টোল আদায় করবে বিআইডব্লিউটিএ, ভাড়া হবে ১৯০ টাকা

চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের কুমিরা নৌঘাটে যাত্রীদের ভিড়ফাইল ছবি

চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের কুমিরা ও সন্দ্বীপের গুপ্তছড়া (কুমিরা-গুপ্তছড়া) নৌপথে ইজারা পদ্ধতিতে টোল আদায়ের প্রথা বাতিল হচ্ছে। গত বৃহস্পতিবার আন্তমন্ত্রণালয়ের এক বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। ইজারা পদ্ধতি বাতিলের চিঠি পাওয়ার পর যাত্রীদের কাছ থেকে সরাসরি সরকার নির্ধারিত টোল আদায় করবে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ)। জনপ্রতি স্পিডবোটের ভাড়া এখন পড়বে ১৯০ টাকা।

বিআইডব্লিউটিএর চট্টগ্রামের উপপরিচালক মো. কামরুজ্জামান বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। এ সিদ্ধান্তের ফলে ঘাট নিয়ে সরকারি দুই সংস্থা—জেলা পরিষদ ও বিআইডব্লিউটিএর মধ্যে দীর্ঘদিনের বিরোধের অবসান হবে। অতি দ্রুত এ-সংক্রান্ত একটি রেজল্যুশন তৈরি করে সংশ্লিষ্ট সংস্থাকে চিঠি দিয়ে জানিয়ে দেওয়া হবে।

বিআইডব্লিউটিএ সূত্র জানায়, এখন থেকে বিআইডব্লিউটিএর অনুমোদন ও রুট পারমিট আছে, এমন নৌযান যেকোনো মালিক ওই নৌপথে চালাতে পারবেন। সরকারি নির্ধারিত ফি নিয়ে যাত্রী পরিবহন করতে হবে। যাত্রীদের ওপর অন্যায়ভাবে ভাড়া আদায়ের সুযোগ থাকবে না। ঘাট মালিকানায় দুই কর্তৃপক্ষের দ্বন্দ্বের অবসান না হওয়ায় সেখানে কাজ করতে অসুবিধা হচ্ছে বলে গত ২৯ ডিসেম্বর নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়কে চিঠি দেন বিআইডব্লিউটিএর চেয়ারম্যান কমোডর আরিফ আহমেদ মোস্তফা। চিঠিতে জেলা পরিষদের ইজারা বাতিলের জন্য স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়কে অনুরোধ করা হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে আন্তমন্ত্রণালয়ের বৈঠকটি হয়েছে।

ইতিমধ্যে ইজারা পদ্ধতি বাতিলের প্রভাব পড়তে শুরু করেছে কুমিরা-গুপ্তছড়া নৌঘাটে। গত রোববার থেকে নতুন কোম্পানি মেরিন সার্ভিস লিমিটেডের স্পিডবোট পরীক্ষামূলক চলাচল করতে শুরু করেছে। এ নৌপথে আগে ইজারাদার জগলুল হোসেনের স্পিডবোট চলাচল করত। এ ছাড়া যাত্রীবাহী কাঠের ট্রলার, মালবাহী কাঠের ট্রলার ও বিআইডব্লিউটিসির জাহাজ যাত্রী পরিবহন করত এ পথে। এখন নতুন একটি কোম্পানি যুক্ত হলো।

যাত্রীভাড়া কত হবে, টোল কীভাবে আদায় হবে

কুমিরা-গুপ্তছড়া নৌপথে স্পিডবোট, মালবাহী কাঠের ট্রলার ও যাত্রীবাহী কাঠের ট্রলার এবং বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন করপোরেশনের (বিআইডব্লিউটিসি) একটি যাত্রীবাহী জাহাজ চলাচল করে। বর্তমানে স্পিডবোট ভাড়া ২৫০ টাকা ও ভ্যান ভাড়া ২০ টাকা করে নেওয়া হয়। তবে স্পিডবোটে একজন যাত্রী পারাপার হতে ১৯০ টাকার বেশি খরচ হওয়ার কথা নয় বলে জানান বিআইডব্লিউটিএর উপপরিচালক মো. কামরুজ্জামান।

কামরুজ্জামান জানান, ঘাটে বর্তমানে ২০টি স্পিডবোটে যাত্রী চলাচল করে। যাত্রী পারাপারের জন্য সর্বশেষ ১৩টি স্পিডবোট চলাচলের অনুমতি দেওয়া হয়েছে। নতুন ছয়টি স্পিডবোট এখনো যাত্রী পরিবহন শুরু করেনি। প্রতি কিলোমিটারে ১০ টাকা ফি নির্ধারণ করে দেওয়া আছে। সে হিসাবে কুমিরা থেকে গুপ্তছড়া ঘাটের দূরত্ব ১৮ কিলোমিটারে ভাড়া পড়বে ১৮০ টাকা। এ ছাড়া বিআইডব্লিউটিএ যাত্রীদের কাছ থেকে জনপ্রতি ১০ টাকা করে ফি আদায় করবে। ফলে একজন যাত্রীকে স্পিডবোটে যাতায়াত করতে ১৯০ টাকা ব্যয় করতে হবে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ১৯৯৯ সাল থেকে জেলা পরিষদ কুমিরা-গুপ্তছড়া ঘাটের ইজারা দিয়ে আসছে। ২০০৯ সালে ঘাটে জেটি নির্মাণ ও অবকাঠামো নির্মাণ করে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ)। এর পর থেকে ঘাটের মালিকানা দাবি করে আসছে সরকারি এ সংস্থা। এতে সরকারি দুই সংস্থার মধ্যে দ্বন্দ্ব শুরু হয়। এর মধ্যে ২০২০ সালে মিরসরাই-রাসমনি ঘাটকে নদীবন্দর ঘোষণা করে গেজেট প্রকাশ করা হয়। ফলে সীতাকুণ্ড অংশ নদীবন্দরের আওতায় চলে আসে। বন্দর এলাকায় কুমিরা ঘাট বিআইডব্লিউটিএর অধীনে চলে যায়। কিন্তু সন্দ্বীপ অংশ নদীবন্দর না হওয়ায় গুপ্তছড়া ঘাট জেলা পরিষদের অধীনে থেকে যায়। ঘাট পরিচালনার জন্য জেলা পরিষদ দৈনিক এক লাখ টাকার বিনিময়ে ইজারা দিয়ে আসছে। আবার বিআইডব্লিউটিএকেও নির্ধারিত টোল দিতে হতো। ফলে ইজারাদার ঘাট ব্যবস্থাপনা করতেন। অতিরিক্ত ভাড়ার চাপ পড়ত যাত্রীর ওপর।

এদিকে গত ১০ ডিসেম্বর সন্দ্বীপকে উপকূলীয় নদীবন্দর ঘোষণা করে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় প্রজ্ঞাপন জারি করে। ওই প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, ঘাটে অন্য যেকোনো প্রতিষ্ঠানের জেটি, যাত্রীছাউনিসহ যাত্রী পারাপারের সুবিধায় নির্মিত স্থাপনাগুলোতে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের কর্তৃত্ব বাতিল বলে গণ্য হবে। প্রজ্ঞাপন অনুসারে জেলা পরিষদের কর্তৃত্ব কাগজে–কলমে বাতিল হয়ে যায়। কিন্তু বিশাল অঙ্কের রাজস্ব হারানোর ভয়ে তারা বিআইডব্লিউটিএর কাছে ঘাট বুঝিয়ে দিচ্ছিল না।

বিআইডব্লিউটিএর চট্টগ্রামের উপপরিচালক মো. কামরুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, গত বৃহস্পতিবার আন্তমন্ত্রণালয়ের বৈঠকে ঘাটের ইজারা বাতিলের সিদ্ধান্ত হয়। সিদ্ধান্ত মোতাবেক ঘাটে পারাপারের জন্য আসা প্রত্যেক যাত্রী, নৌযান থেকে নির্ধারিত টোল আদায় করবেন বিআইডব্লিউটিএর কর্মচারীরা।