ভৈরবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কমিটির নেতৃত্ব নিয়ে তিন বংশের সংঘর্ষে ৬০ জন আহত

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের নেতৃত্ব নিয়ে তিনটি বংশের লোকজনের মধ্যে সংঘর্ষে ৬০ জন আহত হয়েছেন। আজ বুধবার সকালে কিশোরগঞ্জের ভৈরব উপজেলার আগানগর ইউনিয়নের আগানগর গ্রামেছবি: সংগৃহীত

কিশোরগঞ্জের ভৈরব উপজেলায় একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের নেতৃত্ব নিয়ে একটি গ্রামের তিন বংশের লোকজনের মধ্যে সংঘর্ষে ৬০ জন আহত হয়েছেন। আজ বুধ ও গতকাল মঙ্গলবার উপজেলার আগানগর ইউনিয়নের আগানগর গ্রামে এ সংঘর্ষ হয়। এ সময় বেশ কয়েকটি বাড়ি ও দোকানপাট ভাঙচুর করা হয়।

সংঘর্ষে আহত ব্যক্তিদের মধ্যে ৪০ জন ভৈরব উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে চিকিৎসা নিয়েছেন। এর মধ্যে ছয়জনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।

ভৈরব উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা বুলবুল আহমেদ বলেন, চিকিৎসা নেওয়া ব্যক্তিরা দেশীয় অস্ত্রের আঘাতে আহত হয়েছেন। কেউ কেউ বল্লমবিদ্ধ হয়েছেন। চিকিৎসা নিতে আসা ৪০ জনের মধ্যে ৬ জনের অবস্থা গুরুতর। তাঁদের ঢাকায় পাঠানো হয়েছে।

স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আগানগর গ্রামে অবস্থিত জিল্লুর রহমান স্কুল অ্যান্ড কলেজে কিছুদিন পর ব্যবস্থাপনা কমিটির নির্বাচন হবে। ওই গ্রামের সরুল্লা বাড়ির লোকজনের সঙ্গে ব্যাপারী বাড়ি ও আফিল উদ্দিন বাড়ির লোকজনের পুরোনো বিরোধ আছে। সরুল্লা বাড়ির লোকজনের নেতৃত্ব দেন আগানগর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি মমতাজ উদ্দিন। ব্যাপারী বাড়ির নেতৃত্বে আছেন ইউনিয়ন বিএনপির সহসভাপতি আক্কাস আলী এবং আফিল উদ্দিন বাড়ির নেতৃত্ব দেন ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক সাইফুল ইসলাম।

স্থানীয় মানুষেরা জানান, গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে দুই পক্ষের লোকজনের মধ্যে কথা-কাটাকাটি হয়। সন্ধ্যার দিকে স্থানীয় আনন্দবাজার এলাকায় উভয় পক্ষের লোকজন দা, বল্লম নিয়ে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন। এ সময় উভয় পক্ষের অন্তত ২০ জন আহত হন। পরে পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি শান্ত করে।

আগের দিনের ঘটনার সূত্র ধরে গ্রামটি দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়ে। গ্রামের অন্যান্য বংশের লোকজন দুই পক্ষে ভাগ হয়ে যান। এমন অবস্থায় আজ সকাল ১০টার দিকে উভয় পক্ষ আবার সংঘর্ষে জড়ায়। আজ প্রথমে সরুল্লা বাড়ির লোকজন আফিল উদ্দিন ও ব্যাপারী বাড়ির লোকজনের বাড়িতে হামলা চালান। ছয় ঘণ্টা চেষ্টা চালিয়ে পুলিশ বিকেলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।

সরুল্লা বাড়ির নেতৃত্বে থাকা আওয়ামী লীগ নেতা মমতাজ উদ্দিনের ছেলে হিরা মিয়া বলেন, ‘প্রথম দিনের ঘটনা ঘটেছে প্রতিপক্ষদের অতিরিক্ত উসকানির কারণে। আজ সকালে আবার আমাদের পক্ষের লোকজনকে মারধর করেছে তারা। শেষে আমাদের লোকজনও প্রতিরোধে নামে।’

আফিল উদ্দিন বাড়ির নেতৃত্বে থাকা স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতা সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘সরুল্লা বাড়ির লোকজনের ঝগড়া করতে কারণ লাগে না। আগের দিন কারণ ছাড়াই আমাদের লোকজনকে মারধরের কারণে দুই দিন ধরে সংঘর্ষ হচ্ছে।’

ভৈরব থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. সফিকুল ইসলাম বলেন, ইদানীং ভৈরবে ছোট কারণে বংশগত বড় সংঘাতের ঘটনা ঘটছে। এতে অসংখ্য মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। সাধারণ মানুষও পরিস্থিতির শিকার হচ্ছেন। আগানগর গ্রামে দুই দিন ধরে চলা সংঘর্ষের কারণ বড় কিছু নয়। অথচ গ্রামে রণক্ষেত্র তৈরি হয়েছে। বর্তমানে গ্রামে পুলিশ মোতায়েন আছে। এখন পর্যন্ত কোনো পক্ষ লিখিত অভিযোগ নিয়ে থানায় আসেনি।