ফটক ও ফুটপাতজুড়ে অবৈধ দোকানপাট

ফটক ও ফুটপাতজুড়ে অবৈধ ১৭টি দোকানপাট গড়ে উঠেছে। অবৈধ স্থাপনা সরিয়ে নিতে দুই দফা নোটিশ দিয়েছে পৌর কর্তৃপক্ষ।

ঠাকুরগাঁওয়ের পীরগঞ্জ ৫০ শয্যার হাসপাতালের দুটি মূল ফটকসহ সামনের জায়গায় গড়ে ওঠা অবৈধ দোকানপাট, হোটেল, চা-বিস্কুটের দোকানসহ স্থাপনা
ছবি: প্রথম আলো

ঠাকুরগাঁওয়ের পীরগঞ্জ ৫০ শয্যা হাসপাতালের মূল ফটক ও সীমানাপ্রাচীর লাগোয়া ফুটপাতজুড়ে অবৈধ দোকানপাটে ভরে গেছে। হাসপাতালের দক্ষিণ সীমানাপ্রাচীর থেকে উত্তরে আনসার-ভিডিপি কার্যালয় পর্যন্ত দখলদারেরা ১০ থেকে ২০ বছরে এসব দোকানপাট বানিয়েছেন। অবৈধ দোকানপাটের কারণে হাসপাতালের মূল ফটক ও উত্তর দিকে ২ নম্বর ফটক পর্যন্ত প্রায় সময় যানজট তৈরি হয়। এতে জরুরি ও মুমূর্ষু রোগী আনা-নেওয়ায় প্রায় সময়ই জটিলতা দেখা দিচ্ছে।

পৌরসভা কর্তৃপক্ষ অবৈধ দোকানপাট উচ্ছেদে দখলদার প্রথম দফা নোটিশ দিয়েছে। কিন্তু দখলদারেরা তাঁদের দোকানপাট সরিয়ে নেননি। তাঁরা উচ্ছেদ অভিযান না চালাতে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে লিখিত আবেদন ও পৌর মেয়রের সঙ্গে দেখা করেছেন। পৌর মেয়র তাঁদের সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, অবৈধ স্থাপনা সরিয়ে নিতেই হবে।

উপজেলা স্বাস্থ্যসেবা উন্নয়ন কমিটির সদস্য ও পীরগঞ্জ পৌরসভার মেয়র বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. ইকরামুল হক প্রথম আলোকে বলেন, অবৈধ স্থাপনা সরিয়ে নিতে ১৭ জন দোকানদারকে গত ২৩ আগস্ট সাত দিনের নোটিশ দেওয়া হয়। কিন্তু তাঁরা অবৈধ দোকানপাট সরিয়ে নিতে ব্যর্থ হওয়ায় গত রোববার দ্বিতীয় দফা নোটিশ দেওয়া হয়েছে। তিনি আরও বলেন, ‘দখলদারেরা পৌরসভায় এসে দেখা করেছিলেন, কিন্তু কোনো লিখিত কাগজ দেননি। আমি তাঁদের জানিয়ে দিয়েছি, আজ কিংবা কাল দোকান সরাতেই হবে।’

■ অবৈধ ভাতের হোটেল ও চায়ের দোকানের বর্জ্যে হাসপাতালের সীমানাপ্রাচীর লাগোয়া জায়গাগুলো বর্জ্যে ভরে উঠেছে।

■ অবৈধ দোকানের আড়ালে মূল ভবন ও প্রয়োজনীয় সাইনবোর্ডগুলো হারিয়ে গেছে।

সরেজমিনে দেখা গেছে, হাসপাতালের ফটক ও পূর্ব দিকে পাকা সড়কের ফুটপাতজুড়ে ভাতের হোটেল, চায়ের দোকান, মুদিদোকানসহ অবৈধ দখলদারদের ১৭টি দোকান গড়ে উঠেছে। দখলদারদের গড়ে ওঠা স্থাপনায় আড়াল হয়ে গেছে হাসপাতালের বিলবোর্ড। এ ছাড়া অবৈধ ভাতের হোটেল ও চায়ের দোকানের বর্জ্যে হাসপাতালের সীমানাপ্রাচীর লাগোয়া জায়গাগুলো বর্জ্যে ভরে উঠেছে।

হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের অভিযোগ, অবৈধ দোকানপাটের কারণে হাসপাতালের ফটকে সব সময় ভিড় ও যানজট লেগেই থাকে। এতে জরুরি ও ‍মুমূর্ষু রোগীদের হাসপাতালে আনা-নেওয়ায় সমস্যা হচ্ছে। এ জন্য অবৈধ দোকানগুলো দ্রুত অপসারণ করা জরুরি হয়ে পড়ে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রেজিয়া বেগম, রূপবান বেগম, শুভ ও সুজন আলী, হজরত, সুনীল, করিমুল, মান্নান, লাকিসহ ১৭ জন দোকানদার এসব স্থাপনা বানিয়ে ব্যবসা করছেন। হাসপাতালের ১ নম্বর ফটকের পাশে চা-পরোটার দোকানদারেরা জানান, তাঁরা পাঁচ-সাত বছর আগে দখলদারের কাছ থেকে এক লাখ টাকার বিনিময়ে অবস্থান (পজিশন) কিনে নিয়ে দোকান করে সংসার চালাচ্ছেন। তাঁরা উচ্ছেদ না করতে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে লিখিত আবেদন করেছেন।

ভাতের হোটেলমালিক ও ভাকুড়া গ্রামের বাসিন্দা শের আলী প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি ভাতের দোকান চালিয়ে ১২ বছর চারজন কর্মচারীর বেতন দিই এবং নিজের সংসার চালাই। এই দোকান তুলে দিলে আমরা না খেয়ে মরব।’

হাসপাতালের স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা আবদুল জব্বার বলেন, দীর্ঘ দিন ধরে হাসপাতালের সামনে অবৈধ স্থাপনা গড়ে উঠেছে। এ কারণে হাসপাতালে রোগী আনা-নেওয়াসহ অন্যান্য শৃঙ্খলা বিঘ্নিত হচ্ছে। অবৈধ দোকানের আড়ালে মূল ভবন ও প্রয়োজনীয় সাইনবোর্ডগুলো হারিয়ে গেছে। শৃঙ্খলার স্বার্থে অবৈধ দোকানগুলো শিগগিরই অপসারণ করা দরকার।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও উপজেলা স্বাস্থ্যসেবা উন্নয়ন কমিটির সদস্য মো. সাহরিয়ার নজির বলেন, হাসপাতালে দালালদের আড্ডা ও অসাধু চোরাকারবারিদের দৌরাত্ম্য প্রতিহত করতে এবং হাসপাতাল এলাকায় পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে স্বাস্থ্যসেবা উন্নয়ন কমিটির সভার সিদ্ধান্ত মোতাবেক পৌর মেয়র সাত দিনের আলটিমেটাম দিয়ে দখলদারদের স্থাপনা সরিয়ে নিতে নোটিশ দিয়েছিলেন। কিন্তু তাঁরা স্থাপনা সরিয়ে নেননি। পৌর কর্তৃপক্ষ তাঁদের দ্বিতীয় দফা নোটিশ দিয়েছে। এরপরও যদি তাঁরা অবৈধ স্থাপনা না সরিয়ে নেন, তাহলে সেখানে উচ্ছেদ অভিযান চালানো হবে।