মনোনয়ন পেয়েই কর্মসংস্থানের জন্য কাজ করার ঘোষণা খায়রুজ্জামানের

রাজশাহী সিটি নির্বাচনে মেয়র পদে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পাওয়ার পর সংবাদ সম্মেলন করেন এ এইচ এম খায়রুজ্জামান। শনিবার বিকেলে নগরের কুমারপাড়ায় দলীয় কার্যালয়ে
ছবি: প্রথম আলো

আগামী ২১ জুন অনুষ্ঠেয় রাজশাহী সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে আবার আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন বর্তমান মেয়র ও আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন। এবার তিনি রাজশাহীতে তরুণ-তরুণীদের কর্মসংস্থানের জন্য কাজ করবেন বলে ঘোষণা দিয়েছেন। শনিবার বিকেলে নগরের কুমারপাড়া এলাকায় দলীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে তিনি এ ঘোষণা দেন।

সংবাদ সম্মেলনের শুরুতেই মহানগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মোহাম্মদ আলী কামাল বলেন, তাঁদের দলে ঘরের ভেতরে গণতান্ত্রিক চর্চা আছে। তাঁরা গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় দলীয় মনোনয়ন চেয়েছেন। ভোটের মাধ্যমে তাঁরা তাঁদের প্রার্থী এ এইচ এম খায়রুজ্জামানকে জয়ী করবেন।

সংবাদ সম্মেলনে এ এইচ এম খায়রুজ্জামান বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁকে রাজশাহী সিটি নির্বাচনে জয়ের লক্ষ্যে কাজ করার জন্য আশীর্বাদ করেছেন। তিনি তাঁর নির্দেশ মাথা পেতে নিয়েছেন। সেটি জানানোর জন্য এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন।

তিনি বলেন, ‘সংবাদ সম্মেলনে আসার আগেই আমি রাজশাহী চেম্বার অব কমার্সের ব্যবসায়ীদের সঙ্গে একটি সভা করেছি। সেখানে যে কথাটি বলেছি, সেটি হচ্ছে, রাজশাহীকে সবুজায়ন করা, পরিচ্ছন্ন নগর হিসেবে গড়ে তোলা, দুবার পরিবেশ পদক পাওয়া, শিক্ষানগর হিসেবে আমরা সুন্দর একটা জায়গায় চলে এসেছি। সড়ক ও আলোকসজ্জার কারণে একটি পর্যটনের নগরে নিয়ে গেছি। এশিয়ার মধ্যে এটি একটি মডেল নগর হবে। এবার আমাদের কর্মসংস্থান প্রয়োজন।’

আওয়ামী লীগ মনোনীত এই প্রার্থী বলেন, ‘বিসিক-২ (বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশন) যে শিল্পনগর বাস্তবায়ন করা হয়েছে, সেখানে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প উদ্যোক্তারা যাতে আসেন, তাঁদের বাছাই করতে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা দেওয়া হবে। এসএমই ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে ৫০ লাখ টাকা থেকে ২ কোটি টাকা পর্যন্ত বিনা সুদে ঋণের ব্যবস্থা করা হবে। আম-পেয়ারা-লিচু থেকে ৫০ ধরনের আইটেম তৈরি করা যায়। আইটেমগুলো যদি আমাদের মা-বোনেরা তৈরি করতে পারেন, সেগুলো আমরা সারা দেশের চাহিদা মিটিয়ে রপ্তানি করতে পারব। সেখানে প্রায় ৫০ হাজার তরুণ-তরুণীর কর্মসংস্থান হতে পারে।’

এ এইচ এম খায়রুজ্জামান বলেন, তাঁদের দলের মধ্যে মনোনয়ন চাওয়া নিয়ে সামান্য মতপার্থক্য হয়েছিল। মনোনয়ন ঘোষণার পর নিশ্চয়ই সেটি আর থাকবে না। তিনি সবাইকে একসঙ্গে নির্বাচনে কাজ করার আহ্বান জানান।

মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ডাবলু সরকারের একটি ভিডিও ক্লিপ নিয়ে আলোচনা হচ্ছে, এ ব্যাপারে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে খায়রুজ্জামান বলেন, ‘ডাবলু সরকার এ ব্যাপারে আইনের আশ্রয় নিয়েছেন। বিষয়টি তদন্তাধীন। আইন তার নিজস্ব গতিতে চলবে। আমি এ ব্যাপারে মন্তব্য করতে চাই না। তদন্তে যা হয় সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

সাধারণ সম্পাদক হয়েও ডাবলু সরকার সংবাদ সম্মেলনে নেই, তাঁকে বাদ দিয়ে নির্বাচন করতে গেলে ফলাফলে কোনো প্রভাব পড়বে কি না, জানতে চাইলে মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি মোহাম্মদ আলী কামাল বলেন, আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ ও সহযোগী সংগঠনের শতকরা ৯৯ ভাগ নেতা-কর্মী একসঙ্গে আছেন। তাঁরা সবাই মহানগর আওয়ামী লীগের সঙ্গে আছেন। নির্বাচনে তাঁর (ডাবলু সরকার) অনুপস্থিতি বিন্দুমাত্র প্রভাব ফেলবে না।

গত তিনবারের নির্বাচনে দলের কোনো নেতা খায়রুজ্জামানের বিরুদ্ধে দলীয় মনোনয়ন চাননি। এবার মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মনোনয়ন চেয়েছেন। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে খায়রুজ্জামান বলেন, ‘এটা গণতান্ত্রিক অধিকার, যে কেউ মনোনয়ন চাইতে পারেন। তবে দলের মধ্যে আলোচনা করে মনোনয়ন চাইলে ভালো হতো। তা না করায় একটি ব্যত্যয় হয়েছে। কিন্তু যখন তাঁকে (খায়রুজ্জামান) মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে, তখন আওয়ামী লীগ করে কারও এ সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে যাওয়ার সুযোগ নেই।’

বিএনপিকে নির্বাচনে আসার আহ্বান জানাবেন কি না, জানতে চাইলে খায়রুজ্জামান বলেন, বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, তাঁরা তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া জাতীয় ও স্থানীয় কোনো নির্বাচনে অংশ নেবেন না। এখন তাঁদের কোনো নেতাকে তাঁরা বাঘ মার্কা বা ছাগল মার্কা প্রতীক নিয়ে দাঁড় করিয়ে দিতে পারেন। তিনি লড়াই করেই জিততে চান।
সংবাদ সম্মেলনে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য বেগম আখতার জাহান, মহানগর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা নওশের আলী, শফিকুর রহমান, তবিবুর রহমান শেখ, সাবেক সহসভাপতি সৈয়দ শাদাত হোসেন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আহসানুল হক, সাংগঠনিক সম্পাদক আসলাম সরকারসহ নেতা-কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।