যাত্রীর ফেলে যাওয়া ৮ লাখ টাকার ব্যাগ ফিরিয়ে দিলেন অটোরিকশাচালক

পুলিশের উপস্থিতিতে অটোরিকশাচালক মোহাম্মদ শাহরিয়ার খান (বাঁ থেকে দ্বিতীয়) টাকার ব্যাগ ফেরত দিচ্ছেন বিটু চাকমাকে
ছবি: সংগৃহীত

বাড়িতে ফেরার পথে ভাড়া করা অটোরিকশায় একটি ব্যাগ ভুলে ফেলে রেখে চলে যান এক যাত্রী। তাঁকে নামানোর প্রায় ৪০ মিনিটি পর অটোরিকশাচালক হঠাৎ যাত্রীর আসনের পেছনে পড়ে থাকা ব্যাগটি খেয়াল করেন। এ সময় তিনি ব্যাগটি খুলে দেখেন, ভেতরে সব টাকার বান্ডিল। পরে অনেক খোঁজাখুঁজি করে যাত্রীকে তাঁর ফেলে যাওয়া আট লাখ টাকাভর্তি ব্যাগটি ফেরত দিয়েছেন ওই অটোরিকশাচালক।

আজ খাগড়াছড়িতে এ ঘটনা ঘটেছে। আট লাখ টাকা ফেরত দেওয়া ওই অটোরিকশাচালকের নাম শাহরিয়ার খান ওরফে উল্লাস। তিনি শহরের শব্দ মিয়া পাড়ার বাসিন্দা। ব্যাগভর্তি টাকাগুলো রাঙামাটির বাঘাইছড়ির বাসিন্দা বিটু চাকমার। তিনি পুলিশের সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই)।

অটোরিকশাচালক শাহরিয়ার খান বলেন, বেলা ১১টার দিকে খাগড়াছড়ির নারকেলবাগান এলাকা থেকে এক যাত্রী তাঁর গাড়িতে ওঠেন। জেলার ন্যান্সিবাজার দীঘিনালা স্টেশনে ওই যাত্রীকে নামিয়ে দেন। পরে যাত্রী নিয়ে খাগড়াছড়ি বাজারে চলে যান। সেখান গিয়ে ব্যাগটি তাঁর চোখে পড়ে। তিনি বুঝতে পারেন, ন্যান্সি বাজার স্টেশনে নেমে যাওয়া যাত্রী বাকি সব জিনিস নিলেও ব্যাগটি ফেলে গেছেন। এ সময় কৌতূহলবশত ব্যাগটি খুললে টাকাগুলো দেখতে পান তিনি। এর পরপরই ব্যাগের মালিকের সন্ধানে ন্যান্সি বাজার স্টেশনে ছুটে যান।

শাহরিয়ার বলেন, ‘স্টেশনে গিয়ে সবার কাছে ওই ব্যক্তির সম্পর্কে জিজ্ঞেস করি। পরে সেখানে দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যদের ব্যাগের বিষয়টি জানানো হলে তাঁরাই বিটু চাকমার সন্ধান দেন। টাকাভর্তি ব্যাগটি ফেরত দিতে পেরে আমি খুশি।’

জানতে চাইলে বিটু চাকমা বলেন, তিনি চট্টগ্রাম থেকে বাঘাইছড়িতে ফিরছিলেন। বাড়ি করার জন্য সাধারণ ভবিষ্য তহবিল (জিপিএফ) থেকে টাকাগুলো ঋণ নিয়েছেন তিনি। অটোরিকশা থেকে নামার ১০ মিনিট পর তাঁর খেয়াল হয়, তিনি টাকার ব্যাগটি অটোরিকশায় ফেলে এসেছেন। এ সময় স্টেশনে দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যদের বিষয়টি জানান। তাঁরা তাঁকে খাগড়াছড়ি সদর থানায় যাওয়ার পরামর্শ দেন। তাঁদের পরামর্শে থানায় গেলে সেখানে অবস্থান করার সময় খবর আসে, অটোরিকশাচালক তাঁকে খুঁজছেন।

বিটু চাকমা বলেন, ‘অটোরিকশাচালক শাহরিয়ারের সততা ভুলতে পারব না। তাঁকে খুশি করে কিছু টাকা দিতে চেয়েছিলাম, তিনি নেননি। এক কাপ চা–ও তাঁকে খাওয়াতে পারিনি। টাকাগুলো না পেলে শেষ বয়সে বাড়ি করার ইচ্ছাটা আর পূরণ করতে পারতাম না।’

খাগড়াছড়ি সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. আরিফুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, অটোরিকশা চালক শাহরিয়ারের সততা খুবই প্রশংসনীয়। তাঁর দৃষ্টান্ত অন্যদের জন্য অনুকরণীয় হবে।