বর্ষবরণ উৎসবে যেসব খেলায় মেতে ওঠেন পাহাড়ের মানুষ

পাহাড়ি তরুণীদের কাছে খুবই জনপ্রিয় ঘিলা খেলা। রাঙামাটি ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী সাংস্কৃতিক ইনস্টিটিউট আয়োজিত বিজু, সাংগ্রাই, বিষু, বৈসুক ও বিহু মেলায় এই খেলার আয়োজন করা হয়। সম্প্রতি ইনস্টিটিউট প্রাঙ্গনেছবি: সুপ্রিয় চাকমা

বনে-জঙ্গলে জন্ম নেয় ঘিলালতা। সেই লতায় শিমজাতীয় বীজ পাওয়া যায়, যা পরিচিত ‘ঘিলা’ নামে। পাহাড়ের মানুষের নানা ঐতিহ্য-বিশ্বাসের সঙ্গে যোগ রয়েছে লতাটির। চাকমা লোকসাহিত্যের অমর প্রেমকাহিনি রাধামন-ধনপুদির একটি পর্বে ঘিলা সংগ্রহ ও ঘিলা খেলার বিবরণ রয়েছে। ধনপুদির অনুরোধে রাধামন অনেক দূর থেকে ঘিলা সংগ্রহ করে নিয়ে আসেন। পরে ঘিলা খেলা নিয়ে প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়।

পাহাড়ে ঘিলা খেলার প্রচলন এখন তেমন নেই। তবে প্রতিবছর বর্ষবরণের অনুষ্ঠানে এই খেলা আয়োজনের মধ্য দিয়ে ঐতিহ্যকে স্মরণ করতে দেখা যায় পাহাড়ি বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর মানুষকে। এবারও যার ব্যতিক্রম হয়নি। কেবল ঘিলা খেলা নয়, বর্ষবিদায় ও বর্ষবরণের উৎসব ঘিরে পাহাড়ের প্রতিটি পাড়া-মহল্লায় মানুষ এখন মেতে উঠেছে নাদেং, পত্তি, ফোর, বাঁশ খড়ম দৌড়, গুডুসহ বিভিন্ন ঐতিহ্যবাহী খেলায়।

বর্ষবরণ ও বর্ষবিদায় পাহাড়িদের প্রধান সামাজিক উৎসব। পাহাড়ি বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর মানুষ বিজু, বিহু, বৈসুক, সাংগ্রাই, চাংক্রানসহ নানা নামে বর্ষবরণ ও বর্ষবিদায়ের অনুষ্ঠান উদ্‌যাপন করে থাকেন। প্রতিবছর এপ্রিল মাসের শুরু থেকেই এসব ঘিরে পাহাড়ে উৎসবের আমেজ তৈরি হয়। এবার ৩ এপ্রিল থেকে রাঙামাটিতে জেলা পরিষদ ও ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর সাংস্কৃতিক ইনস্টিটিউটের উদ্যোগ সাত দিনব্যাপী বিজু, সাংগ্রাই, বৈসুক, বিষু ও বিহু মেলা শুরু হয়েছে। এ ছাড়া বিভিন্ন সংস্থা, ক্লাব ও পাড়ার উদ্যোগে প্রত্যেক গ্রাম ও শহরের বিভিন্ন এলাকায় ঐতিহ্যবাহী খেলাধুলা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে।

পাহাড়ের বাসিন্দারা জানান, ‘নাদেং’ হলো লাটিম নিয়ে খেলা। বিশেষ করে চাকমা ঐতিহ্যের সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে এই খেলাটি। দাড়িয়াবান্দা পাহাড়ে পরিচিত ‘ফোর’ নামে। ‘পত্তি’ বলা হয় বউচিকে। হাডুডুকে বলা ‘গুডু’। বর্ষবরণ-বর্ষবিদায়ে এ ছাড়া মহাসমারোহে আয়োজন করা হয় বলি খেলা। কোথাও কোথাও চলছে বাঁশ খড়ম দৌড়। এই দৌড়ে রণপা নিয়ে দৌড়ান প্রতিযোগীরা। উৎসবকে ঘিরে বাঁশ দিয়ে তৈরি বিভিন্ন বাদ্যযন্ত্র বাজানো হয়। যার মধ্যে রয়েছে খেংগরং, বাঁশি, ধুধুক ও শিঙা।

হাতে ঘিলা নিয়ে খেলায় মেতেছেন কয়েকজন
ছবি: সুপ্রিয় চাকমা

পাহাড়ে ১২, ১৩ ও ১৪ এপ্রিল তিন দিনব্যাপী মূল উৎসব চলবে। চাকমা সম্প্রদায়ের মানুষের কাছে প্রথম দিন ফুল বিজু, দ্বিতীয় দিন মূল বিজু ও তৃতীয় দিন গজ্যাপজ্যা। এ তিন দিন ভিন্ন ভিন্ন আয়োজন রয়েছে। রাঙামাটির বিজু, সাংগ্রাই, বৈসু, বিষু, বিহু, সাংক্রাই ও চাংক্রান উদ্‌যাপন কমিটির সদস্যসচিব ইন্টু মনি তালুকদার প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা ১০ এপ্রিল ঐতিহ্যবাহী খেলাগুলো আয়োজন করব। ঐতিহ্যবাহী খেলা নাদেং, পত্তি, ফোর, বাঁশ খড়ম, গুডু সব খেলাই চলবে। ১১ এপ্রিল বলি খেলা আয়োজন করা হবে।’

কবি ও লেখক মৃত্তিকা চাকমা প্রথম আলোকে বলেন, ঘিলা সংগ্রহ ও খেলা নিয়ে বিশদ বিবরণ রয়েছে রাধামন-ধনপুদি পালায়। এ ছাড়াও দীর্ঘ সময় ধরে পাহাড়ে পত্তি, নাদেংসহ অন্য খেলার প্রচলন রয়েছে।