দিনাজপুরের হিলিতে সড়কের ধুলায় চরম দুর্ভোগ

দিনাজপুরের হিলি শহর ধুলামুক্ত করার দাবিতে হাকিমপুরের সর্বস্তরের জনগণের ব্যানারে হিলি স্থলবন্দরের সিপি রোডে মানববন্ধন হয়েছে।

অসমাপ্ত রাস্তার কাজ দ্রুত বাস্তবায়ন এবং ধুলামুক্ত হিলির দাবিতে মিছিল করেছেন হাকিমপুর উপজেলার সর্বস্তরের মানুষছবি: সংগৃহীত

দিনাজপুরের হিলি স্থলবন্দরে আমদানি-রপ্তানি কাজে নিয়োজিত গাড়ি চলাচলের কারণে হিলি শহরের বিভিন্ন রাস্তায় ধুলা ওড়ায় নাকাল স্থানীয় লোকজন। হিলি স্থলবন্দরে চার লেনের সড়ক নির্মাণে ধীরগতির কারণে রাস্তায় ধুলার পরিমাণ বেড়েছে। 

এই পরিস্থিতিতে ‘অসমাপ্ত রাস্তার কাজ দ্রুত বাস্তবায়ন চাই ও ধুলামুক্ত হিলি চাই’ স্লোগান নিয়ে বন্দর এলাকায় মানববন্ধন করেছেন স্থলবন্দর ও আশপাশের বাসিন্দারা। হিলি স্থলবন্দরকে ধুলামুক্ত করতে ঝাড়ু হাতে নিয়ে সড়কের ধুলা পরিষ্কার অভিযানে অংশ নিয়েছেন বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ।

গত শনিবার সকাল ১০টায় হিলি স্থলবন্দরের সিপি রোডে হাকিমপুরের সর্বস্তরের জনগণের ব্যানারে এ কর্মসূচির আয়োজন করা হয়। পরে স্থানীয় মানুষেরা একটি মিছিল নিয়ে শহরের সিপি রোড থেকে চারমাথা মোড় ও চারমাথা থেকে উপজেলা পরিষদ সড়ক প্রদক্ষিণ করেন। 

সড়ক ও জনপথ (সওজ) সূত্রে জানা যায়, হিলির ইমিগ্রেশন চেকপোস্ট থেকে পানামা পোর্ট লিংক লিমিটেডের ৩ নম্বর ফটক পর্যন্ত ও চারমাথা মোড় থেকে হাকিমপুর মহিলা কলেজ পর্যন্ত ২ দশমিক ২৫০ কিলোমিটার সিসি ঢালাই এবং আড়াই কিলোমিটার নালা নির্মাণ হবে। এ জন্য সড়কের পাশে বেশ কিছু জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে। সড়ক নির্মাণ প্রকল্পে ব্যয় হবে ৩১ কোটি ৯০ লাখ টাকা। নির্মাণকাজের দায়িত্ব পায় ন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং (এনডিই) নামের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান।

নওজ সূত্রে জানা গেছে, ফোর লেন সড়ক ও ড্রেন নির্মাণের কাজ ২০২২ সালের ১৮ এপ্রিল শুরু হয়ে ১০ মাসের মধ্যে কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল। তবে কাজ শুরু হয় দেরিতে। ২০২২ সালের অক্টোবরের শেষের দিকে সড়কের কার্পেটিং তুলে ফেলা হয় এবং সড়কের দুই পাশের স্থাপনা ভেঙে ফেলা হয়। ওই সালের ৬ ডিসেম্বর সেখানে ফোর লেন সড়ক নির্মাণকাজের উদ্বোধন করা হয়। পরে সড়কের এক পাশে ঢালাইয়ের কাজও শুরু হয়। এরপর অদৃশ্য কারণে কাজে শুরু হয় ধীরগতি। এতে সড়ক ও বন্দরে আমদানি-রপ্তানি কাজে চলাচল করা গাড়ির চাকার ধুলাতে বন্দরের সড়ক ধুলামাটিতে ভরে যায়। ভোগান্তিতে পড়েন পথচারী, স্থানীয় ও দূরপাল্লার পরিবহন এবং আমদানি-রপ্তানি কাজে ব্যবহৃত ভারী যানবাহন। সড়কে ধুলার কারণে সড়কের পাশের হোটেলমালিক ও অন্য দোকানদারেরা ক্রেতাসংকটে পড়ে ব্যবসায় লোকসান গুনছেন। সড়ক দিয়ে চলাচল করা বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থী ও শিক্ষকেরাও পড়েন ভোগান্তিতে।

এ ভোগান্তি থেকে মুক্তি পেতে বিভিন্ন সময়ে মানববন্ধন করেছেন স্থানীয় ব্যবসায়ী ও সচেতনমহল। ২০২৩ সালের ১০ জুলাই সকাল সাড়ে ১০টায় উপজেলা ১০টি সংগঠনের শীর্ষস্থানীয় নেতা-কর্মী, সদস্য ও স্থানীয় সাধারণ নাগরিক হিলি স্থলবন্দরের পানামা পোর্ট লিংক লিমিটেড থেকে সিপি রোডের চারমাথা মোড় পর্যন্ত অবস্থান নেন।

হিলি স্থলবন্দরে ফোর লেন সড়কের কাজ দ্রুত বাস্তবায়নের জন্য সরকারি বিভিন্ন দপ্তরে দিনের পর দিন ঘুরেছেন স্থানীয় সচেতন মানুষ। ওই সব দপ্তর থেকে কাজ বাস্তবায়নের আশ্বাস দিলেও শেষ পর্যন্ত কেউ কথা রাখেননি। কাজ শুরুর পর থেকে রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ি করায় অল্প বৃষ্টিতে সড়কের বিভিন্ন অংশে জলাবদ্ধতা ও খানাখন্দের সৃষ্টি হয়। এতে ব্যাহত হচ্ছে আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম।

ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের (এনডিই) প্রতিনিধি উপপ্রকৌশলী সোহেল রানা বলেন, ‘হিলি স্থলবন্দরের ফোর লেন সড়ক নির্মাণে সড়কের দুই পাশে জমি অধিগ্রহণে জটিলতা চলছে। আমরা তো কাজ করার জন্যই বসে আছি। জমি অধিগ্রহণ না হলে আমাদের কী করার আছে, বরং কাজ না করে বসে থাকায় আমাদের ব্যয় বাড়ছে।’