শেরপুরে প্রতিদিন বিকেলে বসে পিঁপড়ার ডিমের হাট, সংসার চলে সেই আয়ে
লম্বা লাঠির মাথায় বাঁধা হয়েছে জাল। সঙ্গে আছে বাঁশের তৈরি ঝুড়ি। এসব হাতিয়ার নিয়ে গারো পাহাড়ের গাছে গাছে পিঁপড়ার বাসা খুঁজে বেড়ান শেরপুরের ঝিনাইগাতী উপজেলার কয়েকজন বাসিন্দা। কাঙ্ক্ষিত বাসা খুঁজে পেলে বাঁশে বাঁধা জালের সাহায্যে পিঁপড়ার ডিম নিচে নামান। এরপর পিঁপড়ার কামড় সহ্য করে এসব ডিম আলাদা করে রাখেন সেই ঝুড়িতে। পরে সেগুলো বিক্রি করেন বাজারে। এভাবে জীবিকা নির্বাহ করে আসছে সেখানকার শতাধিক পরিবার।
উপজেলার বাঁকাকুড়া, গজনি, নয়ারাংটিয়া, বউবাজার ও বটতলা গ্রামে প্রতিদিন বিকেলে বসে পিঁপড়ার ডিমের হাট। প্রতি কেজি ডিম বিক্রি হয় ১ হাজার থেকে ১ হাজার ২০০ টাকায়। একেকজন সংগ্রাহক দিনে গড়ে ৪০০ থেকে ৭০০ গ্রাম ডিম সংগ্রহ করতে পারেন। পরে সেগুলো ওজন করে কার্টনে ভরে পাঠানো হয় মহাজনের কাছে। সন্ধ্যায় তালিকা অনুযায়ী সংগ্রাহকদের টাকা পরিশোধ করা হয়।
গারো পাহাড়ের ডিম সংগ্রাহকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মূলত বড়শি দিয়ে মাছ ধরেন—এমন শিকারিরাই পিঁপড়ার ডিমের প্রধান ক্রেতা। মাছ ধরার প্রতিযোগিতার পাশাপাশি বিভিন্ন সময়ে এসব ডিমের বেশ চাহিদা থাকে। দুই থেকে চারজন মিলে দল গঠন করে সংগ্রাহকেরা গারো পাহাড়ের শাল-গজারির বন, ঝোপঝাড় ও বড় গাছে পিঁপড়ার বাসা খোঁজেন।
সম্প্রতি সীমান্তবর্তী নয়ারাংটিয়া গ্রামের বউবাজারে দেখা গেছে, কয়েকজন সংগ্রহ করা ডিম নিয়ে বাজারে এসেছেন। ডিমের সঙ্গে থাকা পিঁপড়া ছাড়িয়ে এসব ওজন করে বিক্রি হচ্ছে কেজি দরে। ব্যবসায়ীরা এসব ডিম প্যাকেটজাত করে পাঠান রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায়।
এখন আর আগের মতো ডিম পাওয়া যায় না, সারা দিনে ৫০০ থেকে ৭০০ গ্রাম ডিম মেলে বলে জানান রাংটিয়া গ্রামের ডিম সংগ্রাহক যতীন্দ্র কোচ (৪৫)। তাঁর ভাষ্য, ‘পিঁপড়ার ডিম দিয়াই আমগর সংসার চলে। আমার মতো ম্যালা মানুষ আয়রোজির আশায় সকাল থেকে পাহাড়ে পিঁপড়ার ডিম খুঁইজা বেড়ায়।’
নয়ারাংটিয়া গ্রামের ডিম সংগ্রাহক মো. শাকিব (৩০) বলেন, প্রতিদিন বিকেলে বউবাজারে পাঁচ থেকে ছয় কেজি ডিম বিক্রি হয়। মহাজনের লোকজন সেগুলো কিনে নিয়ে যান। সন্ধ্যার পর ওজন অনুযায়ী বিক্রেতাদের কাছে টাকা পৌঁছে দেওয়া হয়। পিঁপড়ার ডিম সংগ্রহ করা বেশ কষ্টসাধ্য জানিয়ে তিনি আরও বলেন, ‘পিঁপড়ার কামড়ে ম্যালা কষ্ট হয়। কিন্তু আয় আর সংসারের কথা ভেবে সহ্য করন লাগে। এখন সইয়া গেছে।’
বাঁকাকুড়া গ্রামের পিঁপড়ার ডিমের ক্রেতা মোশারফ হোসেন বলেন, প্রতিদিন স্থানীয় বাজার থেকে তাঁর লোকজন ডিম সংগ্রহ করেন। পরে প্যাকেটজাত করে রাজধানীতে পাঠানো হয়। এই ব্যবসার সঙ্গে ২০ থেকে ২৫ বছর ধরে জড়িত। বর্ষা ও শীত মৌসুমে লাল পিঁপড়ার ডিমের চাহিদা থাকে সবচেয়ে বেশি।