আচরণবিধি ভেঙে অনুষ্ঠান, পরে শোডাউন করে মনোনয়নপত্র জমা

মনোনয়নপত্র দাখিল করার আগে সড়ক বন্ধ করে দোয়া অনুষ্ঠান করেন পটুয়াখালী-৪ (কলাপাড়া-রাঙ্গাবালী) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য মো. মাহবুবুর রহমান। বৃহস্পতিবার সকালে কলাপাড়া পৌর শহরের কুমারপট্টি এলাকায়
ছবি: প্রথম আলো

আচরণবিধি ভেঙে হাজারো নেতা-কর্মী নিয়ে শোডাউন দিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন পটুয়াখালী-৪ (কলাপাড়া-রাঙ্গাবালী) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও কলাপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. মাহবুবুর রহমান। মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার আগে সড়ক বন্ধ করে নেতা-কর্মীদের নিয়ে অনুষ্ঠান করেছেন তিনি।

আজ বৃহস্পতিবার কর্মী-সমর্থকদের নিয়ে মিছিলসহকারে তিনি সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা ও কলাপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. জাহাঙ্গীর হোসেনের কাছে মনোনয়নপত্র জমা দেন। তবে আওয়ামী লীগ নেতা মাহবুবুর রহমান আচরণবিধি লঙ্ঘনের বিষয়টি অস্বীকার করেছেন।

প্রত্যক্ষদর্শী ও দলীয় সূত্রে জানা গেছে, সাবেক সংসদ সদস্য মাহবুবুর রহমানের মনোনয়নপত্র দাখিল উপলক্ষে আজ বেলা ১১টায় কলাপাড়া পৌর শহরের কুমারপট্টি এলাকায় তাঁর বাসভবনের সামনে দোয়া অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এতে কলাপাড়া ও রাঙ্গাবালী উপজেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে তাঁর কর্মী-সমর্থকেরা অংশ নেন। পরে মিছিলসহকারে ঢাকঢোল পিটিয়ে তিনি সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ে গিয়ে মনোনয়নপত্র জমা দেন। শহরের গুরুত্বপূর্ণ একটি সড়কে প্যান্ডেল করে দোয়া অনুষ্ঠানের আয়োজন করায় শহরের বিভিন্ন সড়কে যানজট তৈরি হয়। এতে ভোগান্তিতে পড়েন সাধারণ মানুষ।

হাজারো মানুষের উপস্থিতিতে ওই অনুষ্ঠানে মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘আমার বাবা কলাপাড়া আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। ৫২ বছর ধরে আমি আওয়ামী লীগ করছি। আমি স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করব, কখনো ভাবিনি। আমি রাজাকারের সন্তান নই। আমি আওয়ামী লীগকে রক্ষা করার জন্যই স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’

২০০১ সাল থেকে টানা তিনবারের সংসদ সদস্য মাহবুবুর রহমান ২০১৮ সালে দলীয় মনোনয়ন চেয়েও পাননি। এবারও তিনি দলের কাছে মনোনয়ন চেয়েছিলেন। কিন্তু দল বর্তমান সংসদ সদস্য মহিববুর রহমানকে মনোনয়ন দিয়েছেন। মাহবুবুর রহমান নবম জাতীয় সংসদে পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পেয়েছিলেন।

জাতীয় সংসদ নির্বাচন আচরণ বিধিমালার ৮ (খ) ধারায় বলা হয়েছে, মনোনয়নপত্র দাখিলের সময় কোনো প্রার্থী কোনো ধরনের মিছিল কিংবা শোডাউন করতে পারবেন না। বিধিমালার ৬ (ঘ) ধারায় উল্লেখ করা হয়েছে, জনগণের চলাচলে বিঘ্ন সৃষ্টি করতে পারে, এমন কোনো সড়কে জনসভা বা পথসভা করতে পারবেন না এবং তাদের পক্ষে অন্য কোনো ব্যক্তিও জনসভা বা পথসভা ইত্যাদি করতে পারবেন না।

আচরণবিধি লঙ্ঘনের বিষয়ে সাবেক সংসদ সদস্য মো. মাহবুবুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘ওই সড়কের পাশেই আমার বাসা। আমার প্রতি ভালোবাসা দেখিয়ে অনেকেই জড়ো হয়েছেন। এতে হয়তো ভিড় হয়েছে। তবে মানুষজনের চলাচলে কোনো ভোগান্তি হয়নি। আমি আচরণবিধি মেনেই নির্বাচনী কার্যক্রম পরিচালনা করেছি।’

এর আগে গতকাল বুধবার আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী বর্তমান সংসদ সদস্য মহিববুর রহমানও আচরণবিধি ভেঙে দলীয় কার্যালয়ের সামনের সড়ক আটকে দোয়া অনুষ্ঠান করেন। পরে কর্মী-সমর্থকদের নিয়ে মিছিল করে সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ে মনোনয়নপত্র জমা দেন।

সড়ক বন্ধ করে দুই প্রার্থীর অনুষ্ঠানের বিষয়ে সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা ইউএনও মো. জাহাঙ্গীর হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘আসলে নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘন করার কোনো সুযোগ নেই। আমরা অবশ্যই এ বিষয়ে যে আইন রয়েছে, তার প্রতিপালন করব।’