সবার জন্য খুলে গেল সুন্দরবন

সুন্দরবন
ফাইল ছবি

দীর্ঘ তিন মাস বন্ধ থাকার পর খুলে দেওয়া হয়েছে সুন্দরবন। এর ফলে পর্যটক, মৎস্যজীবী ও বনজীবীরা অনুমতি নিয়ে সুন্দরবনে প্রবেশ করতে পারছেন। গতকাল বুধবার রাত ১২টার পর থেকে সুন্দরবনে প্রবেশ সবার জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়।

গতকাল রাতেই খুলনা থেকে ৭৫ পর্যটক নিয়ে একটি জাহাজ সুন্দরবনের উদ্দেশে রওনা হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার সকালের দিকে গেছে আরেকটি জাহাজ। এর বাইরে আগামীকাল শুক্রবার ২৫০ পর্যটক নিয়ে আরও ছয়টি জাহাজ সুন্দরবনের উদ্দেশ্যে খুলনা ছাড়বে। ভোর থেকেই সুন্দরবনে মাছ ধরতে যাওয়ার আশায় শত শত জেলে পাস (অনুমতিপত্র) নেওয়ার জন্য ফরেস্ট স্টেশনগুলোতে ভিড় করছেন।

জীববৈচিত্র্য রক্ষা, বন্য প্রাণী ও মাছের প্রজনন মৌসুম হওয়ায় জুন থেকে আগস্ট মাসের শেষ পর্যন্ত সুন্দরবনে পর্যটন থেকে শুরু করে সব ধরনের কার্যক্রম বন্ধ রাখে বন বিভাগ। মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী গত কয়েক বছর থেকে ওই কার্যক্রম চলছে। তিন মাস বন্ধ থাকার পর ১ সেপ্টেম্বর সেটি আবার খুলে দেওয়া হয়।

সুন্দরবন ট্যুর অপারেটরদের সংগঠন ‘ট্যুর অপারেটরস অ্যাসোসিয়েশন অব সুন্দরবন’–এর সাধারণ সম্পাদক এম নাজমুল আজম সকালে প্রথম আলোকে বলেন, গতকাল রাতেই একটি জাহাজ ৭৫ পর্যটক নিয়ে সুন্দরবনের উদ্দেশ্যে ছেড়ে গেছে। আজ সকালে একটি জাহাজ ৪০ অভিনয়শিল্পীকে নিয়ে সুন্দরবন যাত্রা করেছে। এ ছাড়া কাল খুলনা থেকে আরও ছয়টি জাহাজ ২৫০ জন দেশি-বিদেশি পর্যটক নিয়ে সুন্দরবনে যাবে। তিনি বলেন, এখন পর্যটন মৌসুম না হলেও মানুষের মধ্যে সুন্দরবন ভ্রমণের একটি আগ্রহ সব সময়ই রয়েছে। সারা বছরই মানুষ সুন্দরবন ভ্রমণ করতে চান। তবে মূল মৌসুম শুরু হয় অক্টোবরের মাঝামাঝি থেকে, চলে মার্চের মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত। বর্তমানে ওই মৌসুম ধরার জন্য ট্যুর অপারেটরগুলো প্রস্তুত হচ্ছে।

এদিকে বনে মাছ ধরতে যাওয়ার জন্য সকাল থেকে ফরেস্ট স্টেশনগুলোতে ভিড় করছেন মৎস্যজীবীরা। পাইকগাছার গড়াইখালী গ্রামের মো. মুসা পাস নেওয়ার আশায় ভোর থেকে বসে ছিলেন নলিয়ান ফরেস্ট স্টেশন ঘাটে। তিনি বলেন, বনে মাছ ধরেই সংসার চলে। দীর্ঘদিন বন্ধ থাকায় সংসার চালাতে কষ্ট হয়েছে। বিভিন্ন জায়গায় দিনমজুরি করে সংসার চালাতে হয়েছে। বন বন্ধ থাকায় নদী-খালে প্রচুর মাছ আছে। প্রথম দিকে ধরতে পারলে প্রচুর মাছ পাওয়া যাবে। এ কারণে ভোরেই পাস নেওয়ার জন্য চলে এসেছেন।

সুন্দরবন পশ্চিম বন বিভাগের কালাবগী স্টেশন কর্মকর্তা জহিরুল ইসলাম বলেন, রাতেই অনেক জেলে স্টেশন ঘাটে চলে এসেছেন। তবে সকালে সবাইকে নিয়ে বৈঠক করে বিএলসি ও নৌকা যাচাই-বাছাই করে পাস দেওয়া শুরু করা হয়েছে।

সুন্দরবন পশ্চিম বন বিভাগের কালাবগী ফরেস্ট স্টেশনে বনে যাওয়ার অনুমতি নিতে ঘাটে আসা জেলেদের নৌকা। আজ বৃহস্পতিবার সকালে
ছবি: প্রথম আলো

খুলনা অঞ্চলের বন সংরক্ষক মিহির কুমার দো বলেন, সুন্দরবনেরও কিছুটা বিশ্রাম দরকার। সারা বছর পর্যটক, জেলে ও বনজীবীদের পদচারণায় বিরক্ত থাকে বন্য প্রাণীরা। ওই তিন মাস বন্ধ থাকায় বন আবার স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসে। গত কয়েক বছর ওই কার্যক্রম চালু থাকায় বনে বাঘ, হরিণসহ অন্যান্য বন্য প্রাণীর সংখ্যা বেড়েছে বলে তাঁর দাবি।