্যুত হয়েছে। তদন্ত কমিটি ও রেলওয়ে পুলিশ প্রাথমিক তদন্তে নাশকতার কারণ খুঁজে পায়নি।

বিজয় এক্সপ্রেসের দুর্ঘটনার পর ১৩ দিনের মধ্যে রেলে বড় ধরনের আরও দুটি দুর্ঘটনা ঘটেছে। ১৮ মার্চ রাতে টাঙ্গাইলের বঙ্গবন্ধু সেতু পূর্ব রেলস্টেশনে পঞ্চগড় এক্সপ্রেস ট্রেনের একটি বগি লাইনচ্যুত হয়। ২৬ মার্চ রাতে পাবনার ঈশ্বরদী জংশন স্টেশনের রেলগেট লেভেল ক্রসিং গেটে মালবাহী দুই ট্রেনের মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এভাবে একের পর এক বড় দুর্ঘটনা ঘটায় ঈদযাত্রার সময় ট্রেন চলাচল সুষ্ঠু ও নিরাপদ রাখতে রেললাইনে পাহারা ও টহলের নির্দেশনা দিয়ে অফিস আদেশ জারি করেছে রেলওয়ের পূর্বাঞ্চল।

কুমিল্লায় বিজয় এক্সপ্রেসের দুর্ঘটনার পরদিন রেলওয়ের এক প্রকৌশলী লাকসাম রেলওয়ে থানায় একটি মামলা করেন। ট্রেন দুর্ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে ১৯ মার্চ চার কিশোরকে হেফাজতে নেয় লাকসাম পুলিশ। পরে তাদের গাজীপুর কিশোর উন্নয়ন কেন্দ্রে (সংশোধনাগার) পাঠানো হয়।

রেলওয়ের চট্টগ্রাম জেলা পুলিশ সুপার মোহাম্মদ হাছান চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, ট্রেন দুর্ঘটনার বিষয়টি এখনো তদন্তাধীন। তবে প্রাথমিকভাবে নাশকতার কিছু পাওয়া যায়নি।