ধর্ষণকাণ্ডে জড়িতদের শাস্তি চেয়ে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের প্রতিবাদ, মিছিল

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ধর্ষণের ঘটনায় জড়িতদের শাস্তি নিশ্চিতসহ বিভিন্ন দাবিতে শিক্ষক শিক্ষার্থীদের মানববন্ধন। মঙ্গলবার দুপুরে পৌনে একটায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনার সংলগ্ন সড়কে
ছবি: প্রথম আলো

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে বহিরাগত এক দম্পতিকে ডেকে এনে স্বামীকে আবাসিক হলে আটকে রেখে স্ত্রীকে ধর্ষণের অভিযোগের ঘটনায় ধর্ষণের প্রতিবাদে এবং নিপীড়ন মুক্ত নিরাপদ ক্যাম্পাসের দাবিতে মানববন্ধন করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। ধর্ষণে জড়িত ব্যক্তিদের শাস্তির দাবিতে ক্যাম্পাসে মৌনমিছিল করেছে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগও।

গত শনিবার রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি আবাসিক হলে স্বামীকে আটকে রেখে স্ত্রীকে ধর্ষণের অভিযোগ উঠে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের ৪৫তম ব্যাচের প্রাক্তন শিক্ষার্থী মোস্তাফিজুর রহমান এবং বহিরাগত মামমুনুর রশিদের বিরুদ্ধে। পর দিন রোববার ভুক্তভোগীর স্বামী বাদী হয়ে ছয়জনের নামে মামলা করেন। তাঁদের মধ্যে চারজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এ ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন ও বর্তমান ছয় শিক্ষার্থীর সনদ স্থগিত করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এর মধ্যে চারজনই বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের নেতা।

আরও পড়ুন

ধর্ষণে জড়িত ব্যক্তিদের কঠোর শাস্তি নিশ্চিত করার দাবিতে মৌনমিছিল করেছে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা। আজ মঙ্গলবার বেলা দুইটার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন চত্বর থেকে মিছিলটি বের করা হয়। মিছিলটি মূল সড়ক দিয়ে শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে গিয়ে শেষ হয়।

মিছিল শেষে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি আকতারুজ্জামান সোহেল প্রথম আলোকে বলেন, ‘ধর্ষকের পরিচয় একমাত্র ধর্ষক, তার কোনো সংগঠন নেই, পরিবার নেই, ভাইবোন নেই। এই ঘটনায় যাঁরা জড়িত, তাঁদের সবার কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে। তাঁদের বিচার না হওয়া পর্যন্ত ছাত্রলীগ আন্দোলনে রাজপথে থাকবে।’
দুপুর ১২টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনারসংলগ্ন সড়কে ‘নিপীড়ন বিরোধী মঞ্চ’ ব্যানারে মানববন্ধন করেছেন শিক্ষক–শিক্ষার্থীরা। পৌনে দুই ঘণ্টাব্যাপী চলা এই মানববন্ধনে দেড় শতাধিক শিক্ষক-শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করেন।

আরও পড়ুন

মানববন্ধনে বক্তারা অছাত্রদের হল থেকে বের করা, ধর্ষণে অভিযুক্ত অপরাধীদের দ্রুত শাস্তি কার্যকর করা, যৌন নিপীড়নে বিশ্ববিদ্যালয়ের অভিযুক্ত শিক্ষক মাহমুদুর রহমান ওরফে জনির শাস্তি, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর আ স ম ফিরোজ-উল হাসান এবং মীর মশাররফ হোসেন হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক সাব্বির আলমের পদ্যাগের দাবি জানান।

মানববন্ধনে বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক পারভীন জলী বলেন, ‘অছাত্রদের বের করার কথা বলেছি। অথচ তিন দিন পার হয়ে গেল। কিন্তু এখনো বের করা হয়নি। ধর্ষণের ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় বাদী হয়ে মামলা করার কথা। তারা অভিযোগ করেছে, এখনো তা মামলা হয়নি। অভিযুক্তদের সনদ স্থায়ীভাবে বাতিল হয়নি, স্থগিত হয়েছে। প্রশাসন শুধু আশ্বাস দেয়, কিন্তু বাস্তবে কিছু হয় না। প্রায় দেড় বছর পার হয়ে গেছে অথচ মাহমুদর রহমানের যৌন নিপীড়নের বিচার এখনো হয়নি।’

চলমান আন্দোলন শুধু জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নয়, সারা বাংলাদেশের আন্দোলনে পরিণত হয়েছে দাবি করে নৃবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক রেজওয়ানা করিম স্নিগ্ধা বলেন, ‘আমরা নিরাপদ ক্যাম্পাস চাই এবং এ নিরাপদ রাখার দায়িত্ব প্রশাসনের। তারা যদি নিরাপদ না রাখতে পারে, তাহলে এটা তাদের ব্যর্থতা। ধর্ষণের মতো ঘটনায় ক্ষমতাসীন ছাত্রসংগঠনের নেতা-কর্মীরা জড়িত, আপনি ক্ষমতাসীন দেখে পার পেয়ে যাবেন, তা আর চলবে না।’

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য নূরুল আলমের সমালোচনা করে দর্শন বিভাগের অধ্যাপক রায়হান রাইন বলেন, ‘আমরা এমন একজন উপাচার্যকে পেয়েছি, যিনি নিষ্ক্রিয় ও নির্বিকার। ক্যাম্পাসে যত ঘটনা ঘটে, এর পরিপ্রেক্ষিতে তিনি কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারেন না। তিনি বড়জোর একটা নির্দেশ পাঠান। কিন্তু এর কিছুই ঘটে না। আমরা অছাত্রদের বের করার কথা বলেছি। তিনি শুধু নির্দেশ দিয়ে নির্বিকার হয়ে বসে আছেন। আমরা অভিযুক্তদের সার্টিফিকেট বাতিল চাই, অথচ শুধু স্থগিত করা হয়েছে।’

ধর্ষণের শিকার নারীর স্বামীর করা মামলায় চারজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা হলেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের প্রাক্তন ছাত্র ও বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের আন্তর্জাতিকবিষয়ক সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান, একই বিভাগের মোস্তফা মনোয়ার ওরফে সাগর সিদ্দিকী ও হাসানুজ্জামান এবং উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী সাব্বির হাসান। পলাতক আছেন ভুক্তভোগীর পূর্বপরিচিত মো. মামুনুর রশিদ এবং স্বামীকে আটকে রাখায় সহায়তা ও মারধর করা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের শিক্ষার্থী মো. মুরাদ।

এদিকে গতকাল সোমবার বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে রেজিস্ট্রার মো. আবু হাসান ধর্ষণে অভিযুক্ত ও তাঁদের পালাতে সহায়তাকারীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে আশুলিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বরাবর লিখিত অভিযোগ করেছেন।