নারায়ণগঞ্জে রেস্তোরাঁর গুলিবিদ্ধ ব্যবস্থাপকের মৃত্যু

নারায়ণগঞ্জ শহরের চাষাঢ়ায় শপিং কমপ্লেক্সের মালিকের গুলিতে আহত রেস্তোরাঁর ব্যবস্থাপক শফিফুর রহমান ওরফে কাজল মারা গেছেন। সোমবার রাত পৌনে ১১টার দিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তাঁর মৃত্যু হয়। তাঁর মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছেন হাসপাতালের পুলিশ ফাঁড়ির পরিদর্শক বাচ্চু মিয়া।

রোববার রাতে বিদ্যুতের বিলের টাকা নিয়ে কথা-কাটাকাটির একপর্যায়ে চাষাঢ়ার আঙ্গুরা শপিং কমপ্লেক্সের মালিক আজহার তালুকদার ‘সুলতান ভাই কাচ্চি’র ব্যবস্থাপক শফিফুর রহমানের ওপর গুলি চালান। ওই রাতে তাঁকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। শফিফুর রহমান বন্দর উপজেলার কুশিয়ারা এলাকার শাহ্ আলম মিয়ার ছেলে।

এ ঘটনায় শপিং কমপ্লেক্সের মালিকের বিরুদ্ধে হত্যাচেষ্টা এবং ১০ লাখ টাকা চাঁদা দাবির অভিযোগে মামলা করেছেন রেস্তোরাঁর মালিক শুক্কুর আলী। রোববার দিবাগত রাতে নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানায় তিনি মামলাটি করেন। মামলায় আসামি করা হয়েছে আঙ্গুরা শপিং কমপ্লেক্সের মালিক আজহার তালুকদার ও তাঁর ছেলে আরিফ তালুকদারকে। তাঁদের দুজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আনিচুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, গুলিবিদ্ধ শফিফুর রহমান চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন। রেস্তোরাঁর মালিক শুক্কুর আলী বাদী হয়ে মামলা করেছেন। ঘটনার পর শপিং কমপ্লেক্সের মালিক আজহার তালুকদার ও তাঁর ছেলে আরিফ তালুকদারকে আটক করা হয়। আজহার তালুকদারের অস্ত্র (একটি পিস্তল ও একটি শটগান) দুটি লাইসেন্স করা। অস্ত্র দুটি জব্দ করা হয়েছে।

আসামিদের দুই দিনের রিমান্ড চেয়ে সোমবার নারায়ণগঞ্জ আদালতে তোলে পুলিশ। মঙ্গলবার রিমান্ড শুনানির দিন ধার্য করে আসামি দুজনকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন বিচারক। নারায়ণগঞ্জ আদালত পুলিশের পরিদর্শক আসাদুজ্জামান এ তথ্য নিশ্চিত করেন।

শহরের চাষাঢ়ায় আঙ্গুরা শপিং কমপ্লেক্সের নিচতলা ও দোতলা একাংশ কমপ্লেক্সের মালিক আজহার তালুকদারের কাছ থেকে ভাড়া দেন শুক্কুর আলী। সেখানে সুলতান ভাই কাচ্চি নামের একটি রেস্তোরাঁ দিয়েছেন তিনি। কয়েক দিন ধরে বিদ্যুৎ বিল ও পানির লাইন নিয়ে শপিং কমপ্লেক্সের মালিক আজহারের এবং রেস্তোরাঁর মালিক শুক্কুর আলী ও ব্যবস্থাপক শফিফুর রহমানের মধ্যে বিরোধ চলছিল। এ নিয়ে রোববার রাতে সুলতান ভাই কাচ্চি রেস্তোরাঁর ব্যবস্থাপক শফিফুর রহমানের সঙ্গে শপিং কমপ্লেক্সের মালিক আজহারের কথা-কাটাকাটি হয়। একপর্যায়ে আজহার উত্তেজিত হয়ে শপিং কমপ্লেক্সেই থাকা বাসা থেকে পিস্তল ও শটগান নিয়ে এসে বেশ কয়েকটি গুলি ছোড়েন। এতে শফিফুর রহমান গুলিবিদ্ধ হন। তাঁকে গুরুতর অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। এ সময় শটগানের গুলিতে রেস্তোরাঁর জনি নামের এক কর্মচারী আহত হন। তাঁকে নারায়ণগঞ্জ শহরের খানপুর হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়।

মামলার বাদী শুক্কুর আলীর দাবি, শপিং কমপ্লেক্সে রেস্তোরাঁর জায়গাটি তিনি আজহার তালুকদারের ভাই আজিজুল তালুকদারের কাছ থেকে ভাড়া নিয়েছেন। রোববার রাতে আজহার পানির বিল বাবদ ১০ লাখ টাকা দাবি করেন। বিষয়টি নিয়ে তাঁর সঙ্গে কথা-কাটাকাটি হয়। প্রথম আলোকে শুক্কুর আলী বলেন, ‘আমি আজহার তালুকদারকে তাঁর ভাইকে (আজিজুল তালুকদার) সঙ্গে নিয়ে আসতে বলি। তিনি উত্তেজিত হয়ে বাড়ি থেকে পিস্তল ও শটগান নিয়ে এসে পাঁচটি গুলি করেন। এ সময় আমার বোনজামাই রেস্তোরাঁর ব্যবস্থাপক শফিফুর রহমানের তলপেটে দুটি গুলি লাগে এবং কর্মচারী জনির পায়েও গুলি লাগে। এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও ন্যায়বিচার দাবি করি।’

আরও পড়ুন