ভোরে দুই ভাই বাড়ি থেকে বের হন। এরপর খুলনায় গিয়ে শহরের রয়েল মোড় থেকে ইমাদ পরিবহনের বাসে ওঠেন। পথে গোপালগঞ্জে নেমে যান ছোট ভাই ইশরাকুজ্জামান। একটু পর খবর পান বাস খাদে পড়ে তাঁর বড় ভাই আশফাকুজ্জামান (৪৫) প্রাণ হারিয়েছেন।
পেশায় ঠিকাদার ছিলেন আশফাকুজ্জামান। গ্রামের বাড়ি গোপালগঞ্জে হলেও দীর্ঘদিন ধরে তাঁর পরিবার খুলনা শহরের টুটপাড়া এলাকায় ভাড়া বাড়িতে থাকেন। ছোট ভাই ও বোনের বিয়ে হয়ে গেলেও বিয়ে করেননি আশফাকুজ্জামান।
পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিস সূত্রে জানা যায়, রোববার সকাল সাড়ে সাতটার দিকে খুলনা থেকে ছেড়ে আসা ইমাদ পরিবহনের একটি বাস পদ্মা সেতুর আগে এক্সপ্রেসওয়ের শিবচরের কুতুবপুর এলাকায় নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে খাদে পড়ে যায়। এ সময় দুমড়েমুচড়ে যায় বাসটি। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত ১৯ জন মারা গেছেন। তাঁদের একজন আশফাকুজ্জামান।
আজ সন্ধ্যার পর টুটপাড়া এলাকায় তাঁদের বাড়ির সামনে গিয়ে দেখা যায়, বাড়ির সামনের গলির মুখে মানুষের জটলা। তবে কেউ বাড়ির দিকে যাচ্ছেন না। এর কারণ জানা গেল তাঁদের বাড়ির মধ্যে প্রবেশ করে।
সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে আশফাকুজ্জামানের মেজ মামা হুমায়ুন কবির বলেন, ‘ছেলে মারা যাওয়ার খবর এখনো মাকে জানানো হয়নি। বলা হয়েছে, আশফাক অসুস্থ। তবে মনে হয়, মানুষের উপস্থিতি দেখে কিছুটা অনুমান করতে পেরেছে আমার বোন।’
এশার নামাজের পর জানাজা শেষে টুটপাড়া কবরস্থানে আশফাকুজ্জামানের লাশ দাফন করা হবে জানিয়ে হুমায়ুন কবির বলেন, আজ বেলা তিনটার দিকে শিবচর থেকে লাশ নিয়ে খুলনার উদ্দেশে রওনা দেন তাঁর ছোট ভাগনে ইশরাকুজ্জামান। পথে যানজটের কারণে সন্ধ্যা সাড়ে সাতটায়ও লাশ বাড়িতে পৌঁছায়নি।
হুমায়ুন কবিরের সঙ্গে কথা বলতে বলতেই ভেতরের ঘর থেকে আশফাকুজ্জামানের মা হাসনা হেনার কান্নার শব্দ ভেসে আসে। বিলাপ করতে করতে তিনি বলছেন, ‘আমার ছেলের কী হলো।’
ঘরে গিয়ে দেখা যায়, কাঁদতে থাকা হাসনা হেনাকে সান্ত্বনা দেওয়ার চেষ্টা করছেন আশপাশে থাকা নারীরা। পাশেই চেতনাহীন শুয়ে ছিলেন আশফাকুজ্জামানের একমাত্র বোন দিলারা জাহান।