২৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আয়োজন দেখতে ক্লিক করুন
মূল সাইট দেখতে ক্লিক করুন

রাজশাহীতে পুলিশ সদস্যের সঙ্গে ঝামেলার পর ছয় খেলোয়াড় ও কোচ কারাগারে

আদালত
প্রতীকী ছবি

শেখ কামাল দ্বিতীয় বাংলাদেশ যুব গেমস খেলে ঢাকা থেকে বাড়ি ফেরার পথে ট্রেনে একজন পুলিশ সদস্যের সঙ্গে ঝামেলা হলে ছয় খেলোয়াড় ও কোচকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

আজ রোববার রাত আটটার দিকে রাজশাহীর চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে নেওয়া হলে ভারপ্রাপ্ত চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. লিটন হোসেন তাঁদের কারাগারে পাঠান।

এর আগে আজ দুপুরে রাজশাহী রেলওয়ে স্টেশনে ১১ খেলোয়াড় ও তাঁদের কোচকে গ্রেপ্তার করা হয়। এরপর ওই পুলিশ সদস্যকে পেটানো ও তাঁর স্ত্রীর চেইন চুরির অভিযোগে মামলা দিয়ে তাঁদের আদালতে পাঠানো হয়। এ ঘটনায় ওই খেলোয়াড়দের স্বজনেরা রাজশাহী রেলওয়ে থানার সামনে বিক্ষোভ করেন।

এদিকে অপ্রাপ্তবয়স্ক পাঁচ খেলোয়াড়কে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইবুনাল-২–এ তোলা হলে তারা অন্তর্বর্তীকালীন জামিন পেয়েছেন। তাঁদের আইনজীবী মাইনুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, তাদের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট কোনো অভিযোগ নেই। এজাহারে যা আছে তা-ও জামিনযোগ্য। রাত হয়ে যাওয়াই পূর্ণাঙ্গ শুনানি হয়নি। তাই আদালতের বিচারক মুহা. হাসানুজ্জামান তাঁদের সোমবার সকাল ১০টা পর্যন্ত অন্তর্বর্তীকালীন জামিন দিয়েছেন। সোমবার আদালতে জামিন আবেদনের পূর্ণাঙ্গ শুনানি হবে। তারপর আদালত সিদ্ধান্ত দেবেন।

জেলা জজ আদালতের আদালত পরিদর্শক পরিমল চক্রবর্তী বলেন, প্রাপ্তবয়স্ক ছয় খেলোয়াড় ও কোচকে রাতে রাজশাহীর চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে তোলা হয়। এ সময় ভারপ্রাপ্ত চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. লিটন হোসেন আসামিদের কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন। পরে রাতেই তাঁদের রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠানো হয়।

ওই ১১ খেলোয়াড়ের মধ্যে তিনজন ছেলে ও আটজন মেয়ে। কারাগারে পাঠানো ছয়জন হলেন আলী আজম (১৯), আকাশ আলী মোহন (২০), রিমি খানম (১৯), পাপিয়া সারোয়ার ওরফে পূর্ণিমা (১৯), মোছা. দিপালী (১৯) ও সাবরিনা আক্তার (১৯)। অন্য পাঁচজনের বয়স ১৪ থেকে ১৭ বছরের মধ্যে। তাঁদের কোচের নাম আহসান কবীর (৪৫)।

এই খেলোয়াড়েরা জুডো, কুস্তি, কারাতেসহ বিভিন্ন খেলায় অংশ নিয়ে থাকেন। রাজশাহীর বিভিন্ন এলাকায় তাঁদের বাড়ি। মামলায় মো. রমজান (১৯) নামের আরেক খেলোয়াড়কেও আসামি করা হয়েছে। তবে পুলিশ তাঁকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি।

রোববার বিকেলে গোলাম কিবরিয়া (৩০) নামের এক পুলিশ কনস্টেবলের স্ত্রী রাজিয়া সুলতানা মামলাটি করেন। গোলাম কিবরিয়ার বাড়ি রাজশাহীর গোদাগাড়ীর প্রেমতলী খেতুর গ্রামে। তিনি জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯-এ কর্মরত।

মামলায় অভিযোগ করা হয়, রোববার স্ত্রী রাজিয়া সুলতানাকে নিয়ে ঢাকা থেকে বাড়ি ফিরছিলেন গোলাম কিবরিয়া। দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে রাজশাহী রেলওয়ে স্টেশনে তাঁকে মারধর করে খেলোয়াড়দের দলটি। এরপর রাজশাহী রেলওয়ে থানা–পুলিশ সবাইকে থানায় নিয়ে যায়।

তবে ১৭ বছর বয়সী এক মেয়ে খোলোয়াড়ের চাচা বলেন, ‘আমার ভাতিজিসহ অন্য খেলোয়াড়েরা ঢাকায় যুব গেমস খেলতে গিয়েছিল। খেলে পুরস্কার পেয়েছে। খেলা শেষে তারা ট্রেনে আসছিল। ওদের সবার ২৬ হাজার টাকা ও একটি মুঠোফোন ছিল একটি লাগেজে। ট্রেনে সেটি খুঁজে পাচ্ছিল না। তখন তারা ট্রেনে লাগেজটি খুঁজছিল। ওই সময় সাধারণ পোশাকে থাকা পুলিশ সদস্য গোলাম কিবরিয়ার সঙ্গে এক মেয়ে খেলোয়াড়ের কথা–কাটাকাটি হয়। একপর্যায়ে ওই পুলিশ সদস্য মেয়েটিকে থাপ্পড় মারেন। এ ছাড়া আরেক ছেলে খেলোয়াড়কেও মারধর করেন। পরে স্টেশনে তাদের আবার হাতাহাতি হয়। এরপর পুলিশ মীমাংসার নামে তাদের থানায় নিয়ে মামলা দেয়।’

রাজশাহী রেলওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) গোপাল কুমার বলেন, এত খেলোয়াড়কে গ্রেপ্তার করে আদালতে পাঠানোর সাহস তাঁর নেই। পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা অনুযায়ী তিনি মামলা নিয়েছেন। ওই মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে কোচ ও খেলোয়াড়দের আদালতে পাঠিয়েছেন।

এই খেলোয়াড়দের ছাড়ানোর বিষয়ে কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল কি না—জানতে চাইলে রাজশাহী জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক ওয়াহেদুন নবী বলেন, ‘ওরা কোনো ঝামেলায় পড়ে কল করলে আমরা যেতাম। যত দূর শুনেছি, ওরা নাকি পুলিশ সদস্যকে মেরেছে। পুলিশ রক্তাক্ত হয়েছে। বিষয়টি আইনি প্রক্রিয়ায় ভেতর ঢুকে গেছে। এখন আমি হস্তক্ষেপ করতে পারি না। তারপরও আমি স্টেডিয়ামে যাচ্ছি। সবার সঙ্গে আলাপ করে দেখব কিছু করা যায় কি না।’

রোববার সন্ধ্যায় ওই ১২ জনকে আদালতে নিয়ে যায় পুলিশ। খবর পেয়ে তাঁদের স্বজনেরা থানায় ছুটে আসেন। তাঁদের আদালতে নেওয়ার সময় বিক্ষোভে ফেটে পড়েন স্বজনেরা। এ সময় এক খেলোয়াড়ের মা ছেলের যুব গেমসের পরিচয়পত্র ও একটি মেডেল নিয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। তিনি বলেন, তাঁর ছেলে ভালো জুডো খেলে। এবার উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা দেবে। পুলিশ তাঁর ছেলের জীবনটা নষ্ট করে দিল। তিনি এর বিচার চান।

খেলোয়াড়দের আদালতে পাঠানোর পর ক্ষুব্ধ স্বজনেরা থানায় বিক্ষোভ করেন। সেখানে মোছা. দিপালীর বোন ইসলিমা খাতুন বলেন, ‘এতটুকু বাচ্চা মেয়েগুলো কতটুকু অন্যায় করেছে? পুলিশের সঙ্গে ঘটনা বলে পুলিশ আইনের অপপ্রয়োগ করেছে। আমরা এর সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার চাই।’

মারামারিতে পুলিশ সদস্য গোলাম কিবরিয়ার নাক ফেটে গেছে। তাঁকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। মামলায় তাঁর স্ত্রী দাবি করেন, স্বামীকে মারধরের সময় তাঁর গলার চেইন চুরি করে নেওয়া হয়েছে। মামলায় সাক্ষী করা হয়েছে কিবরিয়ার ভাই গোলাম সারওয়ার ও সারওয়ারের বন্ধু সাব্বির ইসলামকে। গোলাম সারওয়ার দাবি করেন, ট্রেনের ভেতরে কোনো ঘটনা ঘটেনি। ট্রেন থেকে আগে নামাকে কেন্দ্র করে স্টেশনে কথা–কাটাকাটির একপর্যায়ে তাঁর ভাইয়ের নাক ফাটানো হয়েছে।