রাজশাহী সদরে ভোটের লড়াইয়ে দুই ‘বাদশা’

রাজশাহী-১ আসনে ১৪–দলীয় জোটের প্রার্থী ফজলে হোসেন (বাদশা) ও রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি স্বতন্ত্র প্রার্থী শফিকুর রহমান (বাদশা)
ছবি: সংগৃহীত

রাজশাহী-২ (সদর) আসনের সংসদ সদস্য বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক ফজলে হোসেনের ডাকনাম ‘বাদশা’। তিনি এবারও ১৪–দলীয় জোটের প্রার্থী হয়ে এই আসন থেকে নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করছেন। এদিকে রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি শফিকুর রহমানের ডাকনামও ‘বাদশা’। তিনি এবার স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন।

ফজলে হোসেন বলছেন, মানুষ নৌকা প্রতীক দেখে তাঁকে ভোট দেবেন। আর শফিকুর রহমান বলছেন, তিনি আওয়ামী লীগের নেতা হওয়ায় দলটির কর্মী-সমর্থকেরা তাঁকে ভোট দেবেন। সবার ধারণা, আসনটিতে এবার দুই বাদশার লড়াই জমবে ভালো।

গতকাল সোমবার বিকেলে নগরের কাশিয়াডাঙ্গা এলাকা থেকে নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণার শুরুতে ফজলে হোসেন সাংবাদিকদের বলছেন, জনগণ স্বতঃস্ফূর্তভাবে তাঁদের নির্বাচনের আহ্বান গ্রহণ করছেন। জনগণের স্বতঃস্ফূর্ততা দেখে বোঝা যায় যে তাঁদের সমর্থনটা কোন দিকে আছে। পরিবেশ স্বাভাবিক। এখানে কোনো রকম জবরদস্তিমূলক কিছু নেই। ওয়ার্কার্স পার্টির এই নেতা মনে করেন, নির্বাচন তাঁদের অনুকূলেই রয়েছে। মানুষ চায়, এই সরকার আবার ফিরে আসুক।

নির্বাচনী পরিবেশ নিয়ে ফজলে হোসেনের ভাষ্য, জনগণের অংশগ্রহণ যদি বেশি হয়, তাহলে অবশ্যই নির্বাচন সুষ্ঠু হবে। তিনি বলেন, জনগণের স্বতঃস্ফূর্ত যে প্রতিক্রিয়া, তাতে মনে হচ্ছে তাদের অংশগ্রহণের সম্ভাবনা অনেক বেশি। ১৪-দলীয় জোটের এই প্রার্থীর দাবি, মাঠের অবস্থা এবার আগের চেয়েও ভালো। তিনি মনে করেন, এই সময়ের মধ্যে বিএনপি ও জামায়াতের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড মানুষ উপলব্ধি করতে পেরেছে। আর গত ১৫ বছরে সরকারের যে উন্নতি এবং উন্নয়ন কর্মকাণ্ড, তা মানুষ নিজের চোখে দেখেছে। ফলে মানুষ মনে করে, এই সরকারের পুনরাবৃত্তি দরকার।

ফজলে হোসেন রাজশাহী-২ নির্বাচনী এলাকায় ১৫ বছর ধরে সংসদ সদস্য ছিলেন। বিএনপি নির্বাচনে না এলেও এর প্রভাব ভোটে পড়বে বলে মনে করেন না তিনি। তিনি বলেন, বিএনপি সাধারণ জনগণকে ভোটকেন্দ্রে যাওয়া থেকে বিরত রাখতে পারবে না। দলটির নেতা-কর্মীরা হয়তো না–ও যেতে পারেন; কিন্তু সাধারণ মানুষ, যাঁদের ওপর বিএনপির কোনো প্রভাব নেই, তাঁরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে ভোটকেন্দ্রে যাবেন।

এদিকে আসনটিতে মহানগর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি শফিকুর রহমানের মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাইয়ে বাতিল হয়ে গিয়েছিল। আদালতের রায়ে গতকাল দুপুরে প্রার্থিতা ফিরে পেয়েছেন। তবে তিনি এখনো প্রতীক পাননি। প্রার্থিতা ফিরে পেয়ে আইনজীবীকে সঙ্গে নিয়ে ফেসবুকে একটি ভিডিও বার্তা দিয়েছেন শফিকুর রহমান। সেখানে প্রার্থিতা ফিরে পাওয়ার ঘোষণা দিয়ে তিনি বলেন, রাজশাহীর মানুষ চেয়েছে, তিনি যেন নির্বাচন করেন। তাঁর প্রার্থিতা ফিরে পাওয়ার মাধ্যমে মানুষের সেই আকাঙ্ক্ষার জয় হয়েছে।

ভোটে জয়ের বিষয়ে আত্মবিশ্বাসী শফিকুর রহমান। নৌকা প্রতীকের প্রার্থী থাকতে আপনাকে কেন মানুষ ভোট দেবেন—এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি প্রথম আলোকে মুঠোফোনে বলেন, গত ১৫ বছর ১৪–দলীয় জোটের প্রার্থী রাজশাহী সদর আসনে ছিলেন। তাঁর সঙ্গে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের কোনো সম্পর্ক ছিল না। উন্নয়নের ক্ষেত্রে মেয়রের সঙ্গে স্থানীয় সংসদ সদস্যের কাজের সমন্বয় থাকা দরকার। সেটা ছিল না। রাজশাহী সিটি করপোরেশনের মেয়র নির্বাচনের সময় স্লোগান ছিল ‘উন্নয়ন হয়েছে দৃশ্যমান, এবার হবে কর্মসংস্থান’। মেয়র এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটনের এই স্লোগান নিয়েই নির্বাচনে নেমেছেন বলে জানান শফিকুর রহমান। নগর আওয়ামী লীগ নেতার বিশ্বাস, দলের ভোট তাঁর ঘরেই আসবে।

আসনটিতে দুই ‘বাদশা’সহ জাতীয় পার্টি, বাংলাদেশ কংগ্রেস, বিএনএম, বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক মুক্তিজোট, জাসদসহ মোট সাতজন প্রার্থী রয়েছেন।