ন্যায্যমূল্যে পণ্য কিনতে সিলেটে চালু হলো ‘রমজান বাজার’

রমজান মাস উপলক্ষে সিলেট চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির আয়োজনে নগরের আলীয়া মাদ্রাসা মাঠে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের ন্যায্য মূল্যের দোকান উদ্বোধন করা হয়েছেছবি: প্রথম আলো

সারিবদ্ধভাবে নারী ও পুরুষেরা দাঁড়িয়ে আছেন। একজনের পর একজন গিয়ে কিনছেন প্রয়োজনীয় পণ্যসামগ্রী। মূলত বাজারদরের চেয়ে কম দামে এসব সামগ্রী বিক্রি হচ্ছে। আর তা কিনতেই ভিড় করছেন মানুষ। সিলেট চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির উদ্যোগে পরিচালিত এ কার্যক্রমের নাম দেওয়া হয়েছে ‘রমজান বাজার’।

নগরের চৌহাট্টা এলাকার সরকারি আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে রমজান বাজার চলছে। পবিত্র রমজান মাসকে সামনে রেখে চেম্বার কর্তৃপক্ষ জেলা প্রশাসন, পুলিশ ও সিটি করপোরেশনের সহযোগিতায় এ কার্যক্রম পরিচালনা করছে। আজ মঙ্গলবার বেলা দুইটায় কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন সিটি মেয়র মো. আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী।

চেম্বার-সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানিয়েছেন, রমজান বাজার নামের বিক্রয়কেন্দ্র থেকে রমজান মাসজুড়ে বেলা ১১টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত নিত্যপ্রয়োজনীয় বিভিন্ন পণ্য বিক্রি করা হবে। ভোক্তাদের ন্যায্যমূল্যে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য সরবরাহ করতেই এমন উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। নারী ও পুরুষেরা পৃথক দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে কেনাকাটা সারতে পারবেন। পণ্য বিক্রি করতে মোট ১২ জন কর্মী সার্বক্ষণিক কাজ করছেন।
কার্যক্রমের উদ্বোধনী পর্বে সভাপতিত্ব করেন চেম্বারের সভাপতি তাহমিন আহমদ। অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন সিলেটের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শেখ মো. সেলিম, চেম্বারের সহসভাপতি মো. এমদাদ হোসেন, সহসভাপতি এহতেশামুল হক চৌধুরী, পরিচালক মুজিবুর রহমান, ফাহিম আহমদ চৌধুরী, দেবাংশু দাস, সারোয়ার হোসেন, মো. রিমাদ আহমদ, মো. মাহবুবুল হাফিজ চৌধুরী, সাবেক পরিচালক মো. আবদুর রহমান জামিল, দেশ ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান মিসবাউর রহমান প্রমুখ।

উদ্বোধনী পর্বে মেয়র মো. আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী বলেন, রমজান বাজার চালু হওয়ায় নগরবাসীর কষ্ট কিছুটা হলেও দূর হবে। চেম্বারের সভাপতি তাহমিন আহমদ বলেন, প্রতিবছর রমজান মাস এলেই কিছু অসাধু ব্যক্তি সিন্ডিকেট সৃষ্টির মাধ্যমে বাজারে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের কৃত্রিম সংকট তৈরি করে দ্রব্যের মূল্যবৃদ্ধির পাঁয়তারা করে থাকেন। এ ছাড়া ভেজাল পণ্য মজুত ও ভোক্তাদের কাছে বিক্রির অভিযোগ প্রায়ই পাওয়া যায়। এটা চিন্তা করে ভোক্তাসাধারণকে ন্যায্যমূল্যে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য সরবরাহ করতে এ বিক্রয়কেন্দ্র চালু হয়েছে।
রমজান বাজার উদ্বোধন হওয়ার পর বেলা তিনটার দিকে সরেজমিন দেখা যায়, নারী ও পুরুষেরা সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে পণ্য কেনাকাটা করছেন। ক্রেতারা এখানে প্রতি কেজি পেঁয়াজ ৬৫ টাকা, রসুন ১৬০ টাকা, ছোলা ৯০ টাকা, মুসর ডাল ৯৫ টাকা, তেল ১২৫ টাকা, আদা ১৫০ টাকা, আলু ২৫ টাকা ও খেসারি ডাল ১০০ টাকায় কিনছেন। কয়েক দিনের মধ্যে পণ্য বিক্রির তালিকায় আদা, ময়দাসহ আরও পণ্য যুক্ত হবে বলে বিক্রয়কর্মীরা জানিয়েছেন।

সারিতে দাঁড়িয়ে থাকা আকমল মিয়া নামের পঞ্চাশোর্ধ্ব এক ব্যক্তি বলেন, চেম্বারের উদ্যোগে ন্যায্যমূল্যে প্রয়োজনীয় পণ্য বিক্রি করার বিষয়টি ভোক্তারা খুবই ভালোভাবে নিয়েছেন। যেখানে এক শ্রেণির ব্যবসায়ীরা রমজান মাস এলেই পণ্যের দাম অযথাই বাড়িয়ে দেন, এখানে এমন ইতিবাচক উদ্যোগ প্রশংসার দাবি রাখে।
সাজেদা বেগম (৪৪) নামের আরেক ক্রেতা বলেন, কম দামে মানসম্মত পণ্য এখানে মিলছে। এ বাজার চালু হওয়ায় অন্যান্য বছরের মতো এবারের রমজান মাসে বেশি দামে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য কেনার ভোগান্তি থেকে রেহাই পাওয়া যাবে।
সিলেট চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি তাহমিন আহমদ প্রথম আলোকে বলেন, উদ্বোধনী দিনেই রমজান বাজার দারুণ সাড়া ফেলেছে। সারিতে অনেক মানুষ পণ্য কেনার জন্য দাঁড়িয়ে আছেন। তবে এ বাজারের বিষয়টি প্রচারিত হওয়ার পর ধীরে ধীরে আরও ক্রেতারা নিশ্চয়ই ভিড় করবেন। এ ছাড়া ভোক্তাদের চাহিদা অনুযায়ী অন্যান্য পণ্যও এখানে এনে ন্যায্যমূল্যে বিক্রি করা হবে।