টাকার অভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি অনিশ্চিত খাগড়াছড়ির ক্যাচিংহ্লা মারমার

ক্যাচিংহ্লা মারমা চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে পদার্থবিজ্ঞানে ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন। তবে টাকার অভাবে ভর্তি হতে পারবেন কি না, তা নিয়ে রয়েছে দুশ্চিন্ত
ছবি: প্রথম আলো

অভাবের তাড়নায় ঠিকমতো খাবার জোটেনি। তবে দিনমজুরি করে এবং টিউশনি করে লেখাপড়া চালিয়ে গেছেন ক্যাচিংহ্লা মারমা। এর ফলও পেয়েছেন। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে পদার্থবিজ্ঞানে ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন তিনি। মেধাতালিকায় নাম থাকলেও ক্যাচিংহ্লার বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াটা অনেকটা অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। টাকার অভাবে ভর্তি হতে পারবেন কি না, এমন দুশ্চিন্তায় ফিকে হয়ে গেছে তাঁর বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পাওয়ার আনন্দ।

ক্যাচিংহ্লার বাড়ি খাগড়াছড়ির মাটিরাঙ্গা উপজেলার তবলছড়ি ডাকবাংলো আনি চেয়ারম্যানপাড়ায়। নিজেদের বসতভিটা নেই। তাই আরেকজনের দেওয়া জায়গায় থাকেন। সাত বছর আগে বাবা হ্লাথোয়াই মারমা মারা যান। মা হ্রাংরা মারমা দিনমজুরি করে সংসার চালালেও তিন বছর ধরে তিনি অসুস্থ। একমাত্র বোন উক্রাচিং মারমা তবলছড়ি কদমতলী উচ্চবিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির ছাত্রী।

সম্প্রতি মাটিরাঙ্গা বাজার থেকে ৪০ কিলোমিটার দূরে তবলছড়ি ডাকবাংলো আনি চেয়ারম্যানপাড়ায় গিয়ে দেখা যায়, বেড়া আর টিনের ছাউনির ভাঙা দুই কক্ষের ঘর। বৃষ্টি হওয়ায় টিনের ছিদ্র দিয়ে পানি পড়ছিল। ঘরের বেড়াও বেশির ভাগ ভাঙা।

ক্যাচিংহ্লা মারমা প্রথম আলোকে বলেন, ‘ছোট থেকে দেখে এসেছি বাবা অসুস্থ। ২০১৬ সালে বাবা মারা যাওয়ার পর মা-ও অসুস্থ হয়ে পড়েন। দুবেলা ঠিকমতো খাবার জোটেনি, তবু আমরা দুই ভাই-বোন পড়ালেখা ছাড়িনি। বন্ধের দিনগুলোতে ছোট থেকে দিনমজুরি, মাটিকাটা, বাগান পরিচর্যা, গাছ লাগানোসহ যখন যে কাজ পেয়েছি, সে কাজ করেছি। তবে সব সময় প্রতিবেশীরা সহযোগিতা করেছেন। সঙ্গে ছোট ছোট ছেলেমেয়েদের প্রাইভেট পড়িয়েছি। এলাকায় আমবাগানে কাজ করে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা দিয়েছি। এসএসসিতে জিপিএ-৫ পেলেও ঠিকমতো ক্লাস করতে না পারায় খাগড়াছড়ি সরকারি কলেজ থেকে এইচএসসিতে পেয়েছি জিপিএ-৪.৫০।’

ক্যাচিংহ্ণার মা হ্রাংরা মারমা বলেন, ‘ভর্তির সুযোগ পাওয়ার পর থেকে ছেলের মন খারাপ। এদিকে এলাকায় দিনমজুরির কাজও খুঁজে পাচ্ছি না। ছেলেকে বলেছি, গরিবের স্বপ্ন দেখতে নেই, পড়ালেখা বাদ দাও। যেখানে দুবেলা খাবার ঠিকমতো জোটে না, সেখানে ভর্তির টাকা পাব কোথায়?’