বিএনপি নেতাকে অতিথি না করায় রক্তদাতাদের অনুষ্ঠানে ভাঙচুর

অনুষ্ঠানস্থলে ছড়িয়ে–ছিটিয়ে আছে চেয়ারছবি: সংগৃহীত

স্বেচ্ছায় রক্তদাতাদের একটি সংগঠনের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আয়োজনে অতিথি করা হয়নি বিএনপি নেতাদের। অথচ অতিথি হিসেবে সংগঠনটির এক উপদেষ্টাকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে, যিনি উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতা। তাই অনুষ্ঠানস্থলে হাজির হয়ে আয়োজকদের ওপর ক্ষোভ প্রকাশ করেন ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি। এ সময় অনুষ্ঠানের ব্যানার ছিঁড়ে ফেলা এবং চেয়ার ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। এতে পণ্ড হয়ে যায় অনুষ্ঠানটি।

গতকাল রোববার দুপুরে ফেনীর ফুলগাজীতে ঘটেছে এ ঘটনা। উপজেলার আনন্দপুর ইউনিয়নের হাসানপুর স্কুল অ্যান্ড কলেজে ‘আগ্রহী রক্তদাতা স্বেচ্ছাসেবী, ফেনী’ নামের ওই সংগঠনের অনুষ্ঠানটি আয়োজন করা হয়েছিল।

প্রত্যক্ষদর্শী ও আয়োজনকারী সংগঠন সূত্রে জানা গেছে, সংগঠনের পঞ্চম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানস্থলে অতিথিরা আসতে শুরু করেছিলেন। এ সময় আনন্দপুর ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি জিয়া হায়দারের নেতৃত্বে একদল লোক অনুষ্ঠানস্থলে আসেন। তাঁরা বিএনপি নেতাদের কেন অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি, তা আয়োজকদের কাছে জানতে চান। আওয়ামী লীগের নেতাকে কেন অতিথি করা হয়েছে, সেটিও জানতে চাওয়া হয়। একপর্যায়ে আয়োজকদের গালমন্দ করে অনুষ্ঠানস্থল থেকে বের করে দেন। এরপর অনুষ্ঠানের ব্যানার ছিঁড়ে ফেলা এবং চেয়ার ভাঙচুর করা হয়।

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে আমন্ত্রণ করা হয় নাসির উদ্দিন পাটোয়ারীকে। তিনি উপজেলা আওয়ামী লীগের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিষয়ক সম্পাদক। জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আয়োজক সংগঠনটির হয়ে আমি বেশ কয়েকবার রক্ত দিয়েছি। সংগঠনের সদস্যদের জোরাজুরিতে অনুষ্ঠানে গিয়েছিলাম। তবে আমি সেখানে যাওয়ামাত্রই কয়েকজন যুবক আওয়ামী ফ্যাসিস্টদের পুনর্বাসন বলে হইহুল্লোড় শুরু করেন। তাই আমি চলে আসি। পরে শুনি, সেখানে ভাঙচুর হয়েছে।’

আয়োজক সংগঠনটির প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি মহিন উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, বিশেষ অতিথি হিসেবে স্থানীয় আওয়ামী লীগের যে নেতাকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল, তিনি তাঁদের সংগঠনের উপদেষ্টা। তাঁর রাজনৈতিক পরিচয়ের কারণে তাঁকে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি। এরপরও বিএনপি নেতা জিয়া হায়দারের নেতৃত্বে তাঁদের অনুষ্ঠানে হামলা করা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, ‘আমরা স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন। আমাদের কোনো সদস্য রাজনীতিতে সক্রিয় নন।’

অভিযোগ প্রসঙ্গে আনন্দপুর ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি জিয়া হায়দার বলেন, ‘আমি ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি হয়েও অনুষ্ঠানে দাওয়াত পাইনি। কিন্তু সেখানে আওয়ামী লীগ নেতা নাসির উদ্দিন পাটোয়ারীকে অতিথি করা হয়েছে। এমন আয়োজনে সবাই ক্ষুব্ধ হয়েছেন। বিষয়টি উপজেলার শীর্ষ নেতাদের অবহিত করেছি। পরে অনুষ্ঠানস্থলে একটি অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটেছে।’ ব্যানার ছিঁড়ে ফেলা এবং চেয়ার ভাঙচুরের সময় তিনি ঘটনাস্থলে ছিলেন না বলে দাবি করেন।

জানতে চাইলে ফুলগাজী উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক ফখরুল আলম প্রথম আলোকে বলেন, ‘আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগ নেতাকে অতিথি করে সংগঠনটি অনুষ্ঠান আয়োজন করছিল। সেখানে বিএনপির কোনো নেতাকে আমন্ত্রণ করা হয়নি। এ পরিস্থিতি সংগঠনটির নেতাদের এমন কাজ করা ঠিক হয়নি। আমাদের নেতারা আয়োজনকারীদের বিষয়টি অবগত করায় তাঁরা অনুষ্ঠান বন্ধ করে দেন। কোনো হামলার ঘটনার বিষয়ে আমি অবগত নই।’

ফুলগাজী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওয়াহিদ পারভেজ বলেন, ‘স্বেচ্ছাসেবীদের অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগ নেতাকে অতিথি করায় হামলার ঘটনাটি শুনেছি। এ বিষয়ে কেউ লিখিত বা মৌখিক অভিযোগ করেনি। অভিযোগ পেলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’