দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের মোড় ঘুরিয়ে দিয়েছিল ফেনীর যে বিমানঘাঁটি

১৯৪৪ সালে নির্মিত ফেনী বিমানঘাঁটি ছিল ব্রিটিশ-মার্কিন মিত্র বাহিনীর অন্যতম বড় সামরিক স্থাপনা। বার্মায় জাপানি বাহিনীর অগ্রগতি রুখে দিতে তৈরি হয়েছিল এটি। পরিত্যক্ত এই বিমানঘাঁটিতে মোতায়েন ছিল বিমান বিধ্বংসী কামান, যুদ্ধবিমানসহ যোগাযোগের নানা গুরুত্বপূর্ণ সরঞ্জাম। সংরক্ষণ না করায় হারিয়ে গেছে কালের সাক্ষী এই বিমানঘাঁটির নানা স্থাপনা।

আকাশ থেকে তোলা ফেনী বিমানঘাঁটি১৯৪৪ সালে ছবিটি তোলেন এলমার ই ফিশার। রিমেম্বারিং শেয়ারড অনার নামের ওয়েবসাইট থেকে নেওয়া

ফেনী শহরের মূলকেন্দ্র ট্রাংক রোড থেকে দেড় কিলোমিটার দূরে উত্তর বিরিঞ্চি এলাকা। রিকশায় গেলে ভাড়া গুনতে হয় ৩০ টাকা, শেয়ারের অটোরিকশায় ১০ টাকা। উত্তর বিরিঞ্চিতে নামতেই ইট বিছানো একটি লম্বা রাস্তা। রাস্তা ধরে কিছু দূর হাঁটলে ঘরবাড়ির বাধা। মনে হবে রাস্তাটা সেখানেই শেষ, কিন্তু বাড়িঘরের সীমানা পার হলে আবারও দেখা মিলবে পুরোনো ইটের তৈরি রাস্তাটির। কোথাও কোথাও রাস্তার দুই পাশে অবারিত ধানের খেতও চোখে পড়ে।

এলাকার প্রবীণ মানুষজন জানেন, এটি আসলে সাধারণ কোনো রাস্তা নয়। দ্বিতীয় মহাযুদ্ধে ব্রিটিশ-মার্কিন মিত্র বাহিনীর অন্যতম বড় বিমানঘাঁটির রানওয়ে। পরিত্যক্ত এই বিমানঘাঁটিতে মোতায়েন ছিল বিমান বিধ্বংসী কামান, যুদ্ধবিমানসহ যোগাযোগের নানা গুরুত্বপূর্ণ সরঞ্জাম। ভারতবর্ষে জাপানি বাহিনীর অগ্রযাত্রা রুখে দিতেই তৈরি হয়েছিল বিমানঘাঁটিটি।

উত্তর বিরিঞ্চি এলাকার মতো শহরের সুলতানপুর, বারাহিপুর, মজলিশপুর, ধর্মপুর ও দেবীপুরের প্রায় সাড়ে তিন শ একর ভূমির ওপর এই বিমানঘাঁটি গড়ে উঠেছিল। এখন এটির স্থানে স্থানে আবাদ, ঘরবাড়ি গড়ে উঠেছে। আছে সরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানও।

আট দশক আগে স্থানীয় অনেকেই এই বিমানঘাঁটিতে নানা কাজে যাতায়াত করতেন। অনেকের বসতবাড়ি ছিল ঘাঁটিসংলগ্ন এলাকায়। বিমান বিধ্বংসী কামানের (অ্যান্টি এয়ারক্রাফট গান) কান ফাটানো শব্দ, কিংবা বিমান ওঠানামার দৃশ্য পরিচিত ছিল তখনকার বাসিন্দাদের মধ্যে। তবে তাঁদের কেউই আর বেঁচে নেই। কিন্তু রয়ে গেছে বিমানঘাঁটির গল্পগুলো।

গুরুত্বপূর্ণ বিমানঘাঁটি

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় যুক্তরাষ্ট্রের বিমানবাহিনী ১৯৪৪ সালে এই বিমানঘাঁটি নির্মাণ করে বলে সে দেশের সরকার প্রকাশিত ‘এয়ার ফোর্স কমব্যাট ইউনিটস অব ওয়ার্ল্ড ওয়ার টু’ বইয়ে উল্লেখ রয়েছে। ব্রিটিশ-মার্কিন মিত্রবাহিনীর ‘বার্মা অভিযানের’ গুরুত্বপূর্ণ যুদ্ধঘাঁটি ছিল এটি।  ‘যুক্তরাষ্ট্র আর্মি এয়ার ফোর্সের’ দশম বিমানবাহিনীর অপারেশনাল রেকর্ডে উল্লেখ রয়েছে, ফেনী বিমানঘাঁটি ছিল যুক্তরাষ্ট্রের দশম বিমানবাহিনীর অধীনে থাকা দ্বাদশ বোমারু দলের প্রধান ঘাঁটি। ১৯৪৪ সালের জুলাই থেকে ১৯৪৫ সালের জুন পর্যন্ত ফেনী থেকে নিয়মিত যুদ্ধ মিশন পরিচালিত হয় এই  ঘাঁটি থেকে।

এই ঘাঁটি থেকে মাঝারি পাল্লার বোমারু বিমান দিয়ে বার্মায় জাপানি বাহিনীর অবস্থানের ওপর আক্রমণ চালানো হতো। যুক্তরাষ্ট্রের আর্মি এয়ারফোর্সের যুদ্ধকালীন বিবরণে বলা হয়েছে, ওই সময় বার্মায় ব্রিটিশ চতুর্দশ সেনাবাহিনী যখন জাপানি আক্রমণের মুখে পড়ে, তখন ফেনী বিমানঘাঁটি থেকে গোলাবারুদ, অস্ত্র ও অন্যান্য সামরিক সরঞ্জাম সরবরাহ করা হয়।

‘এয়ারফোর্স কমব্যাট ইউনিটস অব ওয়ার্ল্ড ওয়ার টু’ গ্রন্থে আরও উল্লেখ রয়েছে, দ্বাদশ কমব্যাট কার্গো স্কোয়াড্রন ফেনীতে বিমান থেকে সরাসরি রসদ ও গোলাবারুদ ফেলত, যা যুদ্ধক্ষেত্রে থাকা সেনাদের জন্য ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। একই সঙ্গে ফেনী বিমানঘাঁটি ব্যবহৃত হতো সামরিক যোগাযোগ কেন্দ্র হিসেবে এবং এয়ার টেকনিক্যাল সার্ভিস কমান্ডের একটি রক্ষণাবেক্ষণ ও মেরামত ডিপো হিসেবেও। যুদ্ধকালীন সময়ে এখানেই বিমান মেরামত ও প্রযুক্তিগত সহায়তার কাজ চলত। জাপানি বাহিনীর অগ্রযাত্রা রুখে দেওয়াই কেবল নয়, বরং শত্রুর বিভিন্ন সামরিক স্থাপনা ধ্বংসেও এই ঘাঁটি অবদান রেখেছে। বলা যায়, এটি ছিল দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের মোড় ঘোরানো একটি বিমানঘাঁটি।

যুক্তরাষ্ট্র আর্মি এয়ারফোর্সের অপারেশনাল রেকর্ড অনুযায়ী, ১৯৪৫ সালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষ হওয়ার পর ফেনী বিমানঘাঁটি থেকে সামরিক কার্যক্রম গুটিয়ে নেওয়া হয়। এরপর এটি আর সক্রিয় বিমানঘাঁটি হিসেবে ব্যবহৃত হয়নি। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে রানওয়ে ও অবকাঠামো অবহেলায় নষ্ট হতে থাকে।

পেছনে বোমারু বিমান, সামনে কমান্ডো জিপে বসা কয়েকজন সৈনিক
১৯৪৪ সালের এই ছবি কাজি শামসুদ্দিনের সৌজন্যে বাংলাদেশ ওল্ড ফটো আর্কাইভ নামের ফেসবুক পেজ প্রকাশ করেছে। ছবিটি ওই ফেসবুক পাতা থেকে নেওয়া

ঝোপঝাড়ে ঢাকা পড়া দেয়াল

গত বুধবার শহরের উত্তর বিরিঞ্চি এলাকায় গিয়ে বিমানঘাঁটির ইট বিছানো রানওয়ে দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে এক জায়গায় চোখ আটকে যায়। ঝোপঝাড় আর লতায় ঢাকা পড়ে আছে প্রায় ২০ ফুট উচ্চতার একটি দেয়াল। এর ৭০০ ফুট দূরে আরও একটি দেয়ালের দেখা মিলল। দেয়ালের চারপাশে গড়ে উঠেছে বসতবাড়ি ও স্থাপনা। পুরোনো বিমানঘাঁটির এই দুটি স্মৃতিচিহ্ন এখনো টিকে আছে। জানা গেছে, এখানে বিমান রাখার হ্যাঙ্গার ছিল।

উত্তর বিরিঞ্চি এলাকায় একটি দেয়ালের পাশ ঘেঁষে নির্মিত বাড়ির উঠানে একটি মাটির চুলায় রান্নার কাজে ব্যস্ত দেখা গেল এক গৃহিণীকে। বিবি কুলসমা নামের ওই নারীর কাছে জানতে চাওয়া হয় দেয়ালগুলোর সম্পর্কে। তিনি বলেন, ‘শ্বশুরের মুখে শুনেছিলেন দেয়ালটির পাশে বিমানঘাঁটির বিমান রাখা হতো। যুদ্ধে পর তাঁর শ্বশুর পরিত্যক্ত দেয়ালের পাশে বসতি গড়ে তোলেন। দীর্ঘদিন ধরে এখানে বসবাস করলেও সম্প্রতি সেনাবাহিনী বিমানবন্দরের জায়গা অধিগ্রহণ করেছে।

বিরিঞ্চি এলাকার থাকেন স্থানীয় সাংবাদিক সাপ্তাহিক নীহারিকা পত্রিকার নির্বাহী সম্পাদক রফিকুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘মূলত বিরিঞ্চি এলাকায় বিমানবন্দরের হ্যাঙ্গার ছিল। বিমানঘাঁটির স্মৃতিচিহ্ন হিসেবে এই দুটি দেয়াল কেবল টিকে আছে। আগামী প্রজন্মকে ইতিহাস জানাতে দেয়ালগুলো সংরক্ষণ করা জরুরি। এগুলো দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সাক্ষী।’

বিরিঞ্চি থেকে কয়েক কিলোমিটার দূরে সুলতানপুর এলাকায় বিমানবন্দরের জায়গায় গড়ে উঠেছে গার্লস ক্যাডেট কলেজ। দুই দশক আগে ২০০৬ সালে ৪৯ একর জমির ওপর ক্যাডেট কলেজ নির্মিত হয়। তখন সেখানে বিমানবন্দরের স্মৃতিচিহ্ন হিসেবে তিনতলা একটি ভবন ছিল। তবে কলেজ নির্মাণের সময় সেটি বিনষ্ট হয়।

 ‘দৈনন্দিন জীবনে যুদ্ধের ধাক্কা, নিজের বাড়িতে ব্রিটিশ সৈন্যদের অবস্থান, তীব্র অভাব-ফেনীতে সে সময় নেমে এসেছিল যেন এক প্রলয়। যখন-তখন যুদ্ধবিমান হতে আক্রমণ, হত্যা, রক্ত—এর সবই দেখেছে সেময়ের মানুষজন। ইতিহাসের সাক্ষ্য হয়ে এখন স্মৃতিচিহ্ন রয়ে গেছে ফেনীর একাধিক স্থানে।’  
কাজী এবাদুল হক প্রয়াত বিচারপতি ও লেখক।

যুদ্ধের দামামা

বাংলাদেশ থেকে প্রকাশিত একাধিক বইয়ে ফেনী বিমানঘাঁটির উল্লেখ রয়েছে। ১৯৮৯ সালে ‘সমতট প্রকাশনী’ থেকে প্রকাশিত জমির আহমেদের ‘ফেনীর ইতিহাস’ গ্রন্থে ফেনীর বিমানটি ও যুদ্ধ নিয়ে অনেক তথ্য রয়েছে।

জমির আহমেদ তাঁর বইয়ে উল্লেখ করেছেন, ‘দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের রণ দামামার বিকট শব্দে ফেনীর মতো নিভৃত পল্লি বেসামাল হয়ে পড়ে। জাপানি আগ্রাসনে বার্মার পতন ঘটলে শত্রুপক্ষ ফেনী-চট্টগ্রামের উপকণ্ঠে পৌঁছে যায়। শত্রুপক্ষের আগ্রাসন প্রতিহত করার জন্য ফেনী অঞ্চলে মিত্র বাহিনী অগ্রবর্তী ঘাঁটি স্থাপন করে। শহর ও পল্লি অঞ্চলের এখানে-সেখানে সেনা ছাউনি স্থাপন করা হয়। ফেনী অঞ্চল সহসা একটা রণক্ষেত্রের রূপ ধারণ করে। কর্তৃপক্ষ হাজার হাজার মানুষকে ঘরবাড়ি ছেড়ে অন্যত্র সরে যেতে নির্দেশ দেয়। জাপানি বিমান হামলার আশঙ্কায় ঘনবসতিপূর্ণ জনপদ সহসা জনমানবশূন্য হয়ে পড়ে। ফেনী কলেজ ও ফেনী হাইস্কুল ভবনে মিত্র বাহিনীর ক্যাম্প স্থাপন করা হয়। ফেনী কলেজকে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় স্থানান্তরিত করা হয়।’

প্রয়াত বিচারপতি কাজী এবাদুল হকের আত্মজীবনীতে ফেনী বিমানঘাঁটির কথা উঠে এসেছে। ২০১৬ সালে প্রকাশিত ‘ফেলে আসা সেই সব দিনের কথা’ বইয়ে এবাদুল হক লেখেন, ‘দৈনন্দিন জীবনে যুদ্ধের ধাক্কা, নিজের বাড়িতে ব্রিটিশ সৈন্যদের অবস্থান, তীব্র অভাব—ফেনীতে সে সময় নেমে এসেছিল যেন এক প্রলয়। যখন-তখন যুদ্ধবিমান হতে আক্রমণ, হত্যা, রক্ত—এর সবই দেখেছে সেময়ের মানুষজন।’

ধ্বংস হয়ে গেছে সব স্মৃতিচিহ্ন। কেবল টিকে আছে ঝোপে ঢেকে যাওয়া দুটি হ্যাঙ্গার ওয়াল। ফেনী বিমানঘাটির ২০ ফুট উঁচু এমন একটি হ্যাঙ্গার ওয়াল। শহরের উত্তর বিরিঞ্চি এলাকায়।
ছবি: প্রথম আলো
যুক্তরাষ্ট্রের বিমানবাহিনী ১৯৪৪ সালে এই বিমানঘাঁটি নির্মাণ করে বলে সে দেশের সরকার প্রকাশিত ‘এয়ার ফোর্স কমব্যাট ইউনিটস অব ওয়ার্ল্ড ওয়ার টু’ বইয়ে উল্লেখ রয়েছে। ব্রিটিশ-মার্কিন মিত্রবাহিনীর বার্মা অভিযানের গুরুত্বপূর্ণ যুদ্ধঘাঁটি ছিল এটি। যুক্তরাষ্ট্র আর্মি এয়ার ফোর্সের দশম বিমানবাহিনীর অপারেশনাল রেকর্ডে উল্লেখ রয়েছে, বার্মা ফ্রন্টের কাছাকাছি হওয়ায় এবং কৌশলগতভাবে নিরাপদ অবস্থানের কারণে ফেনীকে বিমানঘাঁটির জন্য নির্বাচন করা হয়। এখান থেকে বার্মায় অভিযান পরিচালনা করা তুলনামূলক সহজ ছিল।

কাজী এবাদুল হকের বই থেকে জানা যায়, ১৯৪৩ সালের ১ এপ্রিল ফেনী শহরে জাপানি বিমান হামলা হয়। ওই দিন ছিল ফেনীতে হাটবার। জনসমাগমের কোনো কমতি ছিল না। যুদ্ধাবস্থা থাকলেও ফেনীতে কোর্ট কাছারি ও সরকারি অফিস-আদালত চালু ছিল। শুধু স্কুল, কলেজগুলো অন্যত্র সরিয়ে নেওয়া হয়েছিল। জাপানি বিমান তাদের ঘাঁটি থেকে আকাশে উঠলে ফেনীতে বিপৎসংকেত (ডেঞ্জার সাইরেন) বাঁশি বাজানো হয়। সেদিন ডেঞ্জার সাইরেন বেজে উঠলে ফেনী শহরে আগত লোকজন পড়িমরি করে শহরের বাইরে আশপাশে আশ্রয় গ্রহণ করে। অল্পক্ষণ পরে ক্লিয়ার সাইরেন বেজে উঠলে সকলে আবার শহরে সমাগত হয়। কিন্তু কিছুক্ষণ পর আবার ডেঞ্জার সাইরেন বেজে উঠলে লোকজন তা অগ্রাহ্য করে শহরে থেকে যান। অল্প কিছুক্ষণ পর জাপানি বিমান থেকে বোমাবর্ষণ শুরু হয়। জাপানি বোমারু বিমান বিতাড়নের জন্য ফেনী শহরের আশপাশের গ্রামগুলোয় পাহাড়ের মতো মাটির উঁচু ঢিবি করে সেখানে বিমান বিধ্বংসী কামান পাতা হয়েছিল। গোলন্দাজকে কামানের সঙ্গে লোহার শৃঙ্খলে তালাবদ্ধ করে রাখা হতো। তা ছাড়া ফেনী বিমানঘাঁটির পাশে স্তূপাকারে বোমা জমা করে রাখা হয়েছিল।

প্রয়াত সাংবাদিক এবিএম মূসার আত্মজীবনী ‘আমার বেলা যে যায়’ বইয়ে তালগাছের কামান শীর্ষক একটি লেখা রয়েছে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ফেনীসহ আশপাশের চিত্র পাওয়া যায় ওই লেখায়। তাঁর মৃত্যুর পর প্রথমা প্রকাশন এ আত্মজীবনী প্রকাশ করে (২০১৪)।

বইয়ের এক জয়গায় মূসা লিখেছেন, ‘শান্তির হাটে গিয়ে টের পেলাম, যুদ্ধ চলছে, যে যুদ্ধ আমি চাটগাঁ শহরে ফেলে এসেছি। ওপারে ফেনীর সোনাগাজী থানার বুভূড়িয়া ঘাট। এপার থেকে দেখলাম, সেখানে ছোট একটি বিমানঘাঁটি। নৌকায় নদী পার হয়ে সেখানে দেখতে পেলাম অনেকগুলো ব্রিটিশ জঙ্গি বিমান, সেগুলোর ছিল এক ইঞ্জিনের প্রপেলার বা ডানা। যুদ্ধের পর এই ফাইটার উড়োজাহাজগুলোকে যাত্রীবাহী বিমানে পরিণত করা হয়েছিল। তখন নাম হয়েছিল ডাকোটা বা ডিসি থ্রি। এ রকম একটি উড়োজাহাজেই আমার প্রথম বিমানভ্রমণের অভিজ্ঞতা হয়েছিল পাকিস্তান আমলে। সেই বিমান যাত্রীসেবায় নিয়োজিত ছিল।’