জনগণের ক্ষমতা ফিরিয়ে দিতে হলে আগে সংসদ নির্বাচন: রুহুল কবির রিজভী

জুলাই আন্দোলনে রাজশাহী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জের শহীদ পরিবারের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ ও দোয়া অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন রুহুল কবিরছবি: প্রথম আলো

বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, ‘আগে জাতীয় সংসদ নির্বাচন দরকার, তারপর স্থানীয় সরকার নির্বাচন। সংস্কার তো চলমান ধারা। এটা চলবে, যাতে কোনো দিন কোনো ফ্যাসিবাদ মাথাচাড়া দিতে না পারে। বাপেরই জন্ম হলো না, তো সন্তানের জন্ম হবে কী করে? আগে জনগণের ক্ষমতা জনগণকে ফিরিয়ে দিতে হলে আগে জাতীয় সংসদ নির্বাচন দিতে হবে। তারপর স্থানীয় সরকার নির্বাচনের ব্যবস্থা করতে হবে।’ রাজশাহী নগরের ভুবনমোহন পার্ক শহীদ মিনারে আজ শুক্রবার সকালে এক অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন।

জুলাই আন্দোলনে রাজশাহী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জের শহীদ পরিবারের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ ও দোয়া অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন রুহুল কবির। এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে ‘আমরা বিএনপি পরিবার’।

সংস্কার করতে কত দিন সময় লাগে, প্রশ্ন তুলে রুহুল কবির বলেন, আজ সংস্কারের কথা যাঁরা বলছেন, এই সংস্কার করতে কত দিন সময় লাগে? পুলিশ আচরণ করবে আইন অনুযায়ী। কোনো ক্ষমতাশালীর কথা সে শুনবে না। প্রতিষ্ঠান চলবে আইনের গতিতে। এটা প্রতিষ্ঠিত করতে হবে। এটার জন্য কত দিন সময় লাগে?

রুহুল কবির আরও বলেন, ‘সংস্কারের জন্য বিভিন্ন কমিশন করা হয়েছে, এটা মার্চ মাস। নির্বাচনের জন্য গড়িমসি কেন? সরকারও নির্বাচনের জন্য একটা মাস দিয়েছিল। বলেছিল ডিসেম্বরে নির্বাচন হতে পারে। আবারও শুনি কেউ কেউ বলছে—না, এই সময়ে নির্বাচন করা কঠিন। নির্বাচন তো করবে নির্বাচন কমিশন, সহায়তা করবে সরকার। আমরা আশা করি, সরকার দেশের মানুষের সঙ্গে ন্যায়সংগত আচরণ করবে। কারণ, ড. ইউনূস একজন সম্মানিত ব্যক্তি।’

ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন করা কেন কঠিন—জানতে চেয়ে রুহুল কবির বলেন, ‘এখনো ৯ থেকে ১০ মাস সময় আছে। কেউ কেউ বলছেন, গণপরিষদ নির্বাচন করতে হবে। ভাই, আমরা তো এটা বুঝতে পারছি না। গণপরিষদ করতে হয় এই কারণে তার মাধ্যমে একটা সংবিধান রচনা করা হয়। আমাদের তো সংবিধান আছে। শেখ হাসিনা সংবিধানে অনেক ধরনের ফ্যাসিবাদী আইনকানুন যুক্ত করেছেন। কিন্তু এটা তো সংশোধনের বিধান আছে। অনেকবার সংশোধন হয়েছে। তো গণপরিষদ আসছে কেন? এই কথাগুলো বিভ্রান্তি তৈরি করছে।’

ভারতের সমালোচনা করে রুহুল কবির আরও বলেন, ‘অবাক লাগে যে প্রায় দেখি আমেরিকায় গেলে বাংলাদেশ নিয়ে আলোচনা করে ভারত। ভারত আমেরিকার রাষ্ট্রপতির সঙ্গে বাংলাদেশ নিয়ে আলোচনা করছে। আজকেও সংবাদপত্রে দেখলাম, ভারত যুক্তরাজ্যের সঙ্গে বাংলাদেশ নিয়ে আলোচনা করছে। কেন? বাংলাদেশে সরকার নেই? এটি একটি স্বাধীন দেশ নয়? এর একটি স্বাধীন পতাকা আছে, জাতীয় সংগীত আছে। আপনি পার্শ্ববর্তী রাষ্ট্র, আলাদা স্বাধীন দেশ। বাংলাদেশকে নিয়ে আপনার এত মাথাব্যথা কেন? বাংলাদেশ নিয়ে অন্য দেশের সঙ্গে আলোচনা করার অধিকার আপনাকে কে দিয়েছে?’

ভারত শেখ হাসিনার দোসরদের বাগানবাড়িতে পরিণত হয়েছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘আমার দেশের কী হচ্ছে, না হচ্ছে, আমাদের সরকার আছে, বিরোধী দল আছে, জনগণ আছে, আইনকানুন আছে, তারা কথা বলবে। আপনারা কারা যে অন্য দেশের সঙ্গে আলোচনা করবেন? আজ ভারত শেখ হাসিনার দোসরদের বাগানবাড়িতে পরিণত হয়েছে। কারণ, হাসিনার মাধ্যমে ভারত বাংলাদেশকে একটি তাঁবেদার রাষ্ট্রে পরিণত করেছিল। ভারত যা চাইত, শেখ হাসিনা ভারতকে তা-ই দিয়ে দিতেন। এভাবে নিজের ক্ষমতা টিকিয়ে রাখতেন।’

শেখ হাসিনা লুটেরা ও দস্যু দলের সর্দারনি ছিলেন মন্তব্য করে রুহুল কবির বলেন, ‘হিটলার ফ্যাসিস্ট ছিলেন, কিন্তু দেশপ্রেমও ছিল তাঁর। হাসিনা তাঁর কাছ থেকে ফ্যাসিস্ট হওয়া শিখেছিলেন, কিন্তু দেশপ্রেম শেখেননি। তাঁর আমলে কিসের আদালত, কিসের আইন, কিসের বিচার? শেখ হাসিনা যা বলতেন, তা-ই হতো। শেখ হাসিনা হচ্ছেন সুপ্রিম কোর্টের ওপরে। শেখ হাসিনা এমন ফ্যাসিস্ট যে তাঁর কথাই সব। আইন-আদালতে যা-ই লেখা থাক, শেষ কথা হচ্ছে শেখ হাসিনা। কোনো কিছুই তিনি মানতেন না।’

অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ‘আমরা বিএনপি পরিবার’–এর সভাপতি আতিকুর রহমান। স্বাগত বক্তব্য দেন সদস্যসচিব মোকছেদুল মোমিন। আরও উপস্থিত ছিলেন, বিএনপির স্বাস্থ্যবিষয়ক সম্পাদক রফিকুল ইসলাম, ‘আমরা বিএনপি পরিবার’–এর উপদেষ্টা আবুল কাশেম, মোস্তফা-ই-জামান সেলিম, আশরাফ উদ্দিন বকুল, নগর বিএনপির আহ্বায়ক এরশাদ আলী প্রমুখ।