শৈবাল চাষে আশা দেখাচ্ছে খুলনার কয়রা

সুন্দরবন সংলগ্ন খুলনার সর্ব দক্ষিণের উপজেলা কয়রায় চাষ হচ্ছে সামুদ্রিক শৈবাল
ছবি: প্রথম আলো

সামুদ্রিক শৈবাল শব্দটি শুনলে বেশির ভাগ মানুষের মনে ভেসে ওঠে কক্সবাজারের নাম। কিন্তু সুন্দরবনসংলগ্ন খুলনার সর্ব দক্ষিণের উপজেলা কয়রায়ও সামুদ্রিক শৈবাল চাষ হচ্ছে। এখানে সামুদ্রিক শৈবাল চাষের সম্ভাব্যতা যাচাই করে ভালো ফল পেয়েছে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট।

কয়রা উপজেলা সদর থেকে পাঁচ কিলোমিটার পিচ ঢালা পথ পেরিয়ে টেপাখালী গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, গ্রামটির পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া শাকবাড়িয়া নদীর চরে স্থানীয় বাসিন্দা বাসন্তী মুন্ডার নোনা পানির মাছের ঘেরের মধ্যে বাঁশের সঙ্গে সারি দিয়ে রশি টানানো। সেই রশিতে শৈবালের বীজ বেঁধে নোনা পানির নিচে ডুবিয়ে রেখেছেন তিনি।

বাসন্তী মুন্ডা বলেন, এই শৈবাল পানি থেকে সরাসরি পুষ্টি নিয়ে বাড়ে। এদের কোনো মূল, কাণ্ড, পাতা, ফুল বা ফল হয় না। চাষের খরচ বলতে শুধু বাঁশ আর রশি কেনা।

টেপাখালী থেকে ইটের রাস্তা ধরে আরেকটু সামনে এগোলে ৬ নং কয়রা গ্রাম। সেখানে গোলাম মোস্তফার মৎস্য ঘেরের মধ্যেও একইভাবে পানির ওপর ভেসে আছে বাঁশের ওপরের অংশ। পানির এক ফুট নিচ দিয়ে ২৫ মিটার লম্বা শক্ত রশি টানটান করে টানানো হয়েছে বাঁশের সঙ্গে। সেই রশিতে ১৫ সেন্টিমিটার পরপর শৈবালের খণ্ড ঝুলছে। এভাবেই নোনাপানির নিচে রশিতে দুলছে কয়রার চাষিদের নতুন স্বপ্ন।

হাত দিয়ে রশি উঁচু করে শৈবালের বর্তমান অবস্থা দেখানোর সময় চাষি গোলাম মোস্তফা জানালেন, ‘গত বছর সাহেবরা চাষ করতে দিছিলেন এই সেমাইয়ের মতো জিনিস। আমি শুধু ওনাদের কথামতো এগুলারে রশিতে বান্দি রাখছি। কোনো পরিচর্যা ছাড়াই আপনাআপনি বড় হইছে। এগুলো হাঁসে খায়, মাছে খায়, শুনছি মানুষেও খায়! যারা আমারে এগুলো চাষ করতে দিছিল, তারাই আবার আমার কাছ থেকে কিনে নিবে কইছে।’

বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের সরেজমিন কৃষি গবেষণা বিভাগের সিনিয়র বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ফারুক হোসেন বলেন, এরই মধ্যে কক্সবাজার উপকূলে সামুদ্রিক শৈবাল চাষ বেড়েছে। তবে পরীক্ষামূলক চাষ করতে গিয়ে দেখা গেছে, কয়রা উপজেলার লবণাক্ততার পরিমাণের সঙ্গে এটি সহনশীল। কক্সবাজারের চেয়ে কয়রা সামুদ্রিক শৈবাল চাষাবাদের জন্য বেশি উপযোগী। তাই অনায়াসেই কয়রায় সামুদ্রিক শৈবাল চাষাবাদ করা যাবে। এ ছাড়া কোনো পরিচর্যা ছাড়াই পানির মধ্যে বাঁশের সঙ্গে রশি টানিয়ে তাতে শৈবালের বীজ বেঁধে ডুবিয়ে রাখলেই সাফল্য পাওয়া যায়।

বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের সরেজমিন কৃষি গবেষণা বিভাগের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মো. হারুনর রশিদ বলেন, ‘শৈবাল যে উপাদেয় খাদ্য তা খুলনার উপকূলীয় উপজেলা কয়রার অনেকের কাছেই অজানা ছিল। সম্ভাবনাময় রপ্তানিযোগ্য ও উন্নত পুষ্টিসমৃদ্ধ সামুদ্রিক শৈবাল উৎপাদনের জন্য আমরা কয়রার ৬০ জন কৃষককে প্রশিক্ষণ দিয়েছি। সেন্টমার্টিন থেকে সংগ্রহ করা শৈবালের বীজও চাষিদের সরবরাহ করেছি। দেশে ও দেশের বাইরে শৈবালের ভালো বাজার আছে। আমরা যদি কাঙ্ক্ষিত বাজার ধরতে পারি তাহলে আশা করা যায় বাংলাদেশের অর্থনীতিতে শৈবাল একটি বিপ্লব ঘটাবে।’