সিরাজদিখানের পাতক্ষীর পেল জিআই পণ্যের স্বীকৃতি
ভৌগোলিক নির্দেশক (জিআই) পণ্যের স্বীকৃতি পেয়েছে মুন্সিগঞ্জের সিরাজদিখান উপজেলার দুগ্ধজাতীয় মিষ্টান্ন পাতক্ষীর। এটি জেলার প্রথম জিআই পণ্য। আজ বুধবার বিকেলে রাজধানীর বেইলি রোডে ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে আয়োজিত অনুষ্ঠানে পাতক্ষীরকে জিআই পণ্য ঘোষণা ও সনদ দেওয়া হয়।
বিশ্ব মেধাসম্পদ দিবস উপলক্ষে ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে পেটেন্ট, শিল্প-নকশা ও ট্রেডমার্কস অধিদপ্তর আয়োজিত অনুষ্ঠানে পাতক্ষীরের জিআই পণ্যের সনদ গ্রহণ করেন মুন্সিগঞ্জের জেলা প্রশাসক ফাতেমা তুল জান্নাত। অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন শিল্প ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান, সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী প্রমুখ। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন শিল্প মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. ওবায়দুর রহমান।
মুন্সিগঞ্জের জেলা প্রশাসক ফাতেমা তুল জান্নাত বলেন, বহু প্রজন্ম ধরে মুন্সিগঞ্জের সিরাজদিখানের সন্তোষপাড়া গ্রামের কারিগরদের নিপুণ হাতে তৈরি হচ্ছে সুস্বাদু পাতক্ষীর। পাতক্ষীর মুন্সিগঞ্জবাসীর সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের অংশ হয়ে উঠেছে, যা বিশ্বব্যাপী সমাদৃত। দুধ, সামান্য হলুদগুঁড়া ও চিনি দিয়ে প্রস্তুত করা পাতক্ষীরের স্বাদ, গন্ধ ও গুণগত বৈশিষ্ট্য একে দেশের অন্যান্য মিষ্টান্ন থেকে স্বতন্ত্র করে তুলেছে। আনুষ্ঠানিক জিআই সনদপ্রাপ্তির মধ্য দিয়ে এই পণ্যের মান ও স্বাতন্ত্র্য স্বীকৃতি পেল। এটি জেলার একমাত্র জিআই পণ্য, যা স্থানীয় উৎপাদকদের জন্য গর্বের।
পাতক্ষীর বানাতে দুধ পাতিলে ঢেলে দীর্ঘ সময় ধরে জ্বাল দিতে দিতে কাঠের চামচ দিয়ে নাড়তে হয়, যাতে পাতিলের তলায় দুধ লেগে না যায়। এরপর দুধ ঘন হয়ে এলে সামান্য হলুদ ও পরিমিত পরিমাণ চিনি মিশিয়ে চুলা থেকে নামানো হয়।
২০২৪ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি পাতক্ষীরের জিআই পণ্যের স্বীকৃতি পেতে মুন্সিগঞ্জের তৎকালীন জেলা প্রশাসক আবু জাফর রিপন আবেদন করেছিলেন।
রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতিতে সন্তোষপাড়া গ্রামের পাতক্ষীরের কারিগরেরা আনন্দিত। পাতক্ষীর তৈরির কারিগরেরা জানান, বংশ পরম্পরায় ২০০ বছর ধরে তাঁরা পাতক্ষীর তৈরি করে আসছেন। স্বাদ–গন্ধের কারণে এর সুখ্যাতি ছড়িয়ে পড়ে দেশের বাইরেও। তবে তাঁরা (পাতক্ষীর কারিগর) কখনো ভাবেননি তাঁদের এই অজগ্রামের পণ্যটি জিআই স্বীকৃতি পাবে। এ স্বীকৃতি তাঁদের জন্য গৌরবের।
পাতক্ষীরের কারিগর ও রশুনিয়া ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য জয়ন্ত ঘোষ বলেন, সিরাজদিখান বাজারে তাঁদের প্রতিষ্ঠান রাজলক্ষ্মী মিষ্টান্ন ভান্ডারে বিক্রি হয় পাতক্ষীর। ইউরোপ-আমেরিকার বাঙালি কমিউনিটির অনেক দোকান বা সুপারশপেও বিক্রি করা হয় সিরাজদিখানের পাতক্ষীর। এ ছাড়া শীতকালে নতুন জামাইকে পিঠাপুলির সঙ্গে এই ক্ষীর খেতে দেওয়া সিরাজদিখানের মানুষের দীর্ঘদিনের রীতি। শীতকালে পাতক্ষীরের চাহিদা বেশি থাকে।
বর্তমানে ৮০০ থেকে ১ হাজার টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে পাতক্ষীর।
সিরাজদিখানের মহাগুরু মিষ্টান্ন ভান্ডারের স্বত্বাধিকারী সুশান্ত ঘোষ বলেন, পাতক্ষীর বানাতে দুধ পাতিলে ঢেলে দীর্ঘ সময় ধরে জ্বাল দিতে দিতে কাঠের চামচ দিয়ে নাড়তে হয়, যাতে পাতিলের তলায় দুধ লেগে না যায়। এরপর দুধ ঘন হয়ে এলে সামান্য হলুদ ও পরিমিত পরিমাণ চিনি মিশিয়ে চুলা থেকে নামানো হয়। পরিমাণের অনুপাত যদি ধরা হয় তাহলে ৩০ লিটার দুধে ৭৫০ গ্রাম চিনি ও দুই চা চামচ হলুদ বাটা মিশিয়ে তিন থেকে চার ঘণ্টা আগুনে জ্বাল দেওয়া হয়। ৩০ লিটার দুধ থেকে ৫ থেকে সাড়ে ৫ কেজি পাতক্ষীর তৈরি হয়।