দেশ গড়তে সবার আগে প্রয়োজন ভালো মানুষ হওয়া। ভালো ছাত্র হওয়ার চেয়ে ভালো মানুষ হওয়া জরুরি। এখন থেকে যদি নিজেকে ভালো মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে পারো, তবে বাংলাদেশকে একটি উন্নত রাষ্ট্রে পরিণত করা সম্ভব। তোমরা সাফল্যের মাধ্যমে জীবনের প্রথম ধাপ অতিক্রম করেছ। এখন ভালো বীজ বপন করতে পারলে ভবিষ্যতে ভালো ফল ঘরে তুলতে পারবে।
রোববার সকালে ভোলায় শিখো-প্রথম আলো আয়োজিত জিপিএ-৫ সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত অতিথি ও বিশিষ্টজনেরা কৃতী শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে এ কথা বলেন।
জেলা শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে ‘স্বপ্ন দেখো জীবন গড়ো’ স্লোগানে সারা দেশের মতো প্রথম আলোর আয়োজনে ও শিক্ষার ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম শিখোর পৃষ্ঠপোষকতায় এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পাওয়া কৃতী শিক্ষার্থীদের সংবর্ধনা দেওয়া হয়।
সকালের মেঘাচ্ছন্ন আকাশ ও ঝিরিঝিরি বৃষ্টি আটটা বাজতেই শেষ হয়ে যায়। সকাল ৯টা থেকে শিক্ষার্থীদের কোলাহলে মুখর হয়ে ওঠে শিল্পকলা একাডেমি চত্বর। শিক্ষার্থীর হইহুল্লোড়, আনন্দ-উচ্ছ্বাসে সংবর্ধনা অনুষ্ঠান উৎসবে রূপ নেয়। শিল্পকলা অঙ্গনে ভরে ওঠে প্রাণোচ্ছল। কয়েক শ শিক্ষার্থীর সঙ্গে আসেন অভিভাবক ও সুধীজন।
সকাল ১০টায় জাতীয় সংগীতের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠানের মূল পর্ব শুরু হয়। এরপর রাজধানীর উত্তরার মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে বিমান বিধ্বস্ত হওয়ার ঘটনায় নিহত ব্যক্তিদের স্মরণে দাঁড়িয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। শুরুতে স্বাগত বক্তব্য দেন প্রথম আলোর ভোলার প্রতিবেদক নেয়ামতউল্যাহ। তিনি প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর রহমানের লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন।
শিক্ষার্থীদের অনুপ্রেরণা দিয়ে বক্তব্য দেন ভোলা সরকারি কলেজের উপাধ্যক্ষ অধ্যাপক জামাল হোসেন, ভোলা নাজিউর রহমান ডিগ্রি কলেজের প্রভাষক কামাল হোসেন, ভোলা সরকারি কলেজের প্রভাষক মো. এরশাদ, অভিভাবক রোখসানা বেগম, প্রথম আলোর বরিশালের নিজস্ব প্রতিবেদক এম জসীম উদ্দীন প্রমুখ।
অধ্যাপক জামাল হোসেন বলেন, ‘আমরা ছোট একটি দেশের ১৮-১৯ কোটি মানুষ। এই দেশকে গড়ে তুলতে হবে আমাদের সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায়। আর দেশ গড়ার জন্য সবার আগে প্রয়োজন ভালো মানুষ হওয়া। যদি এখন থেকেই নিজেকে ভালো মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে পারো, তবে বাংলাদেশকে একটি উন্নত রাষ্ট্রে পরিণত করা সম্ভব হবে।’
অভিভাবক রোকসানা বেগম বলেন, ‘মেয়ের কারণে এখানে এসে কথা বলছি। তোমরা নিজেদের নামে পরিচিত হওয়ার জন্য কষ্ট করবে। পড়াশোনায় লেগে থাকা ও কষ্ট করায় তোমাদের সকালটা হবে আলোকিত। প্রথম আলোকে অসংখ্য ধন্যবাদ জানাই এই অনুপ্রেরণামূলক অনুষ্ঠানের ধারাবাহিকতা বজায় রাখার জন্য।’
অনুষ্ঠানে অতিথিদের বক্তব্যের ফাঁকে ফাঁকে চলে বন্ধুসভার সদস্য ও কৃতী শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে সাংস্কৃতিক পরিবেশনা। শিক্ষার্থীদের মধ্যে কবিতা আবৃত্তি করেছে মেহজাবিন, সংগীত পরিবেশন করেছে পুষ্পিতা রানী কথা, উম্মে মালিহা রুমি, মাহাদিয়া, খালিদ মাহমুদ, উম্মে জাহান। অনুষ্ঠানে সংগীত পরিবেশন করেন ভোলার বিশিষ্ট সংগীতশিল্পী আঁখি দে, অধরা বৈদ্য, ভাস্কর মজুমদার। দলীয় ও একক নৃত্য পরিবেশন করেন শাহাবুদ্দিন অভির নেতৃত্বে একদল নৃত্যশিল্পী।
অনুষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের মাদক, মিথ্যা ও মুখস্থকে না বলার শপথ করান প্রথম আলোর বরিশালের নিজস্ব প্রতিবেদক এম জসীম উদ্দীন। তিনি বলেন, ‘আমার খুব আনন্দ ও ভালো লাগছে। পড়াশোনা করে সফলতার জন্য এ সংবর্ধনা ভবিষ্যতের অনুপ্রেরণা হিসেবে কাজ করবে।’
প্রথম আলো বন্ধুসভার ভোলার সহসাংগঠনিক সম্পাদক সাহিদুজ্জামান অন্তরের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের মধ্য থেকে অনুভূতি প্রকাশ করে ভোলা সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মুনতাহিনা, সিদরাতুল মুনতাহা, চরফ্যাশন ট্যাফনাল ব্যারেট মডেল মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী এইচ এম রফিক।
অনুষ্ঠানে কৃতী শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে অনলাইনে কুইজ প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়। এ সময় বিজয়ী ১০ জনকে পুরস্কৃত করা হয়। এ ছাড়া শিখোর পক্ষ থেকে আরেকটি কুইজ প্রতিযোগিতায় ছয়জনকে বিজয়ী হিসেবে পুরস্কৃত করা হয়।
আয়োজনটি পাওয়ার্ড বাই কনকা-গ্রি এবং সহযোগিতায় ছিল কনকর্ড গ্রুপ, ফ্রেশ, বার্জার পেইন্টস বাংলাদেশ লিমিটেড, মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক পিএলসি, কোয়ালিটি গ্রুপ, প্রেসিডেন্সি ইউনিভার্সিটি, অতীশ দীপঙ্কর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, ইউসিএসআই ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ শাখা ক্যাম্পাস, আকিজ টেলিকম লিমিটেড, আম্বার আইটি লিমিটেড, এটিএন বাংলা ও প্রথম আলো বন্ধুসভা।