একমাত্র ছেলের মৃত্যুতে দিশাহারা মা–বাবা
ফুটফুটে নিষ্পাপ চেহারা। মুখে লেগে আছে আলতো হাসি। ১৩ বছরের স্কুলছাত্র জাহিদুল আলম রাফির এই ছবির দিকে তাকালেই বুক মুচড়ে ওঠে। মুঠোফোনে ছবিটি পাঠিয়েছেন স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য মোশাররফ হোসেন। আক্ষেপ করে তিনি বলেন, মা-বাবার একমাত্র ছেলেকেই কেন স্রষ্টা নিয়ে যান?
জাহিদুল আলম রাফি বাড়ি থেকে বেরিয়ে রাস্তা পার হওয়ার সময় গাড়িচাপায় মারা যায়। গতকাল বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে আটটার দিকে ফেনীর ছাগলনাইয়া উপজেলার নতুন মুহুরীগঞ্জ এলাকায় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে এ দুর্ঘটনা ঘটে। জাহিদুল ফেনীর ছাগলনাইয়া উপজেলার ঘোপাল ইউনিয়নের দৌলতপুর (ছয়ঘরিয়া) গ্রামের মো. নুরুল আলম ভূঞার ছেলে। স্থানীয় একটি বিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেণির ছাত্র ছিল সে। মা-বাবার একমাত্র ছেলে জাহিদুলের ছোট এক বোন আছে। বাবা মো. নুরুল আলম চট্টগ্রামের একটি শিপিং কোম্পানিতে চাকরি করেন। বৃহস্পতিবার সকালে কর্মক্ষেত্রে যোগ দিতে চট্টগ্রাম চলে যান তিনি। তবে ছেলের মৃত্যুসংবাদ শুনে রাতেই ফিরে আসতে হয় তাঁকে।
পুলিশ ও স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, জাহিদুল ইসলামের বাড়ি মহাসড়কের কাছে। রাতে মহাসড়কের ঢাকামুখী লেনে আহত অবস্থায় তাকে পড় থাকতে দেখেন স্থানীয় বাসিন্দারা। খবর পেয়ে হাইওয়ে পুলিশ তাকে উদ্ধার করে ফেনী সদর জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
ফেনীর ফাজিলপুর হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রাশেদ খান চৌধুরী বলেন, অজ্ঞাত গাড়ির ধাক্কায় ওই স্কুলছাত্রের মৃত্যু হয়েছে। গাড়িটি শনাক্তের চেষ্টা চলছে। পরিবারের আবেদনের ভিত্তিতে লাশ ময়নাতদন্ত ছাড়াই দাফনের জন্য হস্তান্তর করা হয়েছে।
স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য মোশাররফ হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, নুরুল আলম ভূঞার একমাত্র ছেলে জাহিদুল আলম। আজ শুক্রবার সকাল ১০টার দিকে জাহিদুলের জানাজা সম্পন্ন হয়েছে।
কাল রাত থেকেই জাহিদুলদের বাড়িতে আত্মীয়স্বজন ও প্রতিবেশীরা ভিড় করেন। আজ সকালে ওই বাড়িতেও ছিল লোকজনের ভিড়। ফুটফুটে ছেলেটি এত দ্রুত হারিয়ে যাবে, তা কেউ মানতে পারছেন না। জাহিদুলের মা নাসিমা আক্তার ছেলের শোকে বারবার জ্ঞান হারাচ্ছেন। জ্ঞান ফিরলেই ডাকছেন রাফি রাফি করে। কিন্তু নিথর রাফি যে আর কখনো সাড়া দেবে না।